সোমবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৪৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
ভারত বর্ষার সময় পানি ছেড়ে দিয়ে আমাদেরকে বন্যা উপহার দেয়: জামায়াতের আমির সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা একনেক, আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্তসহ ৪ উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি গঠন সংঘর্ষে চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে যা বললেন জাতিসংঘ প্রতিনিধিদলের প্রধান রাশেদ খান মেনন আটক বন্যার্তদের সাহায্যে এগিয়ে আসার আহ্বান জামায়াতের উদ্দেশ্য সচেতনভাবেই ডুম্বুর বাঁধের গেট খুলে দেওয়া হয়েছে: রিজভী উপদেষ্টারা সব বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করবেন গণমাধ্যমে তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচারে আইনগত বাধা নেই দেশের প্রায় ১৮ লাখ মানুষ পানিবন্দি, ১ কোটি ৪২ লাখ টাকা বরাদ্দ

ক্রিকেট ‘ভুয়া’!

স্পোর্টস ডেস্ক
  • আপডেট সময় : 11:35 am, বৃহস্পতিবার, ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪
KOLKATA, INDIA - OCTOBER 31: Shakib Al Hasan of Bangladesh looks on following the ICC Men's Cricket World Cup India 2023 between Pakistan and Bangladesh at Eden Gardens on October 31, 2023 in Kolkata, India. (Photo by Alex Davidson-ICC/ICC via Getty Images)

মাঠ থেকে ড্রেসিংরুমে যাওয়া-আসার পথে তো বটেই, ওয়ার্ম আপেও তাঁকে দেখলেই ‘ভুয়া’ ‘ভুয়া’ শোর উঠছে গ্যালারিতে। তবে দর্শক দুয়োর শিকার তিনি এর চেয়েও বহুগুণ কঠিন পরিস্থিতি জয় করে আসা খেলোয়াড়—সাকিব আল হাসান। তাই পরিস্থিতি সামালও দিয়েছেন চমৎকারিত্বের সঙ্গে।
তিনিও গ্যালারিকে পাল্টা ‘ভুয়া’ ছুড়ে দিয়েছেন।
সেটি শুনে আটখানা গ্যালারির দর্শক দুয়োর পরিবর্তে জয়ধ্বনি দিয়েছে, কাছে গেলে নির্ঘাত সেলফির বায়নাও করতেন। একদার ‘বাংলাদেশের প্রাণ বাংলাদেশের জান’, ‘সাকিব্বাইয়ে’র সঙ্গে একটা সেলফি তো আজীবন গুগল স্টোরেজে রেখে দেওয়ার মতো স্মৃতি! দর্শক সমর্থকদের নাড়ির খবর তো আর অজানা নয় সাকিবের।
ভুয়া শব্দটি অবশ্য নতুন কিছু নয়। বিশ্বের সব দেশেই এর সমার্থক আছে।
গ্যালারি থেকে প্রতিপক্ষ তো বটেই, মেসি কিংবা রোনালদোকেও দুয়ো শুনতে হয়েছে। কিন্তু সেই দুয়োধ্বনির সঙ্গে সাকিবকে ‘ভুয়া’ বলার প্রেক্ষাপট ভিন্ন। প্রতিপক্ষের মাঠে, ফর্মে ঘাটতি কিংবা দল বদলালে ঘরের মাঠেও দুয়োধ্বনি ওঠে বিশ্বজুড়ে। কিন্তু সাকিবের আচমকা ‘ভুয়া’ হয়ে ওঠার প্রেক্ষাপট ভিন্ন।
