সোমবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:১৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
ভারত বর্ষার সময় পানি ছেড়ে দিয়ে আমাদেরকে বন্যা উপহার দেয়: জামায়াতের আমির সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা একনেক, আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্তসহ ৪ উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি গঠন সংঘর্ষে চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে যা বললেন জাতিসংঘ প্রতিনিধিদলের প্রধান রাশেদ খান মেনন আটক বন্যার্তদের সাহায্যে এগিয়ে আসার আহ্বান জামায়াতের উদ্দেশ্য সচেতনভাবেই ডুম্বুর বাঁধের গেট খুলে দেওয়া হয়েছে: রিজভী উপদেষ্টারা সব বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করবেন গণমাধ্যমে তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচারে আইনগত বাধা নেই দেশের প্রায় ১৮ লাখ মানুষ পানিবন্দি, ১ কোটি ৪২ লাখ টাকা বরাদ্দ

সাটুরিয়ার ইতিহাস (পর্ব-২)

গবেষনা- তোফায়েল হোসেন তোফাসানি
  • আপডেট সময় : 2:04 pm, রবিবার, ১৫ মে, ২০২২

ভূঁইয়া গাজীর শর্ত ও গাজীখালী নদীর ইতিহাস

মানিকগঞ্জ জেলার গাজীখালী বিধৌত একটি উপজেলা সাটুরিয়া। যার আয়তন ১৪০.০৯ বর্গ কিলোমিার। ৯ টি ইউনিয়নে রয়েছে ২৯০ টি গ্রাম। সবুজের ঢেউ খেলানো বাংলাদেশের এ অঞ্চলটি পরিপূর্ণ লোক-সংস্কৃতিতে। এ অঞ্চলের প্রাচীন ইতিহাস সাক্ষি বহন করে যে, অনেক অত্যাচার, অবিচার সহ্য করে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে নিজস্ব একটি ভূখন্ড অর্জন করেছে এদেশের মানুষ।
বিভিন্ন গোত্রের রাজাদের শাসন এসেছে এদেশে। এসেছে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী। ব্রিটিশ শাসনের অবসান হলে এদেশে পাকিস্থানী শাসন শুরু হয়। ১৯৭১ সালে লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত হয় স্বাদীন সার্বভৌম একটি নিজস্ব ভূখন্ড “বাংলাদেশ।”

মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া বাংলাদেশেরই একটি ঐতিহ্যবাহী অঞ্চল। যার রয়েছে নিজস্ব ইতিহাস, কৃষ্টি, সংস্কৃতি। এসব ইতিহাস এখন হারিয়ে যাওয়ার পথে।

সাটুরিয়া সদর গড়ে উঠেছে গাজীখালী নদীর তীরে। গাজীখালী খাল নয় নদী। এই নদীটি পশ্চিমে ধলেশ্বরী ও পূর্বে বংশী নদীর সাথে সংযোগ স্থাপন করেছে। নদীটির ছিল অনেক শাখা বা খাল। গাজীখালীর এসব খাল এখন হারিয়ে যাওয়ার পথে।

এক সময় গাজীখালী ছিল নৌ-বন্দর। নদীটিও ছিল পাশে অনেক বড়। পশ্চিমে ধলেশ্বরী থেকে নদীটি উৎপত্তি হয়ে পূর্ব অংশে বংশী নদীর সাথে এসে মিশেছে।

বর্তমানের সাটুরিয়া আদর্শ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ও সরকারী খাদ্য গুদাম পর্যন্ত ছিল গাজীখালীর সীমানা। বড় বড় জাহাজ এসে নোঙ্গর করতো এখানে। পাট আর কাঠের জমজমাট ব্যবসা ছিল সাটুরিয়ায়। গাজীখালীর তীরে ছিল বড় বড় পাটের গুদাম। উপমহাদেশের বড় অংশের পাট রপ্তানী হতো এই গাজীখালীর তীর থেকেই। যুগে যুগে পলি মাটি ভরাট হয়ে এবং নদী দখল হয়ে যাওয়ার কারণে ক্ষীণ হয়ে গেছে গাজীখালী। এই নদীর তীরে সাটুরিয়া বাজারে বড় বড় জাহাজ এসে নোঙ্গর করার কথা এখন শুধুই গল্পের মতো মনে হয়।

উনিশ শতকের প্রথমার্ধে বালিয়াটি জমিদারেরা গাজীখালীর তীরে পশ্চিমের জেগে উঠা চরটিতে বাজার স্থাপনের জন্য এবং জাহাজে করে আসা বড় বড় পাট ও কাঠ ব্যবসায়ীদের মনোরঞ্জনের জন্য একটি পতিতালয় স্থাপন করেন। পতিতালয়কে কেন্দ্র করে গড়ে উঠে বর্তমানের সাটুরিয়া বাজার।

