সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার চরাঞ্চলের নাটুয়ারপাড়া হাটে নিষিদ্ধ চায়না দুয়ারি জাল বিক্রি করছেন দোকানিরা। উপজেলা পর্যায়ে মৎস্য বিভাগের বিভিন্ন সভায় চায়না দুয়ারির বিরুদ্ধে বক্তব্য দেয়া হলেও বিক্রি থামানোর কোনই ব্যবস্থা করেননি প্রশাসন। মৎস্য অফিস, পুলিশ-প্রশাসন ম্যানেজ করেই নাকি ব্যবসা চলছে এ জালের। গত বুধবার ও শনিবার নাটুয়ারপাড়া হাটে গেলে জাল ব্যবসায়িরাই এমনটি বলেন।
ওই দিন হাটে ক্রেতা সেজে শহিদুল ইসলাম নামের এক জাল ব্যবসায়ির কাছে যান এই প্রতিবেদক। শহিদুল ইসলাম টাঙ্গাইলের কালিহাতি থেকে নাটুয়ারপাড়া হাটে আসেন সপ্তাহের দুদিন শনি ও বুধবার। এখানে তিনি কারেন্টজাল ও নিষিদ্ধ চায়না দুয়ারি বিক্রি করেন। কারেন্ট জাল সদরে রেখে বিক্রি করলেও চায়না দুয়ারি বিক্রি করেন পিছনের টিনের ঘরে রেখে গোপণে। কৌশলে শহিদুলের ছেলের কাছে চায়না দুয়ারি আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সবাই চলে যাক। লোকজনের সামনে তো বেচা যাবেনা। আপনে পিছনে আসেন।’ দোকানের পিছনে টিনের ঘরে গেলে তার সাথে দরদাম সব ঠিক করা হয়। ৫২ হাতের একটি চায়না দুয়ারি দাম পরবে সর্বনিম্ন ৩৮শ টাকা। কিভাবে নিয়ে যাবো জানতে চাইলে, শহিদুল বলেন, ‘বস্তার মধ্যে তুলে প্যাকেট করে দিমু। আপনের কোন চিন্তা নাই।’ দরদাম মিটিয়ে একটি জাল বের করে দেন দোকানি। পরে সাংবাদিক পরিচয় দিলে ভ্যাবাচেকায় পড়ে যান তিনি।
নিষিদ্ধ জাল বিক্রি করছেন কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা ফিসার অফিসারেক টাকা দেই। পুলিশেক টাকা দেই। তাছাড়া আমাগোরে বেইচপার দেয়? কেউ আমাগোরে কিছু কইরবার পারবো না। আমাগোরে গোড়া শক্ত।’
শুধু শহিদুলই না এ হাটে অন্ততঃ ২৫টি জালের দোকান আছে। যেখানে কারেন্ট জাল সহ নিষিদ্ধ চায়না দুয়ারি বিক্রি হচ্ছে প্রতিনিয়ত। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন, ‘মৎস্য অফিসার নিজেই তো টাকা খায়। তাছাড়া কারেন্ট জাল, নিষিদ্ধ চায়না দুয়ারি বিক্রি করে কিভাবে? এভাবে চায়না দুয়ারি বিক্রি হতে থাকলে জলজ জীব-বৈচিত্র হুমকির মুখে পরবে। পোনা মাছ সহ মা মাছ কেউ রেহায় পায়না এ জালে।’
এ বিষয়ে নাটুয়ারপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মিজানুর রহমানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করেও পাওয়া যায়নি। তবে কাজিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শ্যামল কুমার দত্ত জানান, ‘মৎস্য অফিসার মোবাইল কোর্ট চালারে আমরা পুলিশ দিয়ে সহযোগিতা করি। কিন্তু জাল ব্যবসায়িদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার বিষয়টা আমার জানা নাই। যদি কোন পুলিশ জড়িত থাকে তদন্ত সাপেক্ষে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।’
কাজিপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) হাসান মাহমুদুল হক জানান, ‘আমি খুব দ্রুতই ওই হাটে ব্যবস্থা নেব। তাদেরকে আইনের আওতায় আনবো।’ কাজিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুখময় সরকার বলেন, ‘যারা অবৈধ ব্যবসা করে তারা এগুলো বলেই। আসলে তাদের বিরুদ্ধে এখন আমাদের একশনে যেতে হবে।