কেন যেন মনে হয় এর সঙ্গে তাঁর রাজনীতিতে নাম লেখানোর যোগ আছে। সাংসদ হওয়ার পর থেকেই গ্যালারি আওয়াজ তুলছে। এমনটা মাশরাফি বিন মর্তুজার বেলায়ও হয়েছিল। অবশ্য গ্যালারি তাঁকে নাজেহাল করেনি। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ তীব্র নিন্দা জানিয়েছিল মাশরাফিকে।
খ্যাতির চূড়ায় থাকা সাবেক অধিনায়ক কি এতে খানিক বিচলিত হয়েছিলেন? সম্ভবত। তবে তিনি সিংহপুরুষ, নিজের মতো করে সামলে এখন দ্বিতীয় মেয়াদে সংসদে। এখন ক্রিকেটের গ্যালারি মাশরাফিকে নাজমুল হাসানের উত্তরসূরি হিসেবে ভাবতে ভালোবাসে।
রাজনীতির যে রোডম্যাপ এখন, তাতে অদূর ভবিষ্যতে তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম কিংবা মাহমুদ উল্লাহদের সংসদে দেখা কোনো কল্পকথা নয়। রাজনীতির মাঠে তাঁরা যেতে পারেন, যা সবার অধিকার। রাজনীতিতে গেলেই তাঁরা ভুয়া হয়ে যাবেন, এ কেমন কথা? ক্রিকেটারের গুণকীর্তনের মানদণ্ড তো মাঠের নৈপুণ্য। সেই মানদণ্ডে মাশরাফি কিংবা সাকিবকে কে কত নম্বর দেবেন—এটা যাঁর যাঁর নিজস্ব অভিরুচি।
এত কিছু বলার উদ্দেশ্য অবশ্য সাকিবকে ‘ভুয়া’ বলা নিয়ে আপত্তি তোলা নয়। যুগে যুগে ‘ভুয়া’ এমন একটি অভিব্যক্তি হয়ে গেছে বঙ্গ সমাজের যে একজনের চোখে প্রায় সবাই ভুয়া! এই ভুয়া যে সব সময় ক্ষোভ থেকে মুখ ফুটে বেরিয়ে আসে, তা কিন্তু নয়। স্রেফ মজা করেও ভুয়া আছড়ে পড়ে গ্যালারি থেকে। যাঁকে উদ্দেশ করে বলা, তিনি এই বাংলা শব্দটির মর্মার্থ না বুঝলেও-বা কী। ভিনদেশিদের লক্ষ করে ‘ভুয়া’ ‘ভুয়া’ আওয়াজ তোলার পেছনে আর কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। অবশ্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সুবাদে বিশ্বের অনেক ক্রিকেটারই এখন ‘ভুয়া’ শব্দের মানে জানেন। একই সূত্র ধরে এই বাংলা প্রতিক্রিয়াটি এখন রপ্তানি হয়েছে ভিনদেশের গ্যালারিতেও। ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে কলকাতার ইডেনে বাঙালি গর্জেছে ‘ভুয়া’, ‘ভুয়া’ বলে।
ভুয়া আওয়াজে ধোঁয়া ওঠে। সেই ধোঁয়ায় দৃষ্টি ঝাপসা হয়। কল্পনায় একে একে ভেসে ওঠে নামগুলো—মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মুশফিক থেকে মাহমুদ উল্লাহ। টাইমলাইনে সামান্য তারতম্য থাকলেও তাঁদের সবাই ‘ভুয়া’! অবাক কাণ্ডই বটে।
সময় কাউকে ছাড় দেয় না। আমরা, আমজনতা সময়ের চেয়েও নির্দয়। প্রশ্ন তুলি, একজন তরুণকে বসিয়ে রেখে সিলেট স্ট্রাইকার্স কেন মাশরাফিকে খেলাচ্ছে? সাকিবের চোখের সমস্যা খুঁচিয়ে আরো বাড়িয়ে দিই। এখনো তামিমের ডট বলের টালি করি অখণ্ড মনোযোগে। রিভার্স সুইপ করে মুশফিক কততমবার আউট হলেন, ভুলি না। ‘সাইলেন্ট কিলার’ মাহমুদ উল্লাহ নিজেই ‘নিহত’ কি না, হাসাহাসি করি।
