বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৩৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
জামালপুরে নকল ভিক্সল পাওয়ার তৈরী করে কোটিপতি হওয়ার অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কারিকুলাম যুগোপযোগী করার তাগিদ রাষ্ট্রপতির ১৭ এপ্রিল ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস বৈশ্বিক স্বাধীনতা সূচকে ১৬৪ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪১ কাজিপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ১১ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল  যশোরের শার্শায় সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিকের উপর হামলা মান্দায় জোরপূর্বক বাড়িতে ঢুকে হামলা,থানায় অভিযোগ বেলকুচি বাসী ফাউন্ডেশন এর উদ্যোগে তেঁয়াশিয়া নূরানীয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসায় বৃক্ষ রোপণ করা হয় । ফরিদপুরে বাস-পিকআপ ভ্যান সংঘর্ষে নিহত ১৪ কয়েকদিন বন্ধ থাকার পর সিএনআই নিউজ আবার চালু

পোড়াদহ মেলার আকর্ষণ ৭২ কেজির বাঘাইড়, ১০ কেজির মিষ্টি

রিপোর্টার নাম
  • আপডেট সময় : 6:12 pm, বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২০

সিএনআই নিউজ : বুধবার বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহের মেলায় ৭২ কেজি ওজনের বাঘাইড় মাছের দাম হাকা হয় ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। যমুনা নদী থেকে ধরা এই মাছটিকে ঘিরে ছিলো উৎসুক ক্রেতাদের ভিড়। ব্যবসায়ী বিপ্লব মেলায় বিক্রি করার উদ্দেশ্যে মইনুল নামের একজন জেলের কাছ থেকে মাছটি কিনে নিয়ে আসেন। ৩ মাস আগে যমুনায় এই মাছটি ধরা হলেও পানিতে চৌবাচ্চা বানিয়ে বিশেষ কায়দায় সেটিকে জ্যান্ত রাখা হয়েছিল।

পোড়াদহ মেলা উত্তরাঞ্চলের বগুড়ার জেলার ৪০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী একটি প্রাচীন লোকজ মেলা। শহর হতে ১১ কিলোমিটার পূর্বদিকে ইছামতি নদীর তীরে পোড়াদহ নামক স্থানে প্রতি বছর এই মেলা বসে। বাংলাদেশে যে কয়টি গ্রাম্য মেলা পুরাতন জৌলুস নিয়ে সগর্বে টিকে আছে তার মধ্যে বগুড়ার ‘পোড়াদহ মেলা’ অন্যতম। বৃহস্পতিবার একই স্থানে অনুষ্ঠিত হবে বউমেলা। 

মূল মেলাটি সরকারি তত্ত্বাবধানে আয়োজন করা হলেও বউ মেলা স্থানীয় গ্রামবাসীর উদ্যোগে আয়োজন করা হয়। গ্রামের যেসব মহিলা কাজের চাপে অথবা রক্ষণশীল মানসিকতার কারণে মূল মেলায় যেতে পারে না তাদের জন্যই বিশেষ করে এই আয়োজন করা হয়। বউ মেলার একটি বিশেষত্ব হলো এখানে বিবাহিত (নিজ নিজ স্বামীর সঙ্গে) এবং অবিবাহিত নারীরা প্রবেশ করতে এবং কেনাকাটা করতে পারে। বিক্রেতাদেরও অধিকাংশই থাকে নারী।

এই মেলাকে ঘিরে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে আশপাশের তিনটি উপজেলা জুড়ে। রাত থেকেই ব্যবসায়ীরা বিশাল আকৃতির মাছ মেলায় নিয়ে আসে। পাশাপাশি মেলার অন্যতম আকর্ষণ মাছ আকৃতির ১০ কেজি ওজনের মিষ্টিসহ হরেক রকমের মিষ্টি নিয়ে এসেছে ব্যবসায়ীরা।

বুধবার সকাল থেকে উপজেলাসহ জেলা শহর এবং আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজারো মানুষ আসছে মেলায়। মেলায় নাগরদোলা, চরকি, সার্কাস, জাদু খেলা, মোটরসাইকেল খেলাসহ শিশুদের জন্য অন্যান্য খেলা চলছে। মেলাটি সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

পোড়াদহ মেলার প্রধান আকর্ষণই হলো মাছ। মেলায় পাওয়া যায় বিভিন্ন প্রজাতির হরেক রকমের বড় বড় মাছ। মাছগুলো প্রথমে ভোর বেলায় মেলায় স্থাপিত অস্থায়ী আড়ৎগুলোতে এসে জমা হয়। সেখান থেকে খুচরা ব্যবসায়ীরা মাছগুলো কিনে মেলার নিজ নিজ দোকানে নিয়ে যান। দোকানগুলোতে দিনভর কেনাকাটা চলতে থাকে।

