বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৫:১৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
বহুমুখী সংকটের মধ্যেও জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে সরকার অঙ্গীকারাবদ্ধ : নাহিদ শেখ হাসিনা ও ফ্যাসিবাদী দলের নেতাদের সম্পত্তিতে হামলা না করতে প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান দেশবাসীর প্রতি জামায়াত আমিরের আহ্বান কুদালিছড়া-ডুপাবিল খাল খননে অনিয়মের অভিযোগ দায়ের-জেলা প্রশাসক হাতিয়ার সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলীর দুই বাড়ি ও ১১ নৌযানে আগুন আলুর বাম্পার ফলনের আশায় মুন্সীগঞ্জের কৃষকরা অভিনেত্রী সোহানা সাবা আটক বিদেশি প্রভাব ও রাশিয়ার নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত টাস্কফোর্স কমাবে যুক্তরাষ্ট্র লেবাননে হিজবুল্লাহর একাধিক স্থাপনায় ইসরাইলের হামলা দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে যা বলল বিএনপি

মৌলভীবাজারে বোরো আবাদে শঙ্কা; দুশ্চিন্তায় কৃষকেরা

তিমির বনিক,মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:
  • আপডেট সময় : 4:27 pm, বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী, ২০২৫

মৌলভীবাজারে কুদালী ছড়ার দুই পাশে পানির অভাবে বোরো আবাদ নিয়ে কৃষকের মাঝে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। চারা রোপনের ঠিক আগে চাষ দেয়া জমি পানি অভাবে ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। পাশাপাশি বীজতলায় চারার বয়স দুই মাসের অধিক হয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। নিম্নাঞ্চলের কৃষকরা সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত জানানোর পরও কাঞ্জার হাওর এলাকায় একাধিক ক্রসবাঁধ অপসারণে কোন প্রকার উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এতে করে প্রায় ২ হাজার হেক্টর জমির বোরো আবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এনিয়ে কৃষকদের মধ্যে টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে।

মৌলভীবাজার সদর উপজেলার মোস্তফাপুর, গিয়াসনগর ও নাজিরাবাদ ইউনিয়নের কম বেশী ৫০ গ্রামের মানুষ পানি সংকটে বোরো আবাদ নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছেন। মৌলভীবাজার পৌর এলাকার ফাটাবিল থেকে বয়ে যাওয়া কুদালী ছড়ার দৈর্ঘ্য সাড়ে ১৭ কিলোমিটার। ছড়ার উজানে কাঞ্জার হাওর এলাকায় কৃষকদের দেয়া একাধিক ক্রসবাঁধ নির্মানের কারণে নিম্নাঞ্চলের কৃষকরা পানি পাচ্ছেননা। এতে করে ক্রসবাঁধের নিম্নাঞ্চলের কুদালী ছড়ার দুই পাশের প্রায় ২ হাজার হেক্টর জমিতে রোরো আবাদ অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। চাষ দেয়া জমি পানির অভাবে ফেটে শক্ত হয়ে যাওয়ায় জমিতে চারা রোপন করতে পারছেন না অনেক কৃষক। অনেক স্থানে বিজতলায় চারার বয়স বেড়ে নষ্ট হচ্ছে।

গত ২৮ জানুয়ারি সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, গিয়াসনগর ইউনিয়নের গ্রাম শ্রীমঙ্গল, নোয়াগাঁও, করিমনগর, সুনগইর,মাড়কোনা, সিকরাইল, আক্তাভাড়া, ভুজবল, রাধাকান্তপুর, গোমড়া, নিতেশ্বর ও ফাজিলপুর। মোস্তফাপুর ইউনিয়নের আজমেরু, গয়ঘড়, জগন্নাথপুর এলাকার একাংশ সহ অন্তত ৫০ গ্রামে সেচ সঙ্কটের কারণে রোরো চাষাবাদ করতে পারছেন না কৃষকরা। অনেক জায়গায় পানির অভাবে জমিতে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। তবে এসব এলাকার কিছু কিছু স্থানে কোন কোন কৃষক নিজস্ব গভীর নলকুপ স্থাপনের মাধ্যমে নিজেদের সেচ চাহিদা কিছুটা পুরণ হলেও অনেক কৃষকের পক্ষে সেটাও সম্ভব হচ্ছেনা।