হাসতেই হাসতেই সেদিন এক সহকর্মীর কাছে জানতে চেয়েছিলাম মাশরাফি-সাকিবদের যোগ্য উত্তরসূরি কি খুঁজে পাওয়া গেল? বয়োকনিষ্ঠ সহকর্মী ভাবতে থাকে, কিন্তু উত্তর খুঁজে পায় না। দীর্ঘ নীরবতার পর ভাবনা ফেলে উঠে যায় নিজের ডেস্কে।
সময়ের কাঁটা বলছে এত দিনে সাকিব-তামিমদের ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়ার কথা নতুন কোনো প্রজন্মের। কিন্তু কিসের কী! লোয়ার অর্ডারে নানা চেষ্টার পর নির্বাচকদের ভাবনায় প্রবলভাবে ফিরে এসেছেন মাহমুদ। এবারের বিপিএলে স্থানীয়দের মধ্যে সবচেয়ে ধারাবাহিক মুশফিক, যিনি টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নিয়েছেন। জাতীয় দলে নিয়মিতদের চেয়ে ফর্মে এগিয়ে থাকা তিনি এবার উইকেটরক্ষণের কাজটাও করছেন দারুণ। তামিমও টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নিয়েছেন। কিন্তু বিপিএলের এবারের আসরে রান সংগ্রহে মুশফিকের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছেন তিনি। ব্যাটিং দেখলেই বোঝা যায়, ক্রিকেট থেকে লম্বা বিরতির কারণে ছন্দে ফেরেননি তামিম। এই ‘অর্ধেক’ তামিমকেই কিনা টপকাতে পারছে না নতুন যুগের কেউ!
সাকিব আল হাসানের চোখের সমস্যাকে জাতীয় সমস্যা বলে মনে হচ্ছে ক্রিকেটের নীতি-নির্ধারকদের। সমস্যা কবে সেরে উঠবে, নাকি আদৌ সেরে উঠবে না, চিন্তিত তাঁরা। তবে সব ছাপিয়ে তাঁদের দুর্ভাবনা সাকিবকে পাওয়া না পাওয়া নিয়ে। এমন দুর্ভাবনার কারণ একটাই—সাকিবের কোনো বিকল্প হাতের কাছে নেই। সময়ের হিসাবে গত দেড় যুগে নতুন কোনো সাকিব হাত তোলেননি। সাকিবের সমসাময়িক তামিম। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে তাঁদের চেয়ে এক বছরের জুনিয়র মাহমুদ। জাতীয় দলে সবচেয়ে সিনিয়র অবশ্য মুশফিক, বছর দুয়েকের। তবু অচিরেই মুশফিকের জায়গা নেওয়ার জোরালো কোনো দাবিদার নেই।
তাঁদের কেউই অতিমানব নন। সাকিব কিংবা তামিম মানের খেলোয়াড় বিশ্বের সব দলেই আছে। বরং পরিসংখ্যান ঘাঁটাঘাঁটি করলে বিব্রত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তবু তাঁরা বাংলাদেশের সেরা ক্রিকেটার, দলকে বিস্তর ম্যাচ জিতিয়েছেনও। একেকজনের যা অর্জন, তা ভবিষ্যতে আদৌ কেউ ছাপিয়ে যেতে পারেন কি না, ঘোরতর সন্দেহ রয়েছে। প্রতিটি সিরিজের আগে দল গড়া নিয়ে নির্বাচকদের ভাবনার পুনঃপুনঃ বাঁকবদল সেই সংশয় আরো বাড়িয়ে দেয়। আজ যে দলে নেই, সে অচিরেই দলে ফিরবে। কারণ চলমান সিরিজে কেউ না কেউ ব্যর্থ হবেই। ঘটনাচক্রে এই বাদ পড়াও আশীর্বাদ, অদূর ভবিষ্যতেই যে নিশ্চিত ডাক পড়বে!
