কৃষ্ণ লাশ হয়ে হাসপাতালের আইসিইউ থেকে বের হয়ে লাশ রাখার ঘরে পরে আছে। সারারাত অপেক্ষমান তার আট বছরের ছেলে নীল সরকার চিৎকার করে কাঁদছে আর বলছে-“কোথায় গেলে বাবা?”
সাভার পৌর এলাকার আড়াপাড়ায় কিশোর গ্যাংয়ের হাতে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে খুন হয়েছেন ননী সরকারের ছেলে কৃষ্ণ সরকার (২৫)। সোমবার দিবাগত রাত প্রায় সাড়ে দশটায় বাড়ির সামনে কিশোরদের নেশার আখড়া দেখে প্রতিবাদ করায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহতের ছোট ভাই রনি সরকার (২২) জানান, রাজধানীর মগবাজারে একটি প্রতিষ্ঠানে ভিডিও ক্যামেরাম্যান হিসেবে কাজ করে আসছিলেন কৃষ্ণ সরকার। সোমবার কাজ শেষে ঢাকা থেকে রাত প্রায় সাড়ে দশটায় বাড়ি ফিরেন তিনি। ফেরার পথে প্রধান দরজার সামনে রাস্তায় ৮/১০ জনের একদল কিশোরকে নেশা করতে দেখে ঘরে ঢুকেন। বাসার কক্ষে ব্যাগ রেখে তৎক্ষনাৎ কৃষ্ণ বের হয়ে এর প্রতিবাদ করেন। বাক-বিতন্ডার এক পর্যায়ে কিশোরদের মধ্যে থাকা নয়ন (২০) ছুরি বের করে কৃষ্ণের পেটে ও বুকে পরপর কয়েকটি আঘাত করে। এরপরই তাকে মুমুর্ষ অবস্থায় সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। বুধবার ভোর রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় কৃষ্ণের।
তিনি আরও জানান, কিশোর গ্যাং লিডার নয়ন আড়াপাড়ার গেদা মিয়ার মেয়ের জামাতা। সে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্থানে বসবাস করে থাকে। সম্প্রতি সে শ্বশুর বাড়ি এসে বসবাস করে আসছিল।
নয়নের বাড়ি কুষ্টিয়ার লালনশাহ মাঝার এলাকার ঈদগাহ মাঠ সংলগ্ন মন্ডল পাড়ায়। তার বাবার নাম মোঃ বারেক।
প্রত্যক্ষদর্শী প্রতিবেশী স্বপন সাহা (৪৮) বলেন, তার বাড়ির সামনে একটি ফুল গাছের কাছে ১৩ থেকে ২০ বছর বয়সী কিশোরেরা কৃষ্ণকে ছুরিকাঘাত করে। এরপর রক্তাক্ত অবস্থায় সে আমার বাড়ির বারান্দায় এসে পরে যায়। এ সময় কিশোর গ্যাং সদস্যরা দৌঁড়ে পালিয়ে যায়।
রনি সরকারের স্ত্রী সুমি সরকার জানান, আমরা কিছু বুঝে উঠার আগেই ছেলেরা কৃষ্ণকে রক্তাক্ত করে পালিয়ে গেছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, আড়াপাড়া জমিদার বাড়ি সংলগ্ন এলাকার মানুষেরা প্রতিনিয়ত কিশোর গ্যাং ও মাদকাসক্তদের দ্বারা নির্যাতিত। ভয়ে কখনও কেউ এসব কাজের প্রতিবাদ করেনি। প্রতিদিন এবং রাতে অপরিচিত লোকজন এসে নেশার আখড়া বসায় এসব স্থানে। কৃষ্ণ এর প্রতিবাদ করায় তাঁকে নির্মমভাবে জীবন দিতে হলো।
নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, কৃষ্ণের স্ত্রী ও নীল সরকার (৮) নামে একটি ছেলে রয়েছে। দুই ভাইয়ের মধ্যে সে ছিল বড়। এভাবে কিশোর গ্যাংয়ের হাতে অকালে তার চলে যাওয়া যেন কেউ মেনে নিতে পারছেনা। অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন পরিবারের সদস্যরা।
সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী মাইনুল ইসলাম বলেন, কৃষ্ণ সরকার আইসিইউতে থাকাবস্থায় মঙ্গলবার এ ব্যাপারে সাভার মডেল থানায় মামলা দায়ের করেছেন নিহতের ভাই গোবিন্দ সরকার। কৃষ্ণ নিহত হওয়ায় মামলাটি হত্যা মামলা হিসেবে গণ্য হবে। অভিযুক্তদের অভিযানের মাধ্যমে দ্রæত গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।