আশি দশকের প্রথমার্ধে সাটুরিয়া বাজারের সচেতন লোকজন একত্রিত হয়ে পতিতালয়টি উচ্ছেদ করেন।

কিংকদন্তী- ভূঁইয়া গাজীর শর্ত ও নদীর নামাকরণ

কিংবদন্তী আছে, সাটুরিয়ার ধুল্লা গ্রামে এক সময় এক যোগী ব্রাহ্মন ছিলেন। ভূঁইয়া গাজী নামে এক গৃহ রাখাল ছিল সেই ব্রাহ্মনের বাড়িতে। ব্রাহ্মন ছিলেন এক মহা সাধক। প্রায়ই তিনি যোগ সাধনার মাধ্যমে দিল্লী যাতায়াত করতেন। ব্রাহ্মন দিনে দিল্লীতে গিয়ে দিনেই ফিরে আসতেন বাড়িতে।

একদিন ভূঁইয়া গাজী বায়না ধরলো দিল্লী যাবে। কিন্তু ব্রাহ্মন তাঁকে স্েগ নিতে নারাজ। নানা অজুহাত দেখিয়ে গাজীকে বিরত রেখে ব্রাহ্মন একাই চলে গেলেন দিল্লীতে। কিন্তু একি?

ব্রাহ্মন দিল্লী গিয়ে দেখেন, ভূঁইয়া গাজী সেখানে। ব্রাহ্মনের বুঝতে বাকি রইলো না যে, ভূঁইয়া গাজী একজন বড় সাধক। একে বাড়িতে রাখা যাবে না। তাই ব্রাহ্মন দিল্লী থেকে ফিরে বাড়ি এসে গাজীতে ডেকে বললেন, তোমাকে আর চাকর রাখবোনা। কিন্তু গাজী এ বাড়ি ছেড়ে যেতে নারাজ। গাজী ব্রাহ্মনকে একটি শর্ত দিলো। শর্তটি পুরণ হলে গাজী এ বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে। শর্তটি হলো- “গাজীর সাথে বিয়ে দিতে হবে ব্রাহ্মনের মেয়েকে।” ব্রাহ্মনও বুদ্ধি করে গাজীকে বললেন, -“তোমার শর্ত আমি পুরণ করবো, যদি তুমি আমার একটি শর্ত পুরণ কর।”

ব্রাহ্মনের দেয়া শর্ত হলো- “এ গ্রামে মোরগ বাগের আগে এক রাত্রে বায়ান্ন বাজার তেপান্ন গলির এক বিশাল নগরী গড়তে হবে এবং সাতটি পুকুর ও একটি নদী করতে হবে।”

এবার গাজী রাজি হলো ব্রাহ্মনের শর্তে। একদিন রাতে সত্যিই সত্যিই শুরু হলো গাজীর নগরী বানানোর কাজ। ব্রাহ্মন এবার পরলেন মহা ভাবনায়। সত্যিই বুঝি গাজীর সাথে মেয়ের বিয়ে দিতে হবে।

এদিকে ব্রাহ্মন নগরী গড়ে উঠার আগেই বসে পরলেন সাধনায়। অনেক চেষ্টা করে রাত শেষ না হতেই মোরগের ডাক দেয়ালেন সাধনার মাধ্যমে। আর অমনি ধ্বসে পরতে লাগলো অর্ধ নির্মিত সব অট্টালিকা। গাজীর আর নগর পত্তন সম্ভব হলো না। সেই ধ্বসে যাওয়া পাথরের নজীর আজও আছে সাটুরিয়ার ধুল্লা গ্রামে বিদ্যমান। এই পাথরের নামে গ্রামটির নাম হয়েছে পাথর ধুল্লা। আর সাটুরিয়ার নদীটির নাম হয়েছে গাজীখালী। ধারনা করা হয়, বর্তমান ধামরাই উপজেলার আমতা ইউনিয়নের বাউখন্ড গ্রামের গাজীর পাথর এবং তার সামনে বিশাল দিঘি (গাজীর দিঘি) ভূঁইয়া গাজীর অলৌকিক ঘটনার নিদর্শন।

এই গবেষনার তথ্য ও তথ্যসূত্র কপি করা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ।

সর্বস্বত্ব- তোফায়েল হোসেন তোফাসানি

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

এই রকম আরো জনপ্রিয় সংবাদ
© All rights reserved © 2017 Cninews24.Com
Design & Development BY Hostitbd.Com