বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০৩:৫৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বিচার বিভাগ আরও শক্তিশালী হবে : প্রধান বিচারপতি শাকিব খানের বিয়ে নিয়ে নতুন তথ্য ফাঁস! চালকদের ক্যাপ-পানি, স্যালাইন দিয়ে মে দিবস পালন তেজগাঁও থানার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ : আফগান দলে ছয় অলরাউন্ডার মালিক ও শ্রমিক বাঁচলে অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে, দেশ এগিয়ে যাবেমে দিবসের আলোচনা সভায় বিভাগীয় কমিশনার ভুল চিকিৎসার অজুহাতে চিকিৎসকের ওপর আক্রমণ ন্যক্কারজনক : স্বাস্থ্যমন্ত্রী ভারতের ৫০ স্কুলে বোমা হামলার হুমকি, আতঙ্কে রাজধানীবাসী হিমাগারে ৩০ হাজার বস্তা আলুতে পচন, কৃষক ও ব্যবসায়ীরা দিশাহারা বিলাসিতা ছেড়ে শ্রমিকদের কল্যাণে বিশেষ নজর দিতে শিল্প মালিকদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী মা দিবসে রুনা লায়লার গান

জঙ্গিবাদ ও বাস্তবতা

রিপোর্টার নাম
  • আপডেট সময় : 5:26 pm, বুধবার, ২৫ জুলাই, ২০১৮

imagesসেলিনা আক্তার : জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিস্তার বিশ্বব্যাপী। বিশ্বের কোটি কোটি নিরীহ মানুষ এর শিকার। বেশি ঝুঁকিতে আছে মধ্যপ্রাচ্য সংলগ্ন আফ্রিকা অঞ্চল এবং এশিয়ার মুসলিম অধ্যুষিত দেশের মানুষ। তার মধ্যেও অধিক ক্ষতিগ্রস্ত অপেক্ষাকৃত ছোটো, দরিদ্র, ভঙ্গুর ও মুসলিমপ্রধান রাষ্ট্রসমূহ। বাংলাদেশ এর বাইরে নয়। ইতিমধ্যে অবাক করা কিছু ঘটনা বাংলাদেশে ঘটে গেছে। বাংলাদেশ যেকোনো মূল্যে সন্ত্রাস মোকাবিলায় একাত্ম। জাতীয়ভাবে দৃঢ় রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় অঙ্গীকার এবং সর্বোচ্চ নিরাপত্তার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে বিষয়টিকে।

কার্যকরভাবে জঙ্গিবাদ মোকাবিলা করতে হলে প্রথমে এর প্রধান কারণগুলো চিহ্নিত করাসহ উৎস খুঁজে বের করতে হবে। একটি দেশে কেন জঙ্গিবাদ বা সহিংস উগ্রপন্থা বিস্তার লাভ করে, কেন এ ধরনের আদর্শ মানুষকে আকর্ষণ করে কয়েক দশক ধরেই তা খতিয়ে দেখার চেষ্টা করেছেন সমাজবিজ্ঞানী, নিরাপত্তা বিষয়ক গবেষক, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও নীতিনির্ধারকগণ।

এই বিষয়ে গবেষণায় নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের পর থেকে। এর পূর্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন থেকে শুরু করে পশ্চিমা দেশের অনেক রাষ্ট্রেরই ধারণা ছিল দারিদ্র্য সহিংস পন্থার কারণ এবং সুযোগবঞ্চিত মানুষেরা জঙ্গি সংগঠনের আদর্শের প্রতি আকর্ষিত হয় বেশি। ১১ সেপ্টেম্বরের পরে তাদের এই ধারণা ভেঙে যায়।

তালেবান নেতৃত্ব, পাকিস্তানের বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সাংগঠনিক কাঠামো ও আফগান যুদ্ধে পাকিস্তানি কয়েকটি মাদ্রাসার ভূমিকার ওপরে নির্ভর করে অনেকে এক সময় মাদ্রাসাকেই ইসলামপন্থী সহিংস চরমপন্থার উৎস বলে প্রচার করতে থাকেন। এসব ধারণা শিগগিরই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে শুরু করে। কেননা, দেখা যায় যে, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠনের অধিকাংশ নেতা কিংবা আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী দরিদ্র, সুবিধাবঞ্চিত কিংবা ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষিত নয়।

এই পরিস্থিতির পর জোর দেওয়া হয়েছিল সন্ত্রাসবাদের কিছু সামাজিক ও আন্তর্জাতিক মূল কারণের ওপর। কিন্তু বাস্তবে একই রকমের আর্থসামাজিক অবস্থা সবাইকে সন্ত্রাসী করে তুলছে না।