সদর উপজেলার গ্রাম শ্রীমঙ্গল এলাকার কৃষক আফজাল মিয়া জানান, তিনি চলতি বোরো মৌসুমে ১০০ বিগা চাষাবাদের জন্য বিজতলায় চারা তৈরী করেছেন। পানির অভাবে মাত্র ৩০ বিঘা চারা রোপন করতে পেরেছেন। নিজ জমি থেকে ৪০০ গজ দূরে একটি ফিসারীর মালিকের সাথে পানি পাওয়ার বিষয়ে কথা চলছে। পানি পেলে আরও ৩০ বিঘা জমিতে চারা লাগানো যাবে। বাকী ৪০ বিঘা জমি অনাবাদি থাকবে।

একই এলাকার কৃষক আরাফাত মিয়া জানান, গেল বছর প্রায় ২৫০ বিঘা জমি কুদালী ছড়ার পানি দিয়ে চাষ করেন। এ বছর তার জমি ভেজানোর জন্য কোন পানি উঠাতে পারেননি। বিজ তলায় চারা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এবছর পুরো ২৫০ বিঘা জমি অনাবাদি থাকবে।

আজমেরু এলাকার বর্গাচাষী একলিম মিয়া, সোনা চাঁন দাশ, আলিম মিয়া, নিতাই দেবনাথ ও সুজন মিয়া জানান, প্রথমে জমিতে পাম্প মেশিন দিয়ে পানি উঠিয়ে একটি চাষ দেন। বর্তমানে পানি না পাওয়ায় জমি শুকিয়ে শক্ত হয়ে গেছে। এতে করে তারা মাত্মক ভাবে ক্ষতির মুখে পরবেন।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, উজানে ক্রসবাঁধ অপসারণের বিষয়ে গত ১৩ জানুয়ারি মৌলভীবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেন। এর অনুলিপি জেলা প্রশাসক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক, পানি উন্নয়বোর্ড এর নির্বাহী প্রকৌশলী কাছে দিয়েছেন। এবিষয়ে কোন সমাধান না হওয়ায় নিম্নাঞ্চলের কৃষকদের অনেকেই বোরো আবাদ করতে পারছেন না।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো: সামসুদ্দিন আহমদ জানান, চলতি বছর বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬২ হাজার ১‘শ   হেক্টর জমি। ইতো মধ্যে প্রায় ৪১ হাজার ৫ শত ৩৬ হেক্টর জমিতে রোপন কাজ শেষে হয়েছে। নিম্নাঞ্চলের কৃষকরা পানি না পাওয়ায় সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে তারা লিখিত জানিয়েছেন। পানির সমস্যা সমাধান না হওয়ায় এ বিষয়ে কৃষি বিভাগ প্রশাসনকে জানিয়েছে। এবিষয়ে পৃথকভাবে জেলা উন্নয়ন ও সমন্নয় কমিটির সভায় বিষটি উত্থাপন করেন।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোড এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো: খালেদ বিন অলীদ জানান, কুদালী ছড়ার দুই পাশে বোরো আবাদে স্থায়ী সমাধানে মনু ব্যারেজ থেকে পানি দেয়ার বিষয়ে একটি প্রস্তাবনা উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। কয়েকটি পাহাড়ী ছড়া কুদালী ছড়ার সাথে মিলিত হয়েছে। পানির সোর্স না থাকায় কৃষকদের সমস্যা হচ্ছে। ক্রসবাঁধ নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের সাথে কথা বলে সমধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।

মৌলভীবাজার উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: তাজ উদ্দিন জানান, মোস্তফাপুর, গিয়াসনগর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, সদর কৃষি অফিসার নিয়ে সংক্ষিপ্ত সভা হয়েছে। নিম্নআঞ্চলের কৃষকরা পানি পাওয়ার বিষয়ে অতিদ্রুত একটি কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

স্থানীয় কৃষকদের দাবী দ্রুত ক্রসবাঁধ গুলো অপসারণের উদ্যেগ নেয়া ও কৃষির উৎপাদন বাড়াতে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ মনু ব্যারেজ থেকে কুদালী ছড়ায় সংযোগ স্থাপন করে সেচ সংকট দ্রুত সমাধানে উদ্যেগী হবেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

এই রকম আরো জনপ্রিয় সংবাদ
© All rights reserved © 2017 Cninews24.Com
Design & Development BY Hostitbd.Com