তো, সাকিব ভুয়া নাকি বাংলাদেশ ক্রিকেটের চালচিত্রই অন্তঃসারশূন্য? এই চালচিত্রের অংশ কিন্তু শুধু খেলোয়াড়-কর্মকর্তারাই নন। সংবাদমাধ্যম থেকে শুরু করে ক্রিকেট নিয়ে মজে থাকা সবাই। সময়ে সময়ে ইনিয়ে-বিনিয়ে যাঁদের আমরা স্যার ডন ব্র্যাডম্যান কিংবা শচীন টেন্ডুলকারের চেয়েও বড়, সুযোগ পেলে তাঁদের ‘ভুয়া’ও বলি।
গতকাল ম্যাচশেষে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের অধিনায়ক লিটন কুমার দাসের একটি স্বীকারোক্তি শুনে মনে হয়েছে, এ দেশের ক্রিকেট বলয়টাই আসলে ‘ভুয়া’! মাঝের ওভারে রান না হওয়াতেই খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে ইনিংস বড় হয়নি বলে মেনে নিয়েছেন লিটন। সমস্যাটি অতি প্রাচীন। জাতীয় দল ধুঁকছে দীর্ঘদিন। সমাধানের চেষ্টাও চলছে সেই কবে থেকে। তবু মাঝের ওভারের জট ছাড়াতে পারেনি বাংলাদেশ। তাহলে এত দিনের এত তপস্যা কি মিছে?
সাধনা কখনো মিছে নয়, নিতান্তই সামর্থ্যের ঘাটতি যদি বাধা না হয়ে দাঁড়ায়। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আসলে কোনটা ঘটছে? জাতীয় দল তো বটেই, ঘরোয়া ক্রিকেটেও এখন কোচিং স্টাফের অভাব নেই। শৈশবেই মিলছে কোচের সাহচর্য। অন্যান্য সুবিধা যে একেবারে নেই, তা-ও নয়। তবু সমস্যা থেকে মুক্তি মিলছে না।
উল্টো এবারের বিপিএল যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে সামর্থ্যের ঘাটতিগুলো। দেশি ক্রিকেটাররা জোরে মারেন, কিন্তু বল ছোটে না। অথচ এ দেশের জল-হাওয়ার সঙ্গে ন্যূনতম পরিচয়হীন ভিনদেশিরা তোপ দাগেন। আধুনিক ক্রিকেটে প্রভাব বিস্তারকারী ক্রিকেটারের কদর বেশি। দ্রুতলয়ের টি-টোয়েন্টিতে ‘ইমপ্যাক্ট’ ক্রিকেটারের কদর আরো বেশি। কিন্তু মাঝপথ পেরিয়ে যাওয়া বিপিএলে স্থানীয়দের ভিড়ে প্রভাবশালী নৈপুণ্য কজন করেছেন? হাতে গোনা যাবে সংখ্যাটা। বরং প্রভাবে এগিয়ে বিপিএলের বিদেশিরা। সেই তালিকায় ওমানের বিলাল খান কিংবা আয়ারল্যান্ডের হ্যারি টেক্টরও আছেন। বিগ ব্যাশে ১৪০ রানের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আসা জশ ব্রাউন জানিয়ে রেখেছেন যে বিপিএল চট্টগ্রামে গেলে দেড় শ রানের ইনিংস খেলবেন!
সেখানে টস জিতে লিটন বুঝে ফেলেন মিরপুরের উইকেটে কুমিল্লার বোলিং সামর্থ্য আর খুলনার ব্যাটিং দুর্বলতা বিবেচনায় ম্যাচ জেতার জন্য ১৫০-১৫৫ রানই যথেষ্ট এবং সেটা প্রমাণিতও হয়েছে।
আরেকবার শোর তুলুন—‘ভুয়া’

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

এই রকম আরো জনপ্রিয় সংবাদ
© All rights reserved © 2017 Cninews24.Com
Design & Development BY Hostitbd.Com