যখন আমাদের জিম্মি করে, তখন অনেক অত্যাচার করত। এরপর আমরা যখন নামাজ-রোজা পালন করি, সেগুলো দেখে অত্যাচর কিছুটা কমে আসে। কখনো ভাবিনি বেঁচে ফিরব। বন্দুকের নলের নিচে আমাদের ৩৩ দিন থাকতে হয়েছে।
এই ৩৩ দিন আমাদের কাছে ৩৩ বছর মনে হয়েছে। জিম্মি দশার প্রতিটি দিন ছিল অনেক কষ্টের।
অশ্রুসিক্ত নয়নে কথাগুলো বলছিলেন সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়া জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহর নাবিক জয় মাহমুদ। বুধবার সকালে জয় মাহমুদ তার গ্রামের বাড়িতে যান।
এ সময় পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীরা তার বাড়িতে ভিড় করতে থাকে তাকে একনজর দেখতে। এ সময় আবেগ-আপ্লুত হয়ে হাসি-কান্নায় মেতে ওঠেন সবাই। নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার সালাইনগর দক্ষিণপাড়া গ্রামের জিয়াউর রহমানের ছেলে জয় মাহমুদ।
জয় মাহমুদ আরো বলেন, আমাদের যখন জিম্মি করা হয়, তখন ভাবিনি বেঁচে ফিরব।
তবে আস্তে আস্তে তারা (জলদস্যুরা) যখন স্বাভাবিক আচরণ করতে থাকে, তখন মনে একটু একটু করে সাহস পাই। এবার ঈদের আনন্দ ছিল না। ঈদের দিন ঈদ মনে হয়নি। ঈদে শুধু নামাজ পড়তে পেরেছিলাম আর কিছুই করতে পারিনি। এখন বাড়ি ফিরতে পেরে খুব আনন্দ লাগছে।
জয়ের মা আরিফা বেগম বলেন, আমার বুকের মানিক আমার বুকে ফিরে এসেছে। এর থেকে আনন্দের আর কিছু হতে পারে না। আল্লাহ যে ফিরাই দিছে এ জন্য তার দরবারে লাখ লাখ শুকরিয়া। ঈদ গেছে, আমাদের কাছে ঈদ মনে হয়নি। তবে ছেলে বাড়ি ফিরে আসায় আমাদের কাছে এখন ঈদের দিন মনে হচ্ছে।
জয়ের বাবা জিয়াউর রহমান বলেন, আমার ছেলে আজ সকালে বাড়ি ফিরেছে। আমরা খুব আনন্দিত। আমরা প্রধানমন্ত্রী, দেশবাসী, জাহাজ কর্তৃপক্ষ ও মিডিয়াকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।
জয়ের বৃদ্ধ দাদি বলেন, ‘আমার নাতি বাড়ি ফিরে আসছে, তাই আমার মনে শান্তি পাচ্ছি। কত যে কান্দিচি, তা বলে বুঝানো যাবে না।’
জয়ের সহপাঠীরা বলেন, জয় সুস্থভাবে বাড়ি ফিরে আসায় আমরা খুবই আনন্দিত।
এর আগে গত ১২ মার্চ সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে ভারত মহাসাগর থেকে জিম্মি হন বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহর ২৩ জন নাবিক। এর মধ্যে জয় মাহমুদ একজন। গতকাল নাবিকরা তাদের পরিবারের কাছে ফিরে যান।