ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঁঠালিয়া) আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক আলোচিত সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার মুহাম্মদ শাহজাহান ওমরকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। কাঁঠালিয়ার বাস স্ট্যান্ডে উপজেলা বিএনপির কার্যালয় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গতকাল বুধবার (২০ নভেম্বর) রাতে কাঁঠালিয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আখতার হোসেন নিজাম মীরবহর বাদী শাহজাহান ওমরসহ ৯ জনকে আসামি করে এ মামলা দায়ের করেন।
জানা যায়, শাহজাহান ওমরের রাজাপুরের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের খবর পেয়ে তিনি গাড়িতে করে আজ বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) সকালে বরিশাল থেকে রাজাপুরে যাওয়ার পথে পিংড়ি এলাকায় দুর্বৃত্তদের হামলার শিকার হন।
হামলাকারীরা তার ব্যবহৃত গাড়িটি ভাঙচুর করে। পরে ভাঙা গাড়ি নিয়ে তিনি রাজাপুর থানায় অভিযোগ করতে গেলে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। দুপুরে তাকে ঝালকাঠির জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে হাজির করা হলে বিচারক আফরোজা বিনতে শহিদ কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, গতকাল বুধবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে উপজেলা সদরের গোডাউনঘাট এলাকায় শাহজাহান ওমরের বাসভবন মেহজাবিনে হামলা ও ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা।
এতে বাসভবনের তিনটি গ্লাস ভেঙে যায়। এ খবর শুনে আজ বৃহস্পতিবার সকালে বরিশালের বাসা থেকে শাহজাহান ওমর তার গাড়ি নিয়ে রাজাপুরের বাসার উদ্দেশে রওয়া হন। বরিশাল-খুলনা আঞ্চলিক মহাসড়কের পিংড়ি এলাকায় আসলে তার গাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা। এ সময় শাহজাহান ওমর গাড়ি থেকে বের হয়ে রাজাপুর থানায় অভিযোগ করতে গেলে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের তোপের মুখে পড়েন।
পুলিশ থানার প্রধান ফটক আটকে দিয়ে শাহজাহান ওমরকে ভেতরে বসিয়ে রাখে। তবে শাহজাহান ওমরকে গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে থানার বাইরে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে বিএনপি নেতাকর্মীরা।
রাজাপুর থানার ওসি ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘থানার বাইরে অবস্থান নেওয়া বিএনপির নেতাকর্মীদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কাঁঠালিয়া থানার একটি মামলায় শাহজাহান ওমরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে দুপুরে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়।
আদালতে নেওয়ার পথে শাহজাহান ওমর অভিযোগ করে বলেন, ‘এ হামলার সঙ্গে রাজাপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ ও সাধারণ সম্পাদক নাসিম আকন জড়িত রয়েছেন। আমি গতকাল বুধবার বিকেলে ঢাকা থেকে বরিশাল আসি। এ খবর শুনে কাঁঠালিয়া থানায় রাতে আমার নামে মামলা হয়েছে। তবে আমি এসব মামলায় ভয় পাই না। আমি আবারও এই দেশে এমপি-মন্ত্রী হবো লিখে রাখেন।’
এ বিষয়ে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নাসিম আকন বলেন, ‘কারা শাহজাহান ওমরের বাসভবনে ও গাড়িতে ইট নিক্ষেপ করেছে, তা আমার জানা নেই।’
বিএনপির হয়ে চারবার ঝালকাঠি-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন শাহজাহান ওমর। হয়েছেন প্রতিমন্ত্রীও। গত ১/১১ সরকারের সময়ে আত্মগোপনে থাকাকালে শাহজাহান ওমর হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির সম্পদ বেরিয়ে পড়ে। সেই সময়কার দুর্নীতির মামলায় স্ত্রীসহ শাহজাহান ওমর ১৩ বছরের কারাদণ্ড হয়। পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে দীর্ঘদিন সরাসরি রাজনীতি থেকে দূরে থাকেন। দুর্নীতির মামলার রায় স্থগিত রাখাসহ নতুন করে মামলা-মোকদ্দমা থেকে নিজেকে সম্পূর্ণ নিরাপদ রাখতে গোপনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গড়ে তোলেন। সর্বশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হঠাৎ করে নৌকায় সমর্থন। প্রকাশ্যে উপজেলার সাংগর উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে তিনি নৌকায় ভোট দিয়ে আবারও আলোচনায় আসেন।
কাঁঠালিয়া সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে গত বছরের ৪ ডিসেম্বর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনী জনসভায় শাহজাহান ওমরের লোকজনকে প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে দেখা যায়। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে তিনি আত্মগোপনে ছিলেন। ৫ আগস্টের পর তার বিরুদ্ধে ঢাকা ও ঝালকাঠিতে তিনটি মামলা হয়েছে।