মানিকগঞ্জ জেলার গাজীখালী বিধৌত একটি উপজেলা সাটুরিয়া। যার আয়তন ১৪০.০৯ বর্গ কিলোমিার। ৯ টি ইউনিয়নে রয়েছে ২৯০ টি গ্রাম। সবুজের ঢেউ খেলানো বাংলাদেশের এ অঞ্চলটি পরিপূর্ণ লোক-সংস্কৃতিতে। এ অঞ্চলের প্রাচীন ইতিহাস সাক্ষী বহন করে যে, অনেক অত্যাচার, অবিচার সহ্য করে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে নিজস্ব একটি ভূখন্ড অর্জন করেছে এদেশের মানুষ।
বিভিন্ন গোত্রের রাজাদের শাসন এসেছে এদেশে। এসেছে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী। ব্রিটিশ শাসনের অবসান হলে এদেশে পাকিস্থানী শাসন শুরু হয়। ১৯৭১ সালে লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত হয় স্বাধীন সার্বভৌম একটি নিজস্ব ভূখন্ড “বাংলাদেশ।”
মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া বাংলাদেশেরই একটি ঐতিহ্যবাহী অঞ্চল। যার রয়েছে নিজস্ব ইতিহাস, কৃষ্টি, সংস্কৃতি। এসব ইতিহাস এখন হারিয়ে যাওয়ার পথে।
আমরা সাটুরিয়া বাজার বলে যে পরিচয় প্রকাশ করি এই এলাকাটি মূলত: কাওন্নারা। গাজীখালী নদীর দক্ষিণ তীরে যে এলাকাটি রয়েছে তার নাম সাটুরিয়া। নদীর তীরে এলাকাটির অবস্থান এবং নদীর বুকে জেগে উঠা চরে ঘর-বাড়ি নির্মান করে মানুষ বসবাস শুরু করলে এ এলাকাটিকে অনেকে চর সাটুরিয়া বলে থাকেন।
১৯০৯ সালের পূর্বে কাওন্নারা মৌজায় বর্তমানের সাটুরিয়া বাজারে গড়ে উঠে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ১৯০৯-১২ সালের ভূমি জরিপে ৭৪ নং কাওন্নারা মৌজায় ২য় খন্ড নক্সায় একটি বাজারের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। যা বর্তমানের সাটুরিয়া বাজার বলে পরিচিত হয়ে উঠে। ১৯০৯ সালের পূর্বে নির্দিষ্ট কোন ভূমি জরিপের নথি বা নক্সা পাওয়া যায়নি।
সাটুরিয়া উপজেলার ঐতিহ্যবাহী গাজীখালী নদী।
“আইতে যাইতে সাতরাইয়া,
তাই নাম সাটুরিয়া”
ছন্দটি আমি লিখেছি। কারণ, আমি সাটুরিয়া নিয়ে গবেষনা করতে গিয়ে যে তথ্য পেয়েছি তা নদী মাতৃক একটি এলাকার রূপরেখা।
সাটুরিয়া এলাকার নামাকরণ নিয়ে সঠিক কোন ইতিহাস পাওয়া যায়নি। লোক মুখে যেসব তথ্য পাওয়া গেছে তা প্রকাশ করা হলো।
কিংবদন্তী আছে, সাটুরিয়ার চারপাশে খাল ও নদী বেষ্টিত ছিল। বর্তমান সাটুরিয়া বাজারের দক্ষিনে নদী গাজীখালী, পশ্চিমে চন্দ্রখালী, পূর্ব ও উত্তরে ছিল বারেক খালী। এসব নদী ও খালে ছিল প্রচন্ড শ্রোত। সব সময় নদী বা খালে খেয়া থাকতোনা। প্রায়শ:ই এখানে ব্যবসায়ীক প্রয়োজনে অথবা নিত্য প্রয়োজনীয় কাজে লোকজন খাল বা নদী সাতরিয়ে বাজারে আসতো। আর সাতরিয়ে আসতে হতো বলে এতে প্রথমে বলা হতো “সাতরিয়া” এবং পরবর্তীতে ভাষা পরিবর্তিত হয়ে “সাটুরিয়া” হয়ে যায়।
অন্যমতে, সাটুরিয়ার নামাকরণ নিয়ে রয়েছে খুবই মজার কিংবদন্তী।
বালিয়াটী জমিদার বাড়ি যাবার পথে ইংরেজরা ঘোড়ারগাড়ী করে নামলেন গাজীখালী নদীর পাড়ে। সে সময় নদী পার হওয়ার মতো কোন খেয়া ছিল না ঘাটে। ইংরেজরা তখন নদীর তীরে দাঁড়িয়ে পাশ্ববর্তী গ্রমগুলো দেখছিল। এ সময় বাঙ্গালীরা ভীর করলো তাদের চারপাশে। ইংরেজরা তখন গাজীখালী নদীর ওই তীরে বাজারটির নাম কি তা ইংরেজীতে জিজ্ঞেস করলো। বাঙ্গালীরা ভাবলো, ইংরেজরা খেয়া পার না হতে পেরে বিপদে পরেছে। তাই তখন সবাই মজা জকরে বলে উঠলো “সাহেব, পার হন সাতরাইয়া।” ইংরেজরা খন ভেবে নিল, নদীর তীরের ওই বাজারের নাম “সাতরাইয়া।” এভাবে সাতরাইয়া থেকে ভাষা পরিবর্তিত হয়ে সাটুরিয়া হয়েছে বলে ধারনা করা হয়।
তবে, এলাকার নাম যে ভাবেই হোক না কেন। ইতিহাস ও এলাকা পর্যালোচনায় এটা বুঝা যায় যে, এলাকাটি নদী মাতৃক। গাজীখালীর কয়েকটি শাখা চারদিকে প্রবাহিত হতো। সাটুরিয়ার পাশ্ববর্তী গ্রাম ধুল্লা, বালিয়াটী, বালিয়া নাম থেকেও অনুমান করা যায় যে নদী ও নদীর চিকচিক বালুর সাথে এলাকাটির সম্পর্ক হয়তো একদিন ছিল। এখনও সে নিদর্শণ বয়ে বেড়াচ্ছে ঐতিহ্যবাহী সাটুরিয়া।
এই গবেষনার তথ্য ও তথ্যসূত্র কপি করা, আইনত দন্ডনীয় অপরাধ।
সর্বস্বত্ব- তোফায়েল হাসেন তোফাসানি