নওগাঁর পাহাড়পুরের এই বৌদ্ধ বিহারটি বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান। এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল অষ্টম শতাব্দীতে পাল সাম্রাজ্যের শাসনামলে এবং ১৯৮৫ সাল থেকে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃত।
প্রায় ১১ হেক্টরের বিস্তৃত মঠ কমপ্লেক্সটি প্রাচীন পাল রাজবংশের সুনিপুণ স্থাপত্যকর্মের সাক্ষী হয়ে আছে। দর্শনার্থীরা মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ ঘুরে দেখার সময় মূল মন্দির, রাজাদের আবাসিক কক্ষ এবং বিশাল প্রবেশদ্বার অবলোকন করতে পারেন। এটি বাংলার প্রাচীন বৌদ্ধ সভ্যতার সমৃদ্ধ ইতিহাস এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের এক অভিজাত নিদর্শন।
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত বিশ্বের এই বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনটি ১৯৮৭ সাল থেকে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান। প্রায় ১০ হাজার বর্গ কিলোমিটারের এই বনটি এর সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্যের জন্য ব্যাপকভাবে পরিচিত।
সুন্দরবন রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাসস্থল এবং নানা প্রজাতির পাখি, সরীসৃপ এবং স্তন্যপায়ী প্রাণীর আবাসস্থল। দর্শনার্থীরা নৌকা বা লঞ্চে করে বন ঘুরে দেখার সময় এর অনন্য বাস্তুসংস্থানের বিস্ময় অনুভব করতে পারেন। বনের ভেতর দিয়ে সবুজে ঘেরা সর্পিলাকার জলপথ মুক্ত কণ্ঠে সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের কথা ঘোষণা করে।
বাংলা সালতানাতের স্বনামধন্য মুসলমান সাধক ও শাসক খান জাহান আলী ১৪৫৯ সালে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এই মসজিদটি। ১৯৮৫ সালে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে মনোনীত হওয়া এই দর্শনীয় স্থানটি মসজিদের শহর বাগেরহাটের সমৃদ্ধ স্থাপত্যকর্মের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
মসজিদের অসাধারণ কাঠামোতে ৬০টি গম্বুজ, ৬০টি পাথরের স্তম্ভ এবং জটিল পোড়ামাটির অলঙ্করণ রয়েছে। দর্শনার্থীরা সুন্দরভাবে নকশা করা প্রার্থনা হল ঘুরে দেখতে পারেন, পায়চারি করতে পারেন সবুজ বাগানের মধ্য দিয়ে। এ সময় তারা মুক্ত মনে নিজেদের নিমগ্ন করতে পারেন ঐতিহাসিক স্থানটির আধ্যাত্মিকতায়।
ঢাকার কুমারটুলী এলাকায় অবস্থিত আহসান মঞ্জিল পুরান ঢাকার সবচেয়ে জনপ্রিয় ঐতিহ্যবহী স্থান। পিঙ্ক প্যালেস বা গোলাপী প্রাসাদ নামে পরিচিত এই মহিমান্বিত প্রাসাদটি বানানো হয়েছিল ১৮৭২ সালে। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলে ঢাকার নবাবদের সরকারি বাসভবন হিসেবে ব্যবহার করা হতো এটি। আহসান মঞ্জিল ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন এবং ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গসহ উল্লেখযোগ্য সব ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী।
