সাত বছরে রোহিঙ্গা সংকট ক্রমান্বয়ে আরো জটিল আকার ধারণ করেছে। লাগাতার তহবিল ঘাটতির কারণে সে সংকট ঘনীভূত হয়েছে। প্রত্যাবাসন ছাড়া যখন আর কোনো বিকল্প নেই, তখন বিশ্বব্যাংক এই সংকট সমাধানে ইতিমধ্যে ঋণ জর্জরিত বাংলাদেশকে আরো ঋণ দিয়ে এই সংকট আরো বাড়ানোর পদক্ষেপ নিচ্ছে।
আজ শনিবার (৮ জুন) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ৯টি নাগরিক ও উন্নয়ন সংগঠন আয়োজিত মানববন্ধন ও সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন।
ওই কর্মসূচির আয়োজন করে ইকুইটি অ্যান্ড জাস্টিস ওয়ার্কিং গ্রুপের (ইকুইটিবিডি) নেতৃত্বে বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশন, সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলন, সিএসআরএল, এনডিএফ, এফএন ফাউন্ডেশন, তৃণমূল উন্নয়ন সংস্থা, ওয়াটার কিপারস বাংলাদেশ এবং ইয়োথ নেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস।
ইকুইটিবিডির চিফ মডারেটর রেজাউল করিম চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও ইকুইটিবিডির সমন্বয়কারী মোস্তফা কামাল আকন্দের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের জায়েদ ইকবাল খান, বিডিসিএসও প্রসেসের ওমর ফারুক ভুঁইয়া, ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের মামুন কবীর, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী, এফএন ফাউন্ডেশনের আবদুল্লাহ আল হাদী মুন্না, গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আবুল হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা লায়ন আকবর হোসেন প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্যে রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, সরকার প্রতিবছর রোহিঙ্গা ত্রাণ কর্মসূচির বাইরেও ১.২ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করছে। রোহিঙ্গা সংকটের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে সরকার যখন সহায়তা চেয়েছে, তখন বিশ্বব্যাংক বলেছে, এর জন্য বাংলাদেশকে ঋণ নিতে হবে।
আমরা এর প্রতিবাদ করছি, কারণ এই সংকটের জন্য বাংলাদেশ দায়ী নয়, যে তাকে ঋণ নিতে হবে।
অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী বলেন, বিশ্বব্যাংকের ঋণ বাংলাদেশকে কোনোভাবেই সহায়তা করবে না। বরং ইতিমধ্যে ঋণভারে জর্জরিত এই দেশকে আরো সংকটের দিকে ঠেলে দেবে।
মোস্তফা কামাল আকন্দ বলেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য বরাদ্দ মাথাপিছু তহবিল ইতিমধ্যে ১২ ডলার থেকে ৮ ডলারে নেমে এসেছে।
প্রতিবছর তাদের জন্য তহবিল ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে। অথচ তার সাথে তাল মিলিয়ে মানবিক কর্মসূচিতে নিয়োজিত আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো ব্যবস্থাপনা ব্যয় কমাচ্ছে না। অবিলম্বে এই ব্যবস্থাপনা ব্যয় হ্রাস করতে হবে। অন্যথায় এই সংকট চরম আকার ধারণ করবে।
মুক্তিযোদ্ধা লায়ন আকবর হোসেন বলেন, ঋণ সব সময়ই একটা নেতিবাচক বিষয়।
সেটা ব্যক্তিই হোক, বা দেশ। ইতিমধ্যে বাংলাদেশের একটি সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুও ঋণগ্রস্ত। কাজেই আমরা বাংলাদেশকে আরো ঋণগ্রস্ত করার বিরুদ্ধে। যে স্বপ্ন নিয়ে আমরা স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছি, বাংলাদেশকে সেখানে নিয়ে যেতে হলে আমাদের ঋণ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, সারা পৃথিবীতে শরণার্থী সংকট বাড়ছে, কিন্তু তাদের জরুরি সহায়তার জন্য তহবিল কমছে। ২০২৩ সালে এই তহবিল ঘাটতি ছিল ৩৬ বিলিয়ন ডলার। রোহিঙ্গা সংকটে চাহিদার তুলনায় জোগাড় হয়েছে মাত্র ২৫ শতাংশ তহবিল। এমতাবস্থায় প্রত্যাবাসনই একমাত্র উপায়।
বক্তারা আরো বলেন, এই সংকটের জন্য আমরা দায়ী নই। কাজেই এই সংকট মোকাবেলায় আমরা কোনোভাবেই ঋণ গ্রহণ করব না। রোহিঙ্গাদের জন্যই হোক বা তাদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্যই হোক, আমাদের অনুদান দিতে হবে।