শিক্ষার্থীকে হত্যার প্রতিবাদে এলাকাবাসীর সাথে দফায় দফায় সংঘর্ষ ও ভাংচুরের ঘটনায় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে। রোববার (৫ নভেম্বর) মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার ড. মোহাম্মদ নাদির বিন আলী স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ ঘোষনা দেওয়া হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো প্রকাশ করা হয় যে, আগামী ৬ থেকে ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত সব একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হচ্ছে। একাডেমিক কার্যক্রম পুনরায় কবে শুরু করা হবে, তা পরবর্তীতে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হবে।
আগামী ১২ নভেম্বর পর্যন্ত ৭ দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস অনলাইনে নেওয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন রেজিস্ট্রার ড. মোহাম্মদ নাদির বিন আলী। এ সংক্রান্তও একটি বিজ্ঞপ্তি এর আগে রোববার বিকালে প্রকাশ করা হয়। শিক্ষার্থীদের সতর্ক করে ওই বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সব শিক্ষার্থীকে নিজ নিজ বাসায় বা নিরাপদ স্থানে থেকে নিয়মিত অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণ করে পড়াশোনা ও শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে।
উল্লেখ্য, গত ২৭ অক্টোবর ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির টেক্সটাইল বিভাগের শিক্ষার্থী হাসিবুল হাসান অন্তর (২১) কে তুলে নিয়ে বেধড়ক মারধর করে খাগান এলাকায় ফেলে রেখে যায় দুর্বৃত্তরা। শিক্ষার্থীরা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে রাজু হাসপাতাল পরে সাভারের এনাম মেডিকেলে নিয়ে যান। অবস্থার অবনতি হলে পরিবারের তত্ত্বাবধানে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ২ নভেম্বর মারা যান শিক্ষার্থী অন্তর।
এ ব্যাপারে সাভার মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক ও ডেপুটি প্রক্টর মো: বদরুজ্জামান। গত ৪ নভেম্বর সাংবদিক সম্মেলনের মাধ্যমে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মো: আসাদুজ্জামান বলেন, শিক্ষার্থী অন্তর হত্যার প্রধান আসামী রাহাতসরকার (২৫) কে গ্রেফতার করা হয়েছে। সে গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর থানার পূর্ব চান্দনা গ্রামের সাঈদ সরকারের ছেলে। পরিবার নিয়ে তারা সাভারের আক্রান এলাকায় বসবাস করে আসছিল।
পুলিশ সুপার আরো জানান, গত ২৭ অক্টোবর রাহাত সরকার ও তার সঙ্গী আক্রান এলাকার মনসুর (২৪), আশিক (২২), সিফাত (২৩), সাহিম (২৩), টুটুল (২৪)সহ অনেকেই পূর্ব শক্রুতার জের ধরে আক্রান বাজারে এসে শিক্ষার্থী অন্তর ও ফয়সালের মোটর সাইকেলের গতি রোধ করে। এরপর ফয়সালকে চড় থাপ্পরমেরে তাড়িয়ে দিয়ে অপহরণ করে অন্তরকে। এরপর সাভারের খাগান বউ বাজারে একটি বাগানের ভেতরে আটকে রাখে অন্তরকে। সেখানে তাঁর উপর চলে অমানবিক নির্যাতন। অন্তরকে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে সন্ত্রাসীরা।
আহত অবস্থায় অন্তরকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালের পরে ময়মনসিংহ নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় না ফেরার দেশে চলে যান হাসিবুল হাসান অন্তর।
এ ঘটনার জের ধরে অপরাধীদের গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন করে আসছিলেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে আন্দোলন সংঘর্ষে রূপ নেয়। সর্বশেষ জানা গেছে, রোববার সন্ধ্যার পর সাভারের বিরুলিয়ার খাগান এলাকায় মাইকে ঘোষণা দিয়ে ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় স্থানীয় বাসিন্দারা। হামলায় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন। সন্ধ্যার পর এলাকাবাসীর সঙ্গে ফের আরেক দফা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে শিক্ষার্থীদের। শিক্ষার্থীরা অন্যান্য অপরাধীদের গ্রেফতারের দাবিতে রাস্তায় তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। আন্দোলন চলা কালে এলাকাবাসীদের সাথে তাদের কয়েক দফা সংঘর্ষ হয়। যে কারণে সকলের শান্তিপূ্ণ অবস্থা বজায় রাখতে বেসরকারী এই বিশ্ববিদ্যালয়টি বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে বলে জানান কর্তৃপক্ষ।