১৯৯২ সাল থেকে নবাবদের জীবনধারার এই বিরাট সংগ্রহশালাটি জাদুঘর হিসেবে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। প্রাসাদের স্বতন্ত্র গোলাপী সম্মুখভাগ ও গ্র্যান্ড হলগুলোর মাধুর্য মোহাবিষ্ট করে রাখে দর্শনার্থীদের। এছাড়া এর বারান্দা থেকে বুড়িগঙ্গা নদীর মনোরম দৃশ্যের জন্য আহসান মঞ্জিল ভ্রমণপিপাসুদের কাছে সবচেয়ে প্রিয়।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের এই ঐতিহাসিক নগরীটি ২১ শতকের যে কোনো পরিব্রাজককে এক নিমেষে নিয়ে যেতে পারে ১৩ শ’ শতাব্দীতে। বাংলা সালতানাত এবং মুঘল আমলের বাণিজ্য কেন্দ্র ছিল এটি। এছাড়াও অসামান্য স্থাপনায় মোড়া এই শহরটি আরও অনেক সম্প্রদায়ের উত্থান-পতন দেখেছে।
এই চিত্তাকর্ষক প্রাচীন শহরের অবশিষ্টাংশগুলো ঘুরে দেখার সময় এখন পর্যন্ত ভালোভাবে সংরক্ষিত কিছু প্রাসাদ এবং বণিক ঘরগুলো দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করে। যে কোনো বহিরাগতদের জন্য বাংলাদেশের স্থাপত্য ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অভিজ্ঞতার এক অনন্য সুযোগ হতে পারে এই পানাম নগর।
ঢাকার শেরে বাংলা নগরে অবস্থিত জাতীয় সংসদ ভবন বাংলাদেশের যাবতীয় আইন প্রণয়ন সংক্রান্ত কার্যাবলীর প্রাণকেন্দ্র। আধুনিক সময়ের এই বিশ্বমানের স্থাপনাটি বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের প্রতীক হয়ে আছে। ১৯৮২ সালে নির্মিত এই দৈত্যাকার ভবনটির নকশা করেছিলেন বিখ্যাত আমেরিকান স্থপতি লুই কান। বাংলাদেশের ইতিহাসে অত্যন্ত তাৎপর্য সম্বলিত এই ভবনটি দেশের স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক আদর্শের প্রতীক।
এখানে দর্শনার্থীরা পর্যবেক্ষণ করতে পারেন ঐতিহ্য ও আধুনিক উপাদানের এক অভাবনীয় সমন্বয়। এর কমপ্লেক্সের মধ্যে রয়েছে সংসদের কক্ষ, আঙ্গিনায় লেক ও বাগান। এছাড়া রয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের জন্য নিবেদিত একটি জাদুঘর।
পুরান ঢাকার লালবাগে অবস্থিত লালবাগ কেল্লাকে সর্বপ্রথম ডাকা হতো আওরঙ্গবাদ দুর্গ হিসেবে। ১৬৭৮ সালে মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের পুত্র প্রিন্স মুহাম্মদ আজম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এই দুর্গটি। খুব অল্প সময়ের জন্য শাসক হিসেবে থাকা এই মুঘল সম্রাট বাংলায় অবস্থান করেছিলেন ১৫ মাস। বাবা আওরঙ্গজেবের নির্দেশে রাজপুত্র আজম কেল্লা নির্মাণ কাজে ইস্তফা দিয়ে বাংলা থেকে প্রস্থান করেন। এ সময় দুর্গের নির্মাণ কাজের দায়িত্ব গ্রহণ করেন শায়েস্তা খান।
