মহানন্দ অধিকারী মিন্টু, পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি:
সুন্দরবনসহ উপকূলীয় অঞ্চলের সৌন্দর্য্যমন্ডিত গাছ কেওড়া। লবণযুক্ত মাটিতে এ গাছ ভাল জন্মে। সারি সারি সবুজে ভরা কেওড়া গাছ দেখলে সবারই নজর কাড়বে। সুন্দরবন ঘেষা নদ-নদী, খালের চরগুলোতে ব্যাপক হারে কেওড়া গাছ জন্মে। এ গাছের সঙ্গে কম বেশি সবাই পরিচিত বিশেষ করে উপকূলীয় মানুষ। কেওড়া গাছ পরিবেশের ভারসাম্য যেমন রক্ষা করে, তেমনি উপকূলীয় অঞ্চলের প্রাকৃতীক দেওয়াল রক্ষাকবচ হিসেবেও কাজ করে। উপকূলীয় এলাকার অনাবাদী লবণাক্ত জমিতে কেওড়া গাছ ব্যাপক ভাবে জন্মে। যা উপকূলের প্রান্তিক জনগণের বাড়তি আয়ের উৎস। কেওড়া ফলটি টক স্বাদযুক্ত হওয়ায় বিভিন্ন জায়গায় রপ্তানি করে অনেক পরিবারের রুটি-রুজির ব্যবস্থা হয়। কেওড়া ফলকে ঘিরেও গড়ে উঠতে পারে শিল্প। উপকূলীয় অর্থনীতির কেওড়া ফল নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তাই প্রকৃতির এই সম্পদকেই আমাদের কাজে লাগাতে হবে। চলতি মৌসুমে সুন্দরবন সহ উপকূলীয় অঞ্চলে কেওড়ার বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলে ফলে ভরে গেছেপ্রতিটি গাছ। কেওড়া গাছ মূলত্ব সুন্দরবন কেন্দ্রিক বৃক্ষ হলেও উপকূলীয় খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা সহ সুন্দরবন সংলগ্ন বিস্তৃর্ণ এলাকার নদ-নদীর চরভরাটি জমিতে সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে অন্যান্য প্রজাতির গাছের সাথে কেওড়া গাছের চারা লাগানো হচ্ছে। সুন্দরবন সংলগ্ন পাইকগাছা উপজেলার শিবসা, ভদ্রা, মিনহাজ, কড়ুলিয়া নদী ও কপোতাক্ষ নদের চরভরাটি জমিতে সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে গত কয়েক বছরের ব্যবধানে প্রচুর পরিমাণে কেওড়া গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে। এছাড়া এলাকার বিভিন্ন স্লুইচ গেটের ধারে প্রাকৃতিক ভাবে জন্মানো বড় বড় কেওড়া গাছ রয়েছে। কেওড়া বর্ধনশীল হওয়ায় গাছে দ্রুত ফল ধরে। আশ্বিন মাস পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। এক একটা গাছে প্রচুর পরিমাণে ফল ধরে। এসময় এলাকার হাট-বাজার গুলোতে কেওড়া ফল কিনতে পাওয়া যায়। প্রতি কেজি কেওড়া ১৫ থেকে ২০ টাকা দরে বিক্রি হয়ে থাকে। কেওড়া গাছ পরিবেশসহ উপকূলীয় বেষ্টনী মায়ের মতো আগলে রেখেছে। সুন্দরবনের বানর ও হরিণের প্রিয় খাবার এই কেওড়া ফল। বনের হাজার হাজার বানর ও হরিণের প্রাণ বাঁচায়। হরিণ আর বানরের উপাদেয় খাদ্য হলেও বহু বছর আগ থেকে মানুষ ও মাছের খাদ্য হিসাবে পরিচিত। কেওড়া গাছ সুন্দরবনে প্রচুর পরিমাণে জন্মে। তাছাড়া, উপকূলীয় এলাকায় নদ-নদীর চরে এ ম্যানগ্রোভ গাছ প্রাকৃতিকভাবে জন্মে থাকে। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ। সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলীয় জেলা সমূহের লোকজন কেওড়া ফলের সাথে ছোট চিংড়ি মাছ ও মসুরীর ডাল রান্না করে খেয়ে থাকে। তাছাড়া, কেওড়া ফল হতে আচার ও চাটনী তৈরী করা হয়। কেওড়া ফলেও রয়েছে অনেক গুণ। এ ফল পেটের অসুখের চিকিৎসায় বিশেষতঃ বদহজমে ব্যবহৃত হয়। এই ফলের চাটনি, টক আর ডাল রান্না করে রসনা মেটাচ্ছে অনেকে মানুষ। অন্যদিকে, সুন্দরবনে উৎপন্ন মধুর একটা বড় অংশ আসে কেওড়া ফুল হতে। কেওড়া গাছের আসল বৈজ্ঞানিক নাম সোন্নেরাতিয়া আপিতালা। সুন্দরবন অঞ্চলের সবচেয়ে সৌন্দর্যমন্ডিত গাছ এটি। নতুন জৈব-বর্জ্য মৃদ্ধ, মোটামুটি বা অধিক লবণযুক্ত মাটিতে এ গাছ ভাল জন্মে। বাংলাদেশ, ভারত ও মায়ানমারের বিস্তৃত বনাঞ্চলে এই গাছ দেখা যায়। সরল পাতা বিপরীতমুখী, ফুল উভলিঙ্গ। ফল প্রায় গোলাকৃতির এবং ব্যাস ২-৩ মিলিমিটার। এর পাতা জিওল গাছের পাতার মতো সরু-লম্বাটে। ছোট ছোট হলুদ বর্ণের ফুল হয়। এ ফুলের মধুও সুস্বাদু। একটি ফলে বীজের সংখ্যা ২৫-১২৫টি। কেওড়া ফলের আকৃতি ডুমুরের মতো। সবুজ রঙের ফলের ওপরের মাংসল অংশটুকু টক স্বাদের। ভেতরে বেশ বড় বীচি। কেওড়া ফলের আকৃতি ডুমুরের মতো দেখতে। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় কেওড়া ফলের চাষ ও বাণিজ্যিকীকরণ হলে অর্থনীতিতে নতুন মাত্র যোগ হতে পারে। তাই এ গাছটি হয়ে উঠতে পারে লবণাক্ততায় আক্রান্ত কর্দমাক্ত জমির বিশেষ ফসল। এ গাছ উপকূলীয় মাটির ক্ষয় রোধ করে মাটিকে দিবে দৃঢ়তা ও উর্বরতা রক্ষা এবং লবণাক্ত পরিবেশের উন্নয়ন ঘটাতে পারে