সোমেশ্বরী, উপদাখালী ও কংস নদের পানি উপচে নেত্রকোনার বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি কলমাকান্দা ও দুর্গাপুর উপজেলার তিন লক্ষাধিক মানুষ। জেলা সদর ও বারহাট্টা উপজেলার শত শত বাড়িঘর ও রাস্তাঘাট পানির নিচে। তলিয়ে গেছে বাসস্ট্যান্ড। খালিয়াজুরী উপজেলার সঙ্গে জেলা সদরের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। কলমাকান্দায় ৮৯টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চাল, ডাল ও নগদ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
জেলার দুর্গাপুর উপজেলার চণ্ডীগড় ইউনিয়নে গতকাল দুপুরে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিতে গিয়ে গিয়াস উদ্দিন (৫৫) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।
নেত্রকোনা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহন লাল সৈকত বলেন, ভারি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোনার কংস, সোমেশ্বরী, ধনু, উপদাখালীসহ ছোট-বড় সব নদ-নদীর পানি বেড়েছে।
কলমাকান্দার ইউএনও মো. আবুল হাসেম বলেন, কলমাকান্দার সব এলাকাই পানির নিচে। ৮৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দুর্গত মানুষের আশ্রয়ের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত ১২টি কেন্দ্রে এক হাজার ২০০ মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।
শেরপুরের ঝিনাইগাতী, নালিতাবাড়ী ও শ্রীবরদীর ৪০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি প্রায় অর্ধ লাখ মানুষ। বিভিন্ন সড়ক ও মৎস্য প্রকল্পসহ ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। স্থানীয়রা জানায়, পানিবন্দি মানুষ গরু, ছাগল ও হাঁস-মুরগি নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে। অনেক পরিবারের চুলা ডুবে গেছে। তারা অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। ঝিনাইগাতী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন দিলদার জানান, এ পর্যন্ত প্রায় ৫৫ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে।
ঝিনাইগাতীর রামেরকুড়া, দিঘিরপাড়, চতল এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে উপজেলা সদর এবং আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় পানি ঢুকছে। গতকাল সকালে বাঁধ ভেঙে একটি বাড়ি ও একটি পোলট্রি খামার ভেসে গেছে। পানিবন্দি বহু মানুষকে উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস।
ভারি বর্ষণে জেলা শহরে ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। তলিয়ে গেছে সার্কিট হাউস, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের বাসভবন। শহরের বেশির ভাগ এলাকার বাড়িঘরে পানি। শহরের প্রধান সড়কে নৌকা চলাচল করছে। শহরের সবচেয়ে উঁচু বাণিজ্যিক এলাকা, পুরানমুন্সেফী, বদিউজ্জামান খান সড়ক, সার্কিট হাউস সড়ক, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সামনের রাস্তা, উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব শ্যামলী, কালিবাড়ী ক্রস রোড, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের বাসভবন, শায়েস্তানগর, স্টাফ কোয়ার্টার, মোহনপুরসহ প্রায় সব এলাকা তলিয়ে গেছে। শহরবাসী অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়েছে।
জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত কুশিয়ারা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। সুনামগঞ্জ ও সিলেটের বন্যার পানির প্রভাবে হাওর এলাকায় বাড়ছে পানি। হবিগঞ্জ পাউবোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মিনহাজ আহমেদ জানান, আরো কয়েক দিন এভাবে বৃষ্টিপাত হতে পারে।