দুর্গটি মুঘল এবং বাঙালি স্থাপত্য শৈলীর এক দুর্দান্ত সমন্বয় সাধন। লালবাগ কেল্লা ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ এবং বিংশ শতকের গোড়ার দিকে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনসহ বেশ কিছু ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী হয়ে আছে।
বর্তমানে এই ঐতিহাসিক নিদর্শনটি দেখতে দেশের স্থানীয়রাসহ দেশের বাইরে থেকেও অনেক পর্যটক ঢাকার লালবাগে আসেন। এখানকার অভিজাত বৈঠকখানা দিওয়ান-ই-আম, নবাব শায়েস্তা খানের মসজিদ ও তার মেয়ে পরী বিবির সমাধি দর্শনার্থীদের মুল আকর্ষণ।
পুরান ঢাকায় অবস্থিত এই কমপ্লেক্সটি দুটি ঐতিহাসিক সরাইখানার সমন্বয়ে গঠিত। বড় কাটরা মুঘল রাজপুত্র শাহ সুজা বানিয়েছিলেন ১৬৪৪ সালে ভ্রমণ বণিকদের জন্য একটি বাসস্থান হিসেবে। আর ছোট কাটরা নির্মাণ করেছিলেন শায়েস্তা খান ১৬৬৩ সালে, যা পরিচালনা করা হতো বড় কাটরারই একটি ছোট সংস্করণ হিসেবে।
মূল স্থাপনাগুলো বছরের পর বছর ধরে অবহেলা ও ক্ষয়ের শিকার হয়েছে। এরপরও বিভিন্ন সময়ে চলেছে এগুলোর পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টা। বর্তমানে সরাইখানাগুলোর উল্লেখযোগ্য তেমন কিছু অবশিষ্ট নেই। তবে এর আশেপাশের প্রাণবন্ত বাজার এবং সরু গলি-ঘুপচি দর্শনার্থীদেরকে ঢাকার ঐতিহাসিক বাণিজ্যিক কেন্দ্রের এক চিলতে আভাস দেয়।
অষ্টম শতাব্দীর এই প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানটির অবস্থান কুমিল্লা জেলার নিচু ও মৃদু টোল পড়া পাহাড়ি এলাকা ময়নামতিতে। মঠ, স্তূপ এবং মন্দিরসহ বৌদ্ধ ধ্বংসাবশেষের এক বিশাল এলাকা নিয়ে গঠিত এই প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানটি অষ্টম শতাব্দীর। ময়নামতির বিকাশ ঘটে সমতট ও দেব রাজবংশের শাসনামলে।
বর্তমানে এটি দেশের ভ্রমণকারীদের জন্য একটি প্রধান প্রত্নতাত্ত্বিক গন্তব্য হিসেবে সুরক্ষিত আছে। এই প্রাচীন নিদর্শনের উল্লেখযোগ্য আকর্ষণের মধ্যে রয়েছে শালবন বিহার, কুটিলা মুড়া এবং আনন্দ বিহার। আর বেশ কাছেই অবস্থিত ময়নামতি জাদুঘরটি এই অঞ্চলে পাওয়া প্রত্নতত্ত্বগুলোর একটি অসাধারণ সংগ্রহশালা।
বাংলাদেশের এই প্রাচীনতম শহুরে প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানটি বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার মহাস্থান গ্রামে অবস্থিত। খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে গড়ে ওঠা এই প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানটি পুন্ড্র রাজ্যের প্রাচীন রাজধানী হিসেবে অপরিসীম ঐতিহাসিক তাৎপর্য ধারণ করে। বহু শতাব্দী ধরে মহাস্থানগড় মৌর্য, গুপ্ত এবং পাল সাম্রাজ্যের মতো বিভিন্ন রাজবংশের উত্থান-পতনসহ নানা ঐতিহাসিক ঘটনার নিরব সাক্ষী হয়ে আছে।
