মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫, ০৭:২০ অপরাহ্ন

সুরা ইখলাস, ফজিলত অর্থ ও তাফসির

সিএনআই নিউজ টুয়েন্টিফোর
  • আপডেট সময় : 4:09 pm, বৃহস্পতিবার, ৪ জুলাই, ২০২৪

পবিত্র কুরআনের ফজিলত ও মর্যাদাপূর্ণ একটি সুরা ইখলাস। এ সুরাকে যে ভালোবাসে আল্লাহও তাকে ভালোবাসেন। ‘আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত। একবার নবি (সা.) এক ব্যক্তিকে একটি সেনাদলের সেনাপতি করে পাঠালেন। সে তার সঙ্গীদের সালাত আদায় করাত এবং ‘কুল হুওয়াল্ল-হু আহাদ’ দিয়ে সালাত শেষ করত। তারা মদিনায় ফেরার পর নবি (সা.)-এর কাছে এ কথা উল্লেখ করেন।
তিনি (সা.) বললেন, তাকে জিজ্ঞেস কর কি কারণে সে তা করে। সে বলল, এর কারণ এতে আল্লাহর গুণাবলির উল্লেখ রয়েছে। আর আমি আল্লাহর গুণাবলি পড়তে ভালোবাসি। তার উত্তর শুনে নবি (সা.) বললেন, তাকে জানিয়ে দাও, আল্লাহতায়ালাও তাকে ভালোবাসেন। (সহিহ বোখারি, হাদিস-৭৩৭৫)।
সুরা ইখলাস ছোট একটি সুরা। সবার জন্য পড়া সহজ। কিন্তু সওয়াবের দিক থেকে তুলনাহীন। একবার পড়লে কুরআনের এক তৃতীয়াংশ তেলাওয়াতের সওয়াব লাভ হয়। আবু সাঈদ খুদরী (রা.) বলেন, নবিজি বলেছেন-তোমাদের প্রত্যেকেই কি প্রতি রাতে কুরআনের এক তৃতীয়াংশ তেলাওয়াত করতে পারে না? বিষয়টি সাহাবিদের কাছে কঠিন মনে হয়েছে।
তাই তারা বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমাদের মধ্যে কে আছে, যে তা পারবে? নবি (সা.) বললেন, আমলটি সহজ কেননা, সুরা ইখলাসই কুরআন মজিদের এক তৃতীয়াংশ। (সহিহ বোখারি, হাদিস-৫০১৬)।
আবুল হাসান মুহাজির (রা.) বলেন, জনৈক সাহাবি বর্ণনা করেছেন, তিনি রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে এক সফরে ছিলেন। একদিন তার কাছে এমনভাবে বসা ছিলেন যে, তার হাঁটু দুটি নবিজির হাঁটুদ্বয়ের সঙ্গে লেগে ছিল। এ অবস্থায় এক লোককে সুরা কাফিরুন তেলাওয়াত করতে শুনলেন, তা শুনে নবি (সা.) বললেন, সে শিরক থেকে পবিত্র হয়ে গেছে।
আরেক লোককে শুনলেন, সুরা ইখলাস তেলাওয়াত করছে। তখন তিনি বললেন, তাকে মাফ করে দেওয়া হয়েছে। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস ২৩২০৬)।
আল্লাহর ভালোবাসা ও নেয়ামতে ভরপুর জান্নাত পেতে নিয়মিত সুরা ইখলাসের আমল করা জরুরি। নেয়ামতে ভরপুর জান্নাতের অট্টালিকা পেতে সুরা ইখলাসের আমল অতীব জরুরি।
রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি সুরা ইখলাস দশবার পড়বে তার জন্য জান্নাতে একটি অট্টালিকা নির্মাণ করা হবে। যে বিশবার পড়বে তার জন্য দুটি অট্টালিকা তৈরি করা হবে। আর যে ত্রিশবার পড়বে তার জন্য তিনটি অট্টালিকা প্রস্তুত করা হবে।
নবিজির এ কথা শুনে উমর ইবনে খাত্তাব (রা.) বললেন, তাহলে তো আমরা অনেক অট্টালিকার মালিক হয়ে যাব। রাসুল (সা.) বললেন, আল্লাহতায়ালার দান এর চেয়ে আরও প্রশস্ত। (সুনানে দারেমী, হাদিস-৩৪৭২)। আল্লাহতায়ালা আমাদের সূরা ইখলাস বেশি বেশি পড়ার তাওফিক দান করুন, আমিন!
সুরা ইখলাসের আরবি-বাংলা উচ্চারণ, অর্থ ও তাফসির
قُلۡ ہُوَ اللّٰہُ اَحَدٌ ۚ
বাংলা উচ্চারণ: কুল হুওয়াল্লা হু আহাদ
অর্থ: বলে দাও, কথা হল আল্লাহ সব দিক থেকে এক।
