শীত আসলেই উত্তরাঞ্চলে সীমান্ত ঘেঁষা জেলা কুড়িগ্রামে কদর বাড়ে ভাপা, চিুতই ও তেল পিঠার। এই অঞ্চলের মানুষ প্রকৃতির সাথে লড়াই করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। নানান সমস্যার মাঝেও মৌসুম ভিত্তিক গড়ে উঠে সংস্কৃতি। তারই ধারাবাহিকতায় এবার শীতে প্রতিবারের ন্যায় কুড়িগ্রাম জেলার মানুষের ঐতিহ্যবাহী খাবার ভাপা, চিতুই ও তেল পিঠা খাওয়ার ধুম পড়ে গেছে। শীত আসলেই ভাপা, চিতুই ও তেল পিঠার কদর বৃদ্ধি পাওয়ায় কিছু মানুষ এই পিঠার দোকান দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন।
কুড়িগ্রামের সদরের পৌর এলাকাসহ উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজার মোড়ে এবং গ্রামে ভ্রাম্যমাণ দোকানে মাটির চুলায় তৈরি হচ্ছে নানা ধরনের পিঠা। এর মধ্যে রয়েছে ভাপা পিঠা, চিতই পিঠা, তেল পিঠা, পাটিসাপটা পিঠা। পিঠা তৈরি করে সংসার চালাতে হয় অনেকেরই। একেক ধরনের পিটের দাম হয় একেক রকম। সাধারণত ভাপা পিঠা ও চিতই পিঠা ১০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। চালের গুঁড়া, নারিকেল কুরানো, খেজুর গুড়, লবণ, সামান্য পানি দিয়ে ভাপা পিঠা বানানো হয়। গোলাকার এ পিঠার জন্য ছোট ২টি বাটি, ২টুকরো পাতলা কাপড় দিয়ে পেঁচিয়ে ঢাকনা দেওয়া হাড়ির ফুটন্ত পানির ভাব ৩/৪ মিনিট দিয়ে তৈরি করা হয়। চালের আটা পানিতে মিশিয়ে মাটির খোলায় তৈরি করা হয় চিতুই পিঠা। অতি সাধারণ এ পিঠাটি গুড় বা ঝাল মসলা দিয়ে খেতে খুবই মজা। আটায় চিনি অথবা গুড় মিশিয়ে চা খাওয়া কাপে তরল ঐ মিশ্রণকে ফুটন্ত তেলে ঢেলে তৈরি করছে তেল পিঠা। এসব রসনায় অনেকেই ভিড় করেন দোকানগুলোতে। ক্রেতারা দাঁড়িয়েই এসব পিঠা খেয়ে থাকেন। আবার অনেকেই প্যাকেটে করে বাড়ির অন্যান্য সদস্যদের জন্য নিয়ে যাচ্ছেন। তাই বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের জন্য এসব পিঠার স্বাদ নেওয়া কষ্টকর নয়। এদিকে গ্রামাঞ্চলের বাড়িতে বাড়িতে ধুম পরে যায় হরেক রকমের পিঠা বানানোর। ভোর বা সন্ধ্যায় নারীরা চুলোর পাশে বসে দুধ-পুলি তেলপুয়া পিটাসহ বিভিন্ন পিঠা তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এ সময় আত্মীয়-স্বজনরা বেড়াতে আসলে তাদের পিঠাপুলি দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়ে থাকে। গ্রাম অঞ্চলে শীতের পিঠা তৈরি করতে যে উৎসবের সৃষ্টি হয় সে তুলনায় শহরের খুব কমই চোখে পড়ে পিঠাপুলির বাহার। এছাড়া শহরের পথে ঘাটে বা ফুটপাতে পিঠা কেনাবেচা হয় পুরো শীতকাল জুড়েই। কুড়িগ্রাম সদর, রাজারহাট, ফুলবাড়ী, নাগেশ^রী, ভুরুঙ্গামারী, উলিপুর, চিলমারী, রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলার প্রায় সকল জনসমাগমপূর্ণ বাজারগুলোতে দু’একটি করে অস্থায়ী পিঠের দোকান বসেছে। শীত আসলেই এসব দোকান বসে, তারা পিঠা বিক্রি করে বাড়তি রোজগার করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। রাজারহাট উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স এর সামনে পিঠা বিক্রেতা মকবুল হোসেন জানান, প্রতিদিন বিকেলে রাস্তার পাশে চুলোয় বসিয়ে গরম গরম ভাপা পিঠা, চিতুই পিঠা ও তেল পিঠা বানিয়ে বিক্রি করি। ক্রেতাদের আগমন ঘটে অনেক, বিক্রি শেষে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা লাভ হয়। পিঠা খেতে আসা আশরাফুজ্জামান জানান, বাসায় পিটা তৈরি করা সম্ভব হয়ে ওঠে না, তাই কাজের ব্যস্ততার ফাঁকে শীতের এই পিঠা খাওয়ার জন্য এখানে এসেছি। খাওয়া শেষে পরিবারের সদস্যদের জন্য পিঠা কিনে নিয়ে যাচ্ছি।