এখানে প্রাচীন দুর্গ, মন্দির এবং আবাসিক এলাকাসহ বিস্ময়কর সব ধ্বংসাবশেষ রয়েছে। বর্তমানে এটি একটি জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য, যা এই অঞ্চলের সমৃদ্ধ ইতিহাস অন্বেষণে আগ্রহী দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করে। এ জায়গার মাটি থেকে খনন করে পাওয়া জিনিসগুলো সব এক সঙ্গে প্রদর্শনের জন্য স্থাপন করা হয়েছে মহাস্থানগড় জাদুঘর। এটি এখানে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের একই সঙ্গে বিস্মিত করে এবং নতুন করে ইতিহাসকে জানতে উৎসাহিত করে।
রংপুরের উপকণ্ঠ তাজহাটে অবস্থিত বাংলাদেশের এই ঐতিহাসিক প্রাসাদের আরেক নাম তাজহাট জমিদার বাড়ি। এই শ্বেত-শুভ্র মনোরম প্রাসাদটির গোড়াপত্তন হয়েছিল বিংশ শতাব্দির ব্রিটিশ ঔপনিবেশের সময়। প্রতিষ্ঠাতা এই অঞ্চলেরই তৎকালীন বিশিষ্ট জমিদার মহারাজা কুমার গোপাল লাল রায়। প্রাসাদটির স্থাপত্য বৈশিষ্ট্যে ইউরোপীয় এবং মুঘল কায়দার এক চমৎকার সংমিশ্রণ রয়েছে।
বর্তমানে তাজহাট প্রাসাদ একটি যাদুঘর হিসেবে রয়েছে যেখানে সংরক্ষিত আছে বিভিন্ন শিল্পকর্ম, প্রাচীন আসবাবপত্র এবং হস্তশিল্প। যাদুঘর ঘুরে দেখার সময় দর্শনার্থীদের উৎসুক দৃষ্টি আঁটকে থাকে এর জটিল কাঠের কাজ, অলঙ্কৃত ছাদ এবং সুচারুরূপে সংরক্ষিত আভ্যন্তরীণ সাজসজ্জায়। ভবনের চারপাশে অবস্থিত প্রাসাদ উদ্যানগুলো পর্যটকদের জন্য একটি নির্মল এবং মনোরম পরিবেশ প্রদান করে।
এই চিত্তাকর্ষক স্থাপনাটি নির্মিত হয়েছিল বাংলার সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহের শাসনামলে ১৪৯৩ থেকে ১৫১৯ সালের মধ্যে। চাপাইনবাবগঞ্জ জেলায় অবস্থিত এই মসজিদটি বাংলাদেশের একটি স্থাপত্য রত্ন। এতে রয়েছে বাংলা এবং তুর্কি স্থাপত্য শৈলীর এক আশ্চর্য সংমিশ্রণ। নিদেনপক্ষে এর জটিল পোড়ামাটির অলঙ্করণ, সূক্ষ্ম মিহরাব এবং অনন্য ইটের নকশা তারই চিহ্ন বহন করে।
কয়েক শতাব্দি পেরিয়ে গেলেও মসজিদটি এখনও তার জাঁকজমক ও ঐতিহাসিক আকর্ষণ ধরে রেখেছে। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত এটি স্থানীয় মুসলমানদের জন্য একটি সক্রিয় উপাসনালয় হিসেবে পরিচালিত হয়ে আসছে। এর স্থাপনার খুটিনাটিতে সযত্নে দেয়া কারুকাজ এর সরণাপন্ন হওয়া প্রতিটি প্রাণকে স্তম্ভিত করে। পাশাপাশি মসজিদের নির্মল পরিবেশের প্রতি পরতে পরতে আধ্যাত্মিকতার বুনন হৃদয়ে এক নৈসর্গিক অনুভূতির সৃষ্টি করে।
দিনাজপুর জেলায় অবস্থিত এই মহিমান্বিত পোড়ামাটির হিন্দু মন্দিরটির আরো একটি নাম আছে; আর তা হলো- কান্তনগর মন্দির। ১৮ শতকের শেষের দিকে তৎকালীন স্থানীয় শাসক মহারাজা প্রাণ নাথ এর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। মন্দিরের সম্পূর্ণ নির্মাণ কাজটি সম্পন্ন হয় ১৭২২ সালে তার পুত্র মহারাজা রাম নাথের শাসনামলে।
