মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:১১ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
ভারত বর্ষার সময় পানি ছেড়ে দিয়ে আমাদেরকে বন্যা উপহার দেয়: জামায়াতের আমির সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা একনেক, আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্তসহ ৪ উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি গঠন সংঘর্ষে চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে যা বললেন জাতিসংঘ প্রতিনিধিদলের প্রধান রাশেদ খান মেনন আটক বন্যার্তদের সাহায্যে এগিয়ে আসার আহ্বান জামায়াতের উদ্দেশ্য সচেতনভাবেই ডুম্বুর বাঁধের গেট খুলে দেওয়া হয়েছে: রিজভী উপদেষ্টারা সব বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করবেন গণমাধ্যমে তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচারে আইনগত বাধা নেই দেশের প্রায় ১৮ লাখ মানুষ পানিবন্দি, ১ কোটি ৪২ লাখ টাকা বরাদ্দ

‘বিপদে পড়ছি ছেলেদের ভাত খাওয়াইয়া’

সিএনআই নিউজ টুয়েন্টিফোর
  • আপডেট সময় : 3:29 pm, মঙ্গলবার, ৩০ জুলাই, ২০২৪

‘আমাগো কী দোষ কন? পোলাপাইনগুলা না খাইয়া ছিল। খাওনের হোটেলগুলাও বন্ধ। অরা তো আমাগোই মাইয়া-পোলা। চোহের সামনে না খাইয়া আছে দেইখ্যা চাইরডা ভাত-তরকারি রাইন্ধা খাওয়াইছিলাম। হেইডাই এহন দোষ অইছে। মোগো পুলিশে খোঁজে। বাড়িও গ্যাছেলে কয়েকবার। হেইয়ার লাইগ্যা অহন পলাইয়া পলাইয়া থাহি।’ মোবাইল ফোনে কথাগুলো বলছিলেন পঞ্চাশোর্ধ্ব এক মমতাময়ী মা। তার বাড়ি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) পাশেই। নিরাপত্তার স্বার্থে নাম-পরিচয় গোপন রাখা এই মা জানালেন, তিনি ও তার পরিবারের ওপর পুলিশি হয়রানির কথা।
কোটা আন্দোলন যখন তুঙ্গে তখন দেশের সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হলেও হল ছাড়েনি ববির শিক্ষার্থীরা। কারফিউ জারির আগ পর্যন্ত তারা আন্দোলন আর রাজপথ দখলে রেখেছিল। আন্দোলনের সেই দুঃসময়ে বাড়ি থেকে রান্না করে অভুক্ত শিক্ষার্থীদের খাইয়েছিলেন এই মা। আর সেটাই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই অমার্জনীয় অপরাধে এখন তাকে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে!
কেবল এই মাই নন, ববির আশপাশের অনেক পরিবার আর ছোটখাটো ব্যবসায়ীদের এখন পোহাতে হচ্ছে পুলিশি হয়রানি আর ধরপাকড়ের দুর্ভোগ। কেউ কেউ আবার পুলিশকে ম্যানেজ করে হয়রানি থেকে রেহাই পাওয়ার চেষ্টা করছেন। সবার একটাই অপরাধ, বন্ধের দিনগুলোতে আবাসিক হলে থাকা শিক্ষার্থীদের সহায়তা করেছিলেন, অভুক্তদের মুখে অন্ন তুলে দিয়েছিলেন।
মহাসড়ক অবরোধ করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকা ছেলেমেয়েদের পানি দেওয়া, বিনা পয়সায় নিজের দোকান থেকে হালকা খাবার সরবরাহ আর রান্না করা ভাত-তরকারি দেওয়াসহ সাধারণ জনতা যে যেভাবে পেরেছেন শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছেন। তাদের আরও একটা বড় অপরাধ হচ্ছে, মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে সহায়তা চাওয়া শিক্ষার্থীদের রক্ষার চেষ্টা। বিক্ষোভকারীদের দমনে ১৮ জুলাই বৃহস্পতিবার ববি ক্যাম্পাস ঘেরাও করে র্যাব-পুলিশ-বিজিবি। ক্যাম্পাসের ভেতরে তখন কয়েক হাজার ছেলেমেয়ে। ক্যাম্পাস ঘেরাওয়ের ঘটনায় মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে গ্রামবাসীর সহায়তা চায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তাদের এই আহবানে সাড়া দিয়ে পাশে দাঁড়ায় এলাকাবাসী। সংঘর্ষে না জড়ালেও খাবার-পানি দিয়ে সহায়তা করে তাদের।
পরিচয় না প্রকাশের শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন দপদপিয়ার একাধিক বাসিন্দা যুগান্তরকে বলেন, ‘আন্দোলন চলাকালে যারা সামান্যতম সাহায্য করেছে, তাদেরকেই এখন পুলিশ গ্রেফতার করছে। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার বাসিন্দা আব্দুল হালিম শিক্ষার্থীদের কলা-রুটি খাইয়েছিলেন। এ অপরাধে তাকে গ্রেফতার করে চালান দেওয়া হয়েছে নাশকতার মামলায়। প্রতিবন্ধী হোটেল শ্রমিক জামাল খাইয়েছিলেন পানি, তাকেও গ্রেফতার করেছে বন্দর থানা পুলিশ। এছাড়া রান্না করে খাবার খাওয়ানোর অপরাধে গ্রেফতার করা হয়েছে ৬-৭ জনকে। এভাবে শুক্রবার রাত পর্যন্ত পুরো ইউনিয়নের বাড়ি বাড়ি হানা-তল্লাশি ও গ্রেফতার অভিযান চালিয়েছে পুলিশ।’
কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়কারী, ববির শিক্ষার্থী সুজয় শুভ বলেন, ‘আন্দোলন চলাকালে খাবার দেওয়াসহ নানাভাবে স্থানীয়রা আমাদের সহায়তা করেছেন। ওইসব সাধারণ মানুষকে এখন হয়রানি করছে পুলিশ। শনিবার দুপুরে এই নিয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। নিরপরাধ মানুষকে আমরা হয়রানি বন্ধের দাবি জানিয়েছি। সংবাদ সম্মেলন করেও একই দাবি জানানো হয়েছে। আশা করি এরপর আর নিরপরাধ মানুষকে পুলিশ হয়রানি করবে না।’
বন্দর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ আর মুকুল পিপিএম বলেন, ‘নিরপরাধ কাউকে আমরা গ্রেফতার করছি না। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ আর ভিডিও বিশ্লেষণ করে তাদেরই গ্রেফতার করা হচ্ছে যারা নাশকতায় জড়িত ছিল। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন শিক্ষার্থীও গ্রেফতার হয়নি।’
বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার পাশাপাশি নগরজুড়েই উঠেছে নিরপরাধ মানুষকে গ্রেফতার-হয়রানির অভিযোগ। কোটা সংস্কার আন্দোলনে সংঘর্ষের মামলায় জেলহাজতে পাঠানো হচ্ছে তাদের। গ্রেফতার হওয়া বাকিরা বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মী। আন্দোলনকেন্দ্রিক নানা ঘটনা ইস্যু করে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ৩ থানায় দায়ের হয়েছে ৭ মামলা। ৫ হাজারের বেশি আসামি করা এসব মামলায় নাম উল্লেখ করে অভিযোগ আনা হয়েছে ১৬২ জনের বিরুদ্ধে। এই ১৬২ জনের প্রায় সবাই বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মী। এসব মামলায় রোববার পর্যন্ত গ্রেফতার হওয়া ১৩০ জনের বেশির ভাগও এই দুই দলেরই কর্মী। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাজধানী ঢাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় হামলা-সংঘর্ষে আহত মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব জিয়াউদ্দিন সিকদারকে। জামায়াতের মহানগর আমির জহিরুদ্দিন মু. বাবর গ্রেফতার হন তার আমানতগঞ্জ এলাকার বাসা থেকে। এদের পাশাপাশি কোন সংঘাত-সহিংসতায় না থাকা সাধারণ মানুষকেও গ্রেফতার-হয়রানির অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। এদের মধ্যে যেমন রয়েছেন কোনোরকম রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা না থাকা ব্যাংক কর্মকর্তা, তেমনি আছেন দিন আনা দিন খাওয়া সাধারণ মানুষও।
পরিচয় না প্রকাশের শর্তে নথুল্লাবাদের বাসিন্দা এক মা বলেন, ‘আমার ছেলে স্যানিটারি মিস্ত্রির কাজ করে। হঠাৎ রাতে এসে তাকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। এক সময় সে বিএনপি করলেও ৮-৯ বছর ধরে কোনো রাজনীতি করে না। কোটা আন্দোলনের কোনো কিছুতেই সে ছিল না। তাকে গ্রেফতারের সময় তার মোটরসাইকেলটিও পুলিশ নিয়ে যায়। পরে ৭ হাজার টাকা দিয়ে থানা থেকে মোটরসাইকেল ছাড়িয়ে এনেছি।’ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার এক খুদে দোকানি বলেন, ‘আন্দোলনে থাকার মিথ্যা অভিযোগে গ্রেফতারের ভয় দেখায় বন্দর থানার এক সাব-ইন্সপেক্টর। পরে ৪ হাজার টাকা দিয়ে তাকে শান্ত করেছি।’ এভাবে আরও নানা অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে ৪ থানায় দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) ফজলুল করিম বলেন, ‘নিরীহ কাউকেই কোনোরকম হয়রানি করা হচ্ছে না। যেসব জায়গায় সহিংসতা হয়েছে সেখানকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ও তোলা ছবি দেখে নাশকতাকারীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। তা ছাড়া টাকা-পয়সা লেনদেনের যেসব কথা বললেন, সেসব বিষয়ে যদি আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ করে, তবে তদন্ত সাপেক্ষে অবশ্যই দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

এই রকম আরো জনপ্রিয় সংবাদ
© All rights reserved © 2017 Cninews24.Com
Design & Development BY Hostitbd.Com