বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:২৮ অপরাহ্ন

সাভার এখন এ্যাটেমবোম, বাড়বে লাশের মিছিল!

রিপোর্টার নাম
  • আপডেট সময় : 2:16 pm, বৃহস্পতিবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২০

স্টাফ রিপোর্টার:

করোনা যোদ্ধা তোফায়েল হোসেন তোফাসানি। তিনি সিএনআই নিউজ ও বার্তা বিচিত্রা পত্রিকার কর্ণধার। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবেও তাঁর রয়েছে বিশেষ ভূমিকা।

বর্তমান করোনা পরিস্থিতির শুরু থেকেই তোফাসানি করোনা মোকাবেলায় কাজ করে যাচ্ছেন। বিভিন্ন সময় তোফাসানি’র কর্মকান্ড ও ফেসবুক স্ট্যাটাস ভাইরাল হয়েছে। মাঠে থেকে সারাদিন মানুষের সেবা করে যাচ্ছেন তিনি এবং কাঁর স্বেচ্ছাসেবকরা।

৩০ এপ্রিল প্রথম রাতে তিনি তাঁর Tofa Sunny ফেসবুক আইডিতে শিল্পনগরী সাভারকে নিয়ে একটি স্ট্যাটাস দেন। স্ট্যাটাসটি ভাইরাল হয় এবং বাস্তবতা তুলে ধরেছেন তিনি তাঁর লেখায়। পাঠকের জন্য স্ট্যাটাসটি হুবুহু তুলে ধরা হলো।

সবই আগের মত 😀 শুধু মুখে মাস্ক ঝুলছে 😎 কোথায় করোনা!
শিল্প নগরী সাভার এখন এ্যাটেমবোম😁
মহল্লায়, পাড়ায় আড্ডা আছে। সকাল-বিকেল সড়ক মহাসড়কে আছে গার্মেন্টস কর্মিদের লম্বা লাইন। কাঁচা বাজার, মুদি দোকানে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে ক্রেতা। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে গণপরিবহন চলছে। যানবাহনের ভীড়। চায়ের দোকানের আড্ডাটা আছে আগের মতই।
ডাক্তার, পুলিশ, সাংবাদিকসহ অনেকেই যোগ হচ্ছেন মৃত্যুর সারিতে। তবুও হুঁশ নেই। মুখে আধা ঝুলা ঝুলছে মাস্ক। যেন এটা লাগালেই করোনা পালাবে।

