ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় পুলিশের ইতিবাচক কর্মকাণ্ডে পুলিশের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ফিরে আসতে শুরু করেছে। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায় তাদের সন্তুষ্টির কথা। সাধারণ মানুষের মতে, বর্তমান অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. ওবায়দুর রহমান দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই উপজেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচনা হয়েছে।
উপজেলাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পুলিশের কার্যক্রমে এক প্রকার স্থবিরতা চলে আসে। কোথাও কোনো অঘটন ঘটলে পুলিশের সহায়তা চেয়েও কাঙ্ক্ষিত সহায়তা পাওয়া যেতো না। থানায় অভিযোগ দিয়েও যথা সময়ে প্রতিকার পাওয়া যেতো না। তার উপর জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পুলিশের নেতিবাচক ভূমিকার জন্য এমনিতেও পুলিশের প্রতি ক্ষুব্ধ ছিলো মানুষ। যার ফলে পুলিশের প্রতি সাধারণ মানুষের একটি অনাস্থার জায়গা তৈরি হয়ে যায়। বর্তমানে সেই পরিস্থিতির অনেকটাই উন্নতি হয়েছে। মানুষ দ্রুততর সময়ে কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছে। পুলিশের সাথে সাধারণ মানুষের দূরত্ব কমে এসেছে। ফিরে আসছে আস্থা। তবে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা ও ধর-পাকড় করা স্বত্বেও আশাব্যঞ্জক সাফল্য আসেনি জুয়া ও অনলাইন ক্যাসিনো পরিচালনার মতো অপরাধ নিয়ন্ত্রণে।
থানা সূত্রে জানা যায়, গত ৩রা সেপ্টেম্বর ২০২৪ ইং তারিখে বর্তমান ওসি ঈশ্বরগঞ্জ থানায় যোগদান করেন। তিনি যোগদান করার পর থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৪ মাসে থানায় মোট আমলযোগ্য মামলা গৃহীত হয়েছে ৬৪টি এবং মামলা নিষ্পত্তি করা হয়েছে ৬২টি। আদালতে প্রসিকিউশন দাখিল হয়েছে ১০৭/১১৭ ধারায় ৩১টি, ৩২৩/৫০৬ ধারায় ১০টি, জুয়া আইনে ৮টি ও পুলিশ আইনে ১১টি সহ মোট ৬০টি। উদ্ধার করা হয়েছে ১৭ জন ভিকটিম, ৩টি মোটর সাইকেল, ৫টি সিএনজি চালিত অটোরিকশা, ৩টি ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সা, ১টি সেচ পাম্প, ১টি পিকআপ ট্রাক, ২টি লড়ি ট্রাক, ৪টি গরু, ২৮ বস্তা টিসিবির ডাল, ১৬২০০০ টাকা মূল্যের মনোহারী মালামাল, ৫০০ গ্রাম গাঁজা, ৯৬ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট ও ১৯ লিটার দেশীয় মদ। আসামী গ্রেফতার হয়েছে জুয়াড়ি ২৫ জন, মাদক ব্যবসায়ী ১৩ জন, এজাহারভুক্ত ও সন্দিগ্ধ ৭৫ জন, ওয়ারেন্টভুক্ত ৭৩ জন, পুলিশ আইনে ১৩ জন ও ৫৪ ধারায় ১ জন সহ মোট ২০০ জন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা বিএনপির শীর্ষস্থানীয় এক নেতা বলেন, “বর্তমান ওসির অধীনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় ঈশ্বরগঞ্জ থানা পুলিশের কার্যক্রম যথেষ্ট ইতিবাচক। মাদক ও জুয়া নিয়ন্ত্রণেও পুলিশ যথেষ্ট তৎপর। তবে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে একটা বড় প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে অপরাধীদের সঙ্গে কিছু প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের যোগসাজশ ও অন্যায় সুপারিশ। যার ফলে সদিচ্ছা থাকা স্বত্বেও অনেক ক্ষেত্রে পুলিশ যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারে না।”
মনোয়ার হোসেন নামক উপজেলা জামায়াতের এক নেতা বলেন, “আমি লক্ষ্মীগঞ্জ বাজারে স্থায়ীভাবে বসবাস করি। বর্তমান ওসির আগমনের পরে এখানে কোনো ধরণের জুয়া কিংবা হাউজির আসর বসতে দেখিনি। লক্ষ্মীগঞ্জের আশেপাশে বটতলা, মাইজবাগ বা হারুয়া বাজারেও কোন হাউজি খেলা কিংবা জুয়ার আসর দেখা যায় না। বিগত সরকারের সময়ে যে পরিমাণ মিথ্যা মামলায় হয়রানির শিকার হয়েছি আমরা, সেই তুলনায় ঈশ্বরগঞ্জে কোন মিথ্যা মামলাই হয়নাই বর্তমান ওসির সময়ে।”
সোহাগী বাজারের ব্যবসায়ী পলাশ বলেন, “শুনেছি ঈশ্বরগঞ্জের বর্তমান ওসি এবং ইউএনও দুইজনই অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপসহীন। ইতোমধ্যেই ঈশ্বরগঞ্জে ওরসের নামে মাজার কেন্দ্রিক বেহায়াপনা ও মাদকের আসর বন্ধ হয়ে গেছে। আশা করা যায় তাঁদের দ্বারা ঈশ্বরগঞ্জে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।”
ঈশ্বরগঞ্জ থানার ওসি মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, “গণ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ৫ই আগস্ট সরকার পতনের পর পুলিশের কার্যক্রমে স্থবিরতা নেমে আসে। পুলিশ সদস্যরা একটা ট্রমার মধ্যে ছিলো। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় এবং যথা সময়ে প্রতিকার না পাওয়ায় জনগণও ছিলো ক্ষুব্ধ। আমি এই থানার ওসি হিসেবে যোগ দেওয়ার পর এখানে কর্মরত পুলিশ সদস্যদের মনোবল ফিরিয়ে আনার প্রতি মনোযোগ দেই। আইন-শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও অপরাধ দমনে সর্বশক্তি নিয়োগের প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করি। যোগদানের পর থেকেই কোনো অভিযোগ পাওয়া মাত্রই দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রতিকার প্রদানের চেষ্টা করে যাচ্ছি। বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে অংশীজনদের সাথে মতবিনিময় করছি। বীট পুলিশিং জোরদার করেছি। ঈশ্বরগঞ্জ থানা পুলিশের কার্যক্রমে ইতোমধ্যে এই এলাকার মানুষ স্বস্ত্বি প্রকাশ করছে। তবে জুয়া নিয়ন্ত্রণ করা সত্যিই একটা চ্যালেঞ্জিং বিষয়। কারণ আইনী দূর্বলতার কারণে জুয়াড়িদেরকে গ্রেফতার করে কোর্টে চালান করলে দ্রুতই জামিনে মুক্ত হয়ে যায়। যার ফলে জুয়াড়িদের গ্রেফতার করেও তেমন ফল পাওয়া যায় না। তবু আমরা আমাদের জায়গা থেকে যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে ও মানুষের কল্যাণে আমাদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।”