মন্দিরটি তার জটিল পোড়ামাটির জন্য বিখ্যাত, যার অলঙ্করণে প্রাণ পেয়েছে হিন্দু মহাকাব্য রামায়ণ এবং মহাভারতের কিংবদন্তিগুলো। তা সত্ত্বেও এক অসাধারণ স্থাপত্যের বিস্ময় হিসেবে এখনো অবিনশ্বর ভঙ্গিমায় ঠায় দাঁড়িয়ে আছে এই উপসনালয়টি। বিশ্বের আনাচে-কানাচে এর হাজারও ভক্ত এখনো এর চমৎকার কারুকার্যের প্রশংসা করে। এছাড়া মন্দিরের চারপাশের শান্ত বাগান এবং বড় পুকুরের মনোরম পরিবেশে দর্শনার্থীরা খুঁজে পায় আত্মশুদ্ধির খোরাক।
রাজশাহীর বাঘা শহরটি আয়তনে অনেক ছোট হলেও এর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এই মসজিদটি ইতিহাসে এক বিরাট স্থান দখল করে আছে। ১৫২৩ খ্রিস্টাব্দে হুসেইন শাহী বংশের একজন শাসক সুলতান নুসরাত শাহের শাসনামলে এটি নির্মিত হয়। মসজিদটি তার জটিল ফুল ও জ্যামিতিক নকশা মিশ্রিত চিত্তাকর্ষক পোড়ামাটির অলঙ্করণের জন্য সুপরিচিত।
৫০০ বছরেরও বেশি পুরানো হওয়া সত্ত্বেও শত শত চড়াই-উৎড়াই পেরিয়ে মসজিদটি এখনো অটুট অবস্থায় রয়েছে। শুধু দর্শনার্থীরাই নন; প্রার্থনার জন্য আগত স্থানীয় মুসলমানরাও এর আঙ্গিনা, প্রার্থনা হল এবং সুন্দর খিলানযুক্ত প্রবেশদ্বারগুলো প্রায়ই ঘুরে দেখেন।
রাজশাহী পুঠিয়া উপজেলায় অবস্থিত এই বিশাল মন্দির কমপ্লেক্সটি পুরোনো হিন্দু মন্দিরগুলোর স্থাপত্য শৈলীকে পরিবেশন করে। পোড়ামাটিতে তৈরি মন্দিরগুলোতে ছিল বহুমুখী শৈলী ও জোড়-বাংলা স্থাপত্যের সমন্বয়ে বৈচিত্র্যপূর্ণ নকশা। এর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপিত হয় ১৬শ’ শতকের প্রথম দিকে, যা পরবর্তীতে পরিপূর্ণভাবে গড়ে উঠতে কয়েক শতাব্দী লেগে যায়। এর নির্মাণ কাজ প্রাথমিকভাবে সম্পন্ন করেছিলেন পুঠিয়া রাজ পরিবার, যারা তৎকালীন সময়ে শিল্প ও সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক ছিলেন।
রাজশাহী পুঠিয়া মন্দির কমপ্লেক্স।
মন্দির কমপ্লেক্সে রয়েছে বেশ কয়েকটি মন্দির রয়েছে, যেগুলোর মধ্যে গোবিন্দ মন্দির, শিব মন্দির এবং জগন্নাথ মন্দির স্থাপত্য সৌন্দর্য্যে ভরপুর। প্রতিটি মন্দিরে অনন্য স্থাপত্য উপাদানের মধ্যে রয়েছে জটিল পোড়ামাটির খোদাই এবং অলঙ্কৃত পোড়ামাটির ফলক।
কয়েক শতাব্দির নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যেও টিকে গেছে বেশ কিছু মন্দির। সেগুলো বিভিন্ন সময়ে ভালভাবে সংরক্ষণ করে দর্শনার্থীদের দেখার উপযোগী করে তোলা হয়েছে। পুরো কমপ্লেক্সটি যুগ যুগ ধরে এই অঞ্চলের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের মাইলফলক বজায় রেখেছে।
শুধু ঐতিহাসিক নিদর্শনই নয়, বাংলাদেশের এই ১৫টি বিশ্ব সেরা ঐতিহ্যবাহী স্থান একই সাথে দেশের মৌলিক সাংস্কৃতিক পরিচয়ের ধারক ও বাহক। এ স্থানগুলোর দর্শন একদিকে দেশাত্মবোধের প্রতিধ্বনি, অন্যদিকে ঐতিহ্যের রেশ ধরে সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের পরশ বুলায় প্রতিটি নাগরিকের হৃদয়ে। এই অনুভূতির স্বাদ পেতে যে কোন দিন রওনা হওয়া যেতে পারে সেই ঐতিহাসিক গন্তব্যে।