এই শিল্প নগরী সাভারে করোনায় মুখে মাস্ক লাগিয়ে অথবা আধা ঝুলিয়ে চলছে আমাদের হালচাল, গালগপ্প, বেচাকেনা, আসা যাওয়া। দূরে থাকাতো দূরে থাক, মুখের সাথে মুখ লাগিয়ে কথা বলছি। সেই আগের মতই সবই চলছে। শুধু মুখে মাস্ক ঝুলছে।
পত্রিকায় একটি রিপোর্ট করেছি। “শহরে ছুটে আসছে মানুষ” শিরোনামে। সাভারের সোসাইটি গেটের দোকানী অসুস্থ শরীর নিয়ে হাইমচর থেকে এসে দোকান খুলে ব্যবসা করছেন। বাড়িওয়ালা না করা স্বত্বেও অসুস্থ গার্মেন্টস কর্মী শহরে এসে বহাল তবিয়তে।
হঠাৎ করে গার্মেন্টস খোলার জন্য এই শিল্প নগরীতে জন বিস্ফোরণ ঘটেছে। আর তৈরী হয়েছে করোনার এ্যাটেমবোম। যা যে কোন মূহুর্তেই বিস্ফোরিত হয়ে লাশের মিছিলে যোগ করবে আমাদের।
এত প্রচার- “ঘরে থাকুন” বলে বলে চিৎকার, মাইকিং, লিফলেট, টিভি বিজ্ঞাপন, পত্রিকার শিরোনাম, পুলিশ-, সেনাদের জনসচেতনতা।
হাহাহাহা। ঘরে আছি। —আর আরেকটি ঘরে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছি। এই ঘরটি সাড়ে তিন হাত ঘরের। তবে মড়ক লাগলে রাস্তায়ই পঁচে যাবে লাশ। ছড়াবে দুর্গন্ধ। লাশ ধরা আর ছোঁয়ার কেউ থাকবে না।
সেই দিন বুঝি আর বাকি নেই।
গার্মেন্টসে গিয়ে দেখলাম স্বাস্থ্য আইন মানার কোনো বালাই নেই। গণপরিবহনেও তাই।
রিক্সা, লেগুনা, বাস, পিকআপ, ট্রাক, অ্যাম্বুলেন্স, প্রাইভেটকার এখন যাত্রী পরিবহন। ফাইলে ফাইলে সাজানো যাত্রী। মুখে মাস্ক আছে। কিন্তু, গায়ের সাথে গা লেগে দুলতে দুলতে আলাপে বিলাপে চলছি বেহুঁশ হয়ে।
করোনা ঠেকাতে আমাদের মুখে শুধু একটি মাস্ক ঝুলিয়েছি। আর কোন দায়িত্ব নেই। শুধু কি মাস্ক আমাদের রক্ষা করবে নাকি মাস্ক পরে দায়িত্ব শেষ করছি, কোনটা?
মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী,আলহাজ্ব জাহিদ মালেক স্বপন। আপনার বাবা প্রয়াত মন্ত্রী ও সফল ঢাকার মেয়র কর্ণেল মালেক এবং আমি ভিন্ন কিছু ছিলাম না। রাত-দিন বারিধারায় কেটেছে আমার কিশোর ও যৌবন। সবই বিলিয়েছি আপনার বাবার সাথে রাজনীতি করতে গিয়ে। নেতা হইনি, এমপি মন্ত্রীও আমি নই। এমনকি রাজনীতি করে বড় হয়ে একজন ইউপি মেম্বার পর্যন্ত হইনি। এই যে এভাবে কথা বলি। উচিৎ কথা বেরিয়ে যায়। তাইতো আমার নেতা কর্ণেল মালেক আমাকে অনেক ভালবাসতেন। রাখতেন তাঁর সাথে সাথে। ওই যে বললাম, আপনাদের বারিধারার বাড়ি। তার ইটবালু সিমেন্ট এখনও আমাকে কাছে টেনে নেয়। সেই অধিকার নিয়ে বলছি-
স্বল্প সময়ে করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় এবং সংক্রমন রোধে আপনার সরকার যে ভূমিকা রেখেছে তার জন্য স্যালুট।
দেশে স্বল্প সময়ে এত পিসিআর ল্যাব স্থাপন হয়েছে, তার জন্য আপনাকে স্যালুট।
দেশে চিকিৎসা ব্যবস্থার ঘাটতি নেই ভাল কথা, তার জন্য স্যালুট।
গার্মেন্টস ফ্যাক্টরী খোলা আমাদের বিশাল বিপর্যয়। দেশের করোনার এতদিনের সরকারের সাফল্য ম্লান করে দিয়েছে। এতদিনের প্রচার-প্রচারণা, সচেতনতা সব শেষ করে দিয়েছে।
এর জন্য আপনাকে স্যালুট দিতে পারলাম না।
আপনি বলেছেন আস্তে আস্তে সব খুলে দেবেন। সেই পরিস্থিতি এখনও হয়নি। তাই-
আপনাকে স্যালুট দিতে পারলাম না।
পুঁজিবাদের দেশ হলে সাধারণ মানুষ মরবেই। এটাই স্বাভাবিক। কারণ, সাধারণ মানুষের রক্তে মিটে পুঁজিবাদের পিপাসা।
মন্ত্রী মহোদয়, আমিতো আপনার এলাকার খুবই শক্তিধর যুবনেতা ছিলাম। আপনার বাবার সানিধ্যে রাজনীতি করেছি।
আমি একজন পরিপক্ক মানুষ। কারণ, কোরান, ইঞ্জিল, গীতা, বাইবেল, রামায়ন পড়েছি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, স্কুলের শপথ বাক্য সবই মনে আছে। মার্কসবাদ, লেলিলবাদ পড়েছি। গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, স্বৈরতন্ত্র, সব তন্ত্র ও মন্ত্রের জ্ঞান মাথায় আছে।
ছোটবেলায় এ নিয়েতো নাটক লিখেছি, মঞ্চস্থ করেছি। নাটক গান দিয়ে সমাজ সংস্কার করেছি এই স্বপ্ন নিয়ে যে, এক সসয় বঙ্গবন্ধু কন্যা হবে এদেশের মা। আমরা হবো তাঁর সন্তান।
আমি নাটকের ডায়লগ বলবো না। শুধু বলবো আমরা জানতাম যে রাজনীতিবিদ নয় পুঁজিবাদিরা দেশ চালাবে। মানুষ আমরা সবই বুঝি। বলিনা।
কি বলবো, প্রণোদনা তুমি কার???
সাভার, নারানগঞ্জ, গাজীপুর আজ বিশ্বের মডেল হতে চলেছে। এই মডেলের শো পিস হবে প্রজাতন্ত্রের মালিক। লাফিয়ে লাফিয়ে দেশে বাড়ছে সংক্রমনের হার।
গার্মেন্টস নিয়ে করোনায় অনেক নাটক দেখেছি। আরো কি দেখবো জানিনা।
দেশের অর্থনীতির কথা বলবেন? যে, গার্মেন্টস না খুললে বিদেশী অর্ডার বাতিল হবে। এ দেশের ব্যবসা চলে যাবে অন্য দেশে। লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার ক্ষতি হবে।
হাহাহাহা—–“মানুষ মরিলে পরে বিচার হবে কার? ” মানুষ বড় না কি টাকা বড়।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তি দেশ গড়েছেন শুণ্য থেকে।
করোনায় আর কিছুদিন অপেক্ষা করা উচিৎ ছিল মাননীয় মন্ত্রী। তারপর সব খুলে দিতেন।
আজ দেশের সকল চিকিৎসক, বিশেষ করে শিল্প নগরীর সকলে আতঙ্কিত। সাভারসহ সকল শিল্প নগরীর করোনা বিস্ফোরণ ঠেকানো যাবে না।
মন্ত্রী মহোদয়, আপনি বলেছিলেন কখন গার্মেন্টস খুলে আর বন্ধ করে আপনাকে জানায় না। তাহলে এরা কেমন এবং এরা কারা তা মনে হয় বুঝতে আর কারো বাকি নেই।
আপনি সব ভাল করে শেষে সকল অর্জনকে একটি কারণে বিসর্জন দিতে পারেন না।
সকলেই যা বলে তাই রটে।
গার্মেন্টস ফ্যক্টরী আর সবার সব খোলা রাখার সিদ্ধান্ত আমরা মানতে পারছিনা। সামনে ঘোর অন্ধকার দেখছি।
আশাকরি, মাঠ পর্যায়ের স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের নিয়ে বসে বাস্তবতা জেনে সিদ্ধান্ত নেবেন।
তা না হলে সবই চলবে শুধু মুখে মাস্ক ঝুলিয়ে।
আর বাড়বে লাশের মিছিল।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

এই রকম আরো জনপ্রিয় সংবাদ
© All rights reserved © 2017 Cninews24.Com
Design & Development BY Hostitbd.Com