তাফসীর: ‘আল্লাহ সব দিক থেকে এক’-এর দ্বারা احد শব্দের তরজমা করার চেষ্টা করা হয়েছে। কেবল ‘এক’ বললে এর সম্পূর্ণ মর্ম আদায় হয় না। ‘সব দিক থেকে এক’-এর ব্যাখ্যা এই যে, তার সত্তা এক। তার কোন অংশ নেই, খণ্ড নেই। তার গুণাবলীও এমন যে, তা আর কারও মধ্যে পাওয়া যায় না। এভাবে তিনি নিজ সত্তার দিক থেকেও এক, গুণাবলীর দিক থেকেও এক।
কোন কোন কাফের মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করেছিল, আপনি যে মাবুদের ইবাদত করেন তিনি কেমন? তার নাম-ধাম, বংশ-পরিচয় কী? তার পরিচিতি তো বর্ণনা করুন। তারই উত্তরে এ সুরা নাযিল হয়েছে।
اَللّٰہُ الصَّمَدُ ۚ
বাংলা উচ্চারণ: আল্লা হুসসামাদ
অর্থ: আল্লাহই এমন যে, সবাই তার মুখাপেক্ষী, তিনি কারও মুখাপেক্ষী নন।
তাফসীর: ‘সবাই তার মুখাপেক্ষী, তিনি কারও মুখাপেক্ষী নন’ এটা الصمد-এর তরজমা। এ শব্দের মর্মও কোন এক শব্দ দ্বারা প্রকাশ করা সম্ভব নয়। আরবীতে الصمد বলে তাকে, মানুষ নিজেদের বিপদ-আপদ ও সমস্যাদিতে সাহায্যের জন্য যার শরণাপন্ন হয় এবং সকলে যার মুখাপেক্ষী থাকে, কিন্তু সে নিজে কারও মুখাপেক্ষী থাকে না।
সাধারণত সংক্ষিপ্তভাবে এ শব্দের তরজমা করা হয় ‘অমুখাপেক্ষী’। কিন্তু তা দ্বারা শব্দটির কেবল এই দিকই প্রকাশ পায় যে, তিনি কারও মুখাপেক্ষী নন। কিন্তু সকলেই যে তার মুখাপেক্ষী সে দিকটি এর দ্বারা আদায় হয় না। তাই এখানে বিশেষ একটি শব্দ দ্বারা তরজমা না করে সম্পূর্ণ মর্ম বর্ণনা করা হয়েছে।
لَمۡ یَلِدۡ ۬ۙ  وَلَمۡ یُوۡلَدۡ ۙ
বাংলা উচ্চারণ: লাম ইয়ালিদ ওয়ালাম ইউলাদ
অর্থ: তার কোন সন্তান নেই এবং তিনিও কারও সন্তান নন।
তাফসীর: যারা ফেরেশতাদেরকে আল্লাহ তাআলার কন্যা বলত অথবা হজরত ঈসা আলাইহিস সালাম বা হজরত উযায়ের আলাইহিস সালামকে আল্লাহ তাআলার পুত্র বলত, এ আয়াত দ্বারা তাদেরকে রদ করা হয়েছে।
وَلَمۡ یَکُنۡ لَّہٗ کُفُوًا اَحَدٌ 
বাংলা উচ্চারণ: ওয়ালাম ইয়াকুল্লাহু কুফুওয়ান আহাদ
অর্থ: এবং তার সমকক্ষ নয় কেউ।
তাফসীর: অর্থাৎ এমন কেউ নেই, যে কোন ব্যাপারে তার সমকক্ষতা দাবি করতে পারে। সুরাটির এ চার আয়াত দ্বারা আল্লাহ তাআলার তাওহীদকে অত্যন্ত পূর্ণাঙ্গরূপে বর্ণনা করা হয়েছে। প্রথম আয়াত দ্বারা বহু-ঈশ্বরবাদী তথা যারা একের বেশি মাবুদে বিশ্বাস করে তাদেরকে রদ করা হয়েছে।
দ্বিতীয় আয়াতে তাদের ধ্যান-ধারণা খণ্ডন করা হয়েছে, যারা আল্লাহ তাআলাকে এক জানা সত্ত্বেও অন্য কাউকে বিপদাপদ থেকে উদ্ধারকারী, প্রয়োজন সমাধাকারী, মনোবাঞ্ছা পূরণকারী ইত্যাদি বলে বিশ্বাস করে।
তৃতীয় আয়াতে রদ করা হয়েছে তাদেরকে, যারা বিশ্বাস করে আল্লাহ তাআলার সন্তান-সন্ততি আছে। চতুর্থ আয়াতে সেই সব লোকের বিশ্বাস খণ্ডন করা হয়েছে, যারা মনে করে আল্লাহ তাআলার যে-কোনও গুণ একই রকমভাবে অন্য কারও মধ্যেও থাকতে পারে। যেমন মাজুসী সম্প্রদায় বলত, আলোর স্রষ্টা একজন এবং অন্ধকারের অন্যজন। এমনিভাবে মঙ্গল এক খোদা সৃষ্টি করে এবং অমঙ্গল অন্য খোদা।
এভাবে এই সংক্ষিপ্ত সুরাটি সব রকমের শিরককে ভ্রান্ত সাব্যস্ত করতঃ খালেস ও বিশুদ্ধ তাওহিদকে সপ্রমাণ করেছে। এ কারণেই এ সুরাকে সুরা ইখলাস বলা হয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

এই রকম আরো জনপ্রিয় সংবাদ
© All rights reserved © 2017 Cninews24.Com
Design & Development BY Hostitbd.Com