অভাবের তাড়নায় আগেই গরু বেচে দিয়েছেন। দিনমজুর খাটবেন, সেই সক্ষমতাও শেষের দিকে। সংসার চালাতে বাধ্য হয়েই তাই তেলের ঘানি নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছেন জাকির হোসেন ও রাবিয়া দম্পত্তি। সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার মাদারজানি গ্রামে এই দম্পতির বসবাস।
সরেজমিনে দেখা গেছে, তেলের ঘানি টানছেন জাকির হোসেন ও তার স্ত্রী রাবিয়া খাতুন। কাঠের বিভিন্ন সরঞ্জাম দিয়ে তৈরি যন্ত্রটি কাঁধে নিয়ে অনবরত ঘুরছেন। আর সরিষা থেকে ফোঁটায় ফোঁটায় তেল জমছে পাতিলে। জাকির হোসেন বলেন, শনিবার সলঙ্গা হাট থেকে ২০ কেজি সরিষা কিনেছি। সকাল-সকাল ঘানিতে মাড়াই করছি। দিনভর বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে তেল বেচবো। তেলের টাকার রোজগারেই সংসার চলে কোনোরকমে। কাঠের ঘানি দিয়ে সরিষা মাড়াই করতে ৬ থেকে ৭টি পাথর ব্যবহার করতে হয়। ওজন কমপক্ষে ৬ মণ।
তার স্ত্রী রাবিয়া খাতুন বলেন, বিয়ের পরই তেলের ঘানি কাঁধে তুলে নিয়েছি। এ কাজে খুব কষ্ট হয়। আমি হার্টের রোগী। মাসে ১ হাজার টাকার ওষুধ লাগে। ঘানি টানলে অসুখ বেড়ে যায়। তবুও নিরুপায় হয়ে সরিষা মাড়াই করতে হয়। জাকির হোসেনের ছোট মেয়ে খুশি খাতুন বলেন, আমরা দুই বোন ও দুই ভাই। সবার বিয়ে হয়েছে। এক ভাই বউ নিয়ে ঢাকায় থাকেন। আরেক ভাই বাড়িতেই থাকেন আলাদা। দুই ভাই বাবা-মাকে কোনো খরচ দেয় না। তাদেরও অভাবের সংসার। দুমুঠো ভাতের জন্য বুড়ো বয়সে বাবার এত কষ্ট চোখে দেখার মতো না।
জাকির ও রাবিয়া দম্পত্তি জানান, সিরাজগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহম্মাদ ১টি গরু কিনে দিয়েছিলেন। ঋণের দায়ে বেচে দিতে হয়েছে। মেয়ের বিয়েতেও কিছু খরচ হয়েছে। তেলের ঘানি বাইরে পড়ে ছিলো। গরু বেচার টাকায় ঘরও দিয়েছি।
এ প্রসঙ্গে তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুইচিং মং মারমা বলেন, অসহায় জাকির হোসেন ও রাবিয়া দম্পতির জন্য কিছু করার চেষ্টা করব।