যারা সন্ত্রাসী কাজে যুক্ত হয়, তারা কেবল পরিস্থিতির চাপে যোগ দেয় না, ক্ষেত্রবিশেষে নানা আকর্ষণেও যুক্ত হয়। অ্যাডভেঞ্চারিজমও এর কারণ হতে পারে। তাছাড়া মানুষ পরিস্থিতির দ্বারা প্রভাবিত হয়। মানুষের নিজস্ব এই বিবেচনাগুলোকে কর্তব্যের মধ্যে না নিলে কারো জঙ্গি হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে কী কী উপাদান রয়েছে তা বোঝার অপূর্ণতা থেকে যাবে।

গত কয়েক দশকে বিভিন্ন দেশে যেখানে জঙ্গিবাদ প্রসারিত হয়েছে, যেসব ব্যক্তি জঙ্গিবাদে আকৃষ্ট হয়েছে, যেসব জঙ্গি সংগঠন শক্তি সঞ্চয় করতে পেরেছে, তাদের ওপর সম্পাদিত গবেষণাগুলোয় যে বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে, তা হলো জঙ্গিবাদ বিকাশে কোনো একটি একক কারণ নেই। এই ধরনের একক কারণ অনুসন্ধান করলে আমরা ভুল উপসংহারে উপনীত হতে পারি। আমরা দেখতে পাই যে, জঙ্গি হয়ে ওঠা এবং জঙ্গিবাদের প্রসারের ক্ষেত্রে কতিপয় বিষয় চালকের ভূমিকা পালন করে। অর্থাৎ এই বিষয়গুলো ব্যক্তিকে সন্ত্রাসের পথে ঠেলে দেয়, সমাজে জঙ্গিবাদের গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করে এবং সন্ত্রাসী সংগঠন তৈরি করে।

এই চালিকাগুলোকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। অভ্যন্তরীণ, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও বৈশ্বিক। অভ্যন্তরীণ চালকের মধ্যে রয়েছে সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্নতা বা প্রান্তিকতা, সামাজিকভাবে বৈষম্যর শিকার হওয়া, হতাশাবোধ, অন্যদের তুলনায় বঞ্চিত অনুভব করা। রাজনৈতিক চালকগুলোর মধ্যে আছে রাজনৈতিক অধিকার ও নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়া, সরকারের কঠোর নিপীড়ন ও সুস্পষ্টভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন, সর্বব্যাপী দুর্নীতি ও দুর্নীতিবাজদের দায়মুক্তির ব্যবস্থা, স্থানীয়ভাবে অব্যাহত সংঘাত, সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে এলাকা তৈরি হওয়া। সাংস্কৃতিক চালকের মধ্যে আছে এই ধারণা বিরাজ করা বা তৈরি হওয়া যে, ইসলাম আক্রমণের বা বিপদের মুখোমুখি, নিজের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য হুমকির মুখে এবং ক্ষেত্রবিশেষে নিজের ইসলামি সংস্কৃতির বিকাশ বা সমাজে অন্যদের ওপরে নিজের ইসলামি সংস্কৃতি চাপিয়ে দেওয়া। বৈশ্বিক চালকের মধ্যে আছে নিজেদের ‘ভিকটিম’ বলে মনে করা।

ইসলাম বিপদের মুখে, মুসলিম জনগোষ্ঠী অন্যায় ও বৈষম্যর শিকার- যদি এই ধারণা সৃষ্টি হয় তাহলে তা শক্তিশালী চালকের ভূমিকা পালন করতে পারে। যা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে শক্তিশালী চালক হয়ে দেখা দিয়েছে।

সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, জঙ্গিবাদ নির্মূল করতে উৎপত্তির মূল কারণ আগে অনুসন্ধান করতে হবে। সম্ভাবনাময় তরুণরা কেন সশস্ত্র জঙ্গি তৎপরতায় সম্পৃক্ত হচ্ছে তা নিয়ে ভাবনার প্রয়োজন। এখনই যদি শিকড় উপড়ানো না যায়, তাহলে বাংলাদেশ অচিরেই বিশৃঙ্খলা ও অশান্ত জনপদে পরিণত হতে পারে। তবে বাংলাদেশ সরকার জঙ্গি দমনে বদ্ধপরিকর এবং অনেক দৃশ্যমান কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

এই রকম আরো জনপ্রিয় সংবাদ
© All rights reserved © 2017 Cninews24.Com
Design & Development BY Hostitbd.Com