তোফায়েল হোসেন তোফাসানি:
বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় স্বাস্থ্য শৃংখলা মানতে এব্ং স্বাস্থ্যসেবা দিতে সেনাবাহিনীকে কাজে লাগানোর সুপারিশ করা হবে। সরকারকে এ সুপারিশ করবেন প্রখ্যাত পাবলিক হেলথ বিশেষজ্ঞ ও ওয়ার্ল্ড স্পোর্টস অ্যালায়েন্স, জাতিসংঘের সিনিয়র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. জাহিদ হক। সিএনআই নিউজের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।
ড. জাহিদ হক এ সময় বলেন, করোনা নিয়ে যেভাবে আতঙ্ক ছড়িয়েছে রোগটি এমন আতঙ্কের কিছুই নয়। আমরা সতর্ক থাকলে এবং সরকারী স্বাস্থ্য নির্দেশিকা মেনে চললে করোনা ভাইরাসকে আমরা মোকাবেলা করতে পারবো।
করোনা হচ্ছে একটি ভাইরাস। এটাকে আমাদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই। সাধারণ সর্দি-কাশির মত করোনা ভাইরাসও সাধারণত সর্দি-কাশি বা জ্বর দিয়ে শুরু হয়। সেক্ষেত্রে করোনা ভাইরাস আক্রান্তদের জ্বরটা একটু বেশী থাকে। কিন্তু করোনায় উপসর্গটা সাধারণ সর্দি-জ্বরের মত দেখা যায়। তবে, করোনা ভাইরাস আক্রান্তরা সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে গলা ব্যথা এবং শ্বাস কষ্টে ভুগতে পারে। করোনা ভাইরাসের জন্য কোন চিকিৎসা বিশেষত: তৈরী হয়নি। সাধারণ সর্দি জ্বরের জন্য যে চিকিৎসা আমরনা নিয়ে থাকি করোনায় আক্রান্তদের জন্য আমরা একই ধরনের চিকিৎসা চালিয়ে যাই।
এ ভাইরাসটি এক থেকে ৫ দিনের মধ্যে উন্নতি হয়। সর্বোচ্চ ১৪ দিনের মধ্যে এ ভাইরাসের লক্ষণ দেখা দেয়। কারো শরীরে করোনা ভাইরাস থাকলে আমরা তাঁতেক কোরেন্টাইনে থাকতে বলি এবং চিকিৎসার জন্য আইসোলোশনে নিয়ে যাই। যাতে এ ভাইরাসটি এক শরীর থেকে অন্য শরীরে ছড়াতে না পারে। তাই এই রোগটি বায়ূ বাহিত নয় বলে এ নিয়ে তেমন ভয়ের কিছু নেই। এ রোগটি হাঁচি-কাশির মাধ্যমে কনিকা বের হলে তাঁর মাধ্যমে ছড়ায়। শুধুমাত্র আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে আমাদের সতর্ক থাকলেই এরোগ সংক্রমন থেকে আমরা বাঁচতে পারি। এ জন্য দরকার সচেতনতা ও সতর্কতা।
ড. জাহিদ আরো বলেন, ২০০৩ সালে সার্স নামে একটি রোগ এসেছিল। এরাগে সারা বিশ্বে মৃত্যু হার ছিল ১০ শতাংশ। ২০১২ সালে পৃথিবীতে আক্রমন করে মার্স নামে একটি ভাইরাস। এরোে মৃত্যু হার ছিল ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ। করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯ ভাইরাসে আমরা ২ থেতে ৩ শতাংশ মৃত্যু হার দেখতে পাই। যে কারনে ঐসব রোগের চেয়ে করোনায় মৃত্যু হার অনেক কম। এছাড়া যারা করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছেন তাঁরা বয়স্ক। শিশুদের এরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
তিনি আরো বলেন, চীনের উহান শহরে করোনা ঠেকাতে সকলে স্বেচ্ছায় হোম কোয়ারেন্টাইনে চলে গেছেন। যে কারনে স্বল্প স্বয়ের মধ্যে উহানকে তারা করোনা মুক্ত করতে পেরেছেন। আজ উহানে কেউ আর করোনা আক্রান্ত নয়। অন্যদিকে, ইটালীতে কেউ বিষয়টাকে গুরুত্বসহকারে দেখেনি। সকলে একসাথে রেস্টুরেন্টে গিয়েছে, সিনেমা হলে গিয়েছে, পার্টি করেছে। এভাবে করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়েছে। যে কারনে ইটালীতে আজ ভয়াবহ অবস্থা। সে তুলনায় বাংলাদেশ আগে-ভাগেই প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করায় অবস্থা অন্যান্য দেশের চেয়েও ভাল। সরকারও আন্তরিকভাবে এবং সময়উপযোগী সিন্ধান্ত নিয়ে এ যুদ্ধে জয়ী হতে পদক্ষেপ নিচ্ছে।
ড. জাহিদ বলেন, সরকারের সময়োপযোগী সিদ্ধান্তের কারণে আজ দেশে সকলে সচেতন হতে পেরেছে। সরকার যেখানে যে ব্যবস্থা নেয়া দরকার তা গ্রহণ করছে। সরকারের সকল স্বাস্থ্য নির্দেশ সকলে মেনে চললেই করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতার হাত থেকে আমরা রক্ষা পেতে পারি।
অনেকেই হোমকোয়ারেন্টাইন মানছেন না। সরকারের স্বাস্থ্য নির্দেশও ভঙ্গ করছেন। তাঁরা নিজেরা এবং নিজেদের পরিবারসহ সমাজকে বিপদে ফেলে দিচ্ছেন।
বর্তমানে করোনা মোকাবেলায় পুলিশ, আনসার, বিজিবির পাশাপাশি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে মাঠে রাখা উচিৎ বলে মনে করেন এই পাবলিক হেলথ বিশেষজ্ঞ। এ ব্যাপারে তিনি সরকারকে সুপারিশ করবে বলেও জানান।
বর্তমানে করোনা মোকাবেলায় পুলিশ, আনসার, বিজিবির পাশাপাশি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে মাঠে রাখা উচিৎ বলে মনে করেন এই পাবলিক হেলথ বিশেষজ্ঞ। এ ব্যাপারে তিনি সরকারকে সুপারিশ করবে বলেও জানান।