মেলায় আসা বিভিন্ন প্রজাতির মাছের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো রুই, কাতলা, মৃগেল, বোয়াল, সিলভার কার্প, কালবাউশ, পাঙ্গাস মাছ ইত্যাদি। মেলায় সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় ‘বাঘআইড়’ মাছ, স্থানীয়ভাবে যাকে ‘বাঘআইড়’ মাছ বলা হয়। মেলায় দুই মন থেকে আড়াই মণ ওজনের বাঘআইড় পাওয়া যায়। এ ছাড়া পনের থেকে বিশ কেজি ওজনের রুই, কাতলা, পাঙ্গাস মাছ পাওয়া যায়। এবারও মেলায় উঠেছে ১২ কেজি ওজনের কাতল। প্রতিকেজির মূল্য ৭০০ টাকা। সিলভার কাপ ১৫ কেজি ওজনের ৫/৬শ টাকা। ১৯ কেজি ওজনের ব্লাক কাপ ৮৫০ টাকা কেজি।

মাছ ব্যবসায়ী বিপ্লব জানান, তারা সারা বছর ধরে অপেক্ষা করেন এই দিনটির জন্য। একদিনে এই মেলায় অন্তত্য ১০০ মণ মাছ বিক্রি হয়। এ ছাড়া মেলার অন্যতম আকর্ষণ হলো মাছ মিষ্টি। ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেনের দোকানে রয়েছে একটি মিষ্টি। এর ওজন ১০ কেজি। প্রতি কেজি ৩০০ টাকা করে বিক্রি করছেন তিনি।

জানা গেছে, মেলার স্থান পোড়াদহ এলাকায় হলেও মেলাটি ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন স্থানে। পোড়াদহ মেলাকে ঘিরে মেলা বসে সুবোধ বাজার, দুর্গাহাটা, বাইগুনী, দাঁড়াইল, তরনীহাট, পেরীহাটসহ আশপাশের বিভিন্ন স্থানে। এই মেলায় পাওয়া যায় কাঠের তৈরি ফার্নিচার। ফার্ণিচার কেনা-বেচা মেলার দিন ছাড়াও পরের দুইদিনেও চলে। এ ছাড়াও বিভিন্ন আসবাবপত্র, কৃষি সামগ্রী ও খাদ্য দ্রব্য হাট-বাজারের মতোই ক্রয়বিক্রয় হয়। 

এ মেলাকে ঘিরে উৎসবের আমেজে মেতে ওঠে মেলার আশপাশের গ্রামের সব বর্ণের মানুষ। তবে মেলাটি একদিনের হলেও চলে দু’থেকে তিনদিন পর্যন্ত। এ মেলায় হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। ঈদ বা অন্য কোনো উৎসবে জামাই মেয়েদের কিংবা নিকট আত্মীয়দের দাওয়াত না দিলেও পোড়াদহ মেলায় সবাইকে দাওয়াত দিয়ে ধুমধাম করে খাওয়াতে এই এলাকার রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। মেলা উপলক্ষে ওই এলাকার গৃহবধূরা আগেভাগেই ঘর-দুয়ার পরিষ্কার করা, মুড়ি-খৈ ভাজা, নাড়কেলের নাড়– তৈরি শুরু করে। ইতিমধ্যে আত্মীয় স্বজনদের দাওয়াত দেওয়া হয়। গ্রামের জামাইরা মেলায় গিয়ে বড় বড় মাছ কিনে আনেন।

মেলার পরিচালক স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বলেন, মেলাটি সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। মেলায় নাগরদোলা, চরকি, সার্কাস, জাদু খেলা, মোটরসাইকেল খেলাসহ শিশুদের জন্য অন্যান্য খেলা অনুষ্ঠিত হয়।

থানার ওসি সাবের রেজা আহমেদ বলেন, পোড়াদহ মেলাটি সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। মেলায় কোনো প্রকার জুয়া কিংবা অশ্লীল নাচ-গান করার অনুমতি দেওয়া হয়নি।

স্থানীয় ব্যবসায়ী আবদুল আজিজ ঠান্ডু জানান, মেলা মানেই আনন্দ, উল্লাসে মেতে ওঠা। নতুন জামাই-বউ ও স্বজনদের নিমন্ত্রণ জানানো। নিমন্ত্রণ দেওয়ার ক্ষেত্রে নতুন-পুরনো বিবেচনা করা হয় না। কারণ মেলা বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্যের অংশ। সেই ঐতিহ্য ধারণ করে সবাই মেতে ওঠেন বাঁধ ভাঙা উৎসব-উচ্ছ্বাস।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

এই রকম আরো জনপ্রিয় সংবাদ
© All rights reserved © 2017 Cninews24.Com
Design & Development BY Hostitbd.Com