
সিএনআই নিউজ : আর্মস্ট্রংয়ের কথাটা মনে পড়ে যাচ্ছে। চাঁদে পা রেখে বলেছিলেন মানুষের এই ছোট্ট পা ফেলা, মানবজাতির একটি বড় লাফের সমান। মহাকাশ গবেষণায় স্বাধীনতার কথা ঘোষিত হয়ে গিয়েছিল সেই ৫০ বছর আগেই। তারপর একে একে চাঁদে পা রেখেছে রাশিয়া, চিন। অপেক্ষা ভারতের। এখনও পর্যন্ত যা খবর, স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালেই আরেক স্বাধীনতা হাতে আসতে চলেছে। সব ঠিক থাকলে আগামী ১৪ আগস্ট পৃথিবীর কক্ষপথ ত্যাগ করে এক বিরাট লাফে চাঁদের পথে পা বাড়াবে চন্দ্রযান। যাকে মহাকাশ গবেষণার পরিভাষায় বলে ‘ট্রান্স লুনার ইনসারশন’।
সে এক স্বাধীনতার স্বাদ। এরপর আগামী ২০ আগস্ট তার চাঁদের কক্ষপথে প্রবেশ করার কথা। ইসরো ইতিমধ্যে জানিয়েছে, একেবারে নিয়মমতো পা বাড়াচ্ছে চন্দ্রযান। একটি কক্ষপথ পেরোতে তার কমপক্ষে দু’দিন সময় লাগছে। ধীরে ধীরে সেই সময় তার বাড়বে। গত ২৪ জুলাই প্রথম কক্ষপথ পার করে সে। দ্বিতীয় কক্ষপথ পার করেছে ২৬ তারিখ। তৃতীয় কক্ষপথ পেরিয়ে যাওয়ার কথা ২৯ জুলাই। সেই মতো চতুর্থ কক্ষপথ পার করবে ২ আগস্ট। পৃথিবীর পঞ্চম ও শেষ কক্ষপথ পেরোবে ৬ জুলাই। নিজস্ব কক্ষপথে ডিম্বাকারে পৃথিবীর চারদিকে পাক খাচ্ছে চন্দ্রযান। সেই পথেই আগামী ১৪ তারিখ ভোরে যার স্বাধীনতা। যার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দিল্লির লালকেল্লায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভাষণ। সঙ্গে মুক্তি পাবে বহু প্রতীক্ষিত চলচ্চিত্র ‘মিশন মঙ্গল’৷ ইসরোর মঙ্গল অভিযান ‘মিশন অরবিটার মিশন (মম)’-এর সত্য ঘটনা অবলম্বনে বানানো এক নারী স্বাধীনতার গল্প। চাঁদের অভিযানেও সেই নারীই কান্ডারি। সম্প্রতি ইসরোর চেয়ারম্যান কে সিভানও সেই নারীদের কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন, যাঁদের হাতে একের পর এক পরিণতি পাচ্ছে নানা অভিযান।
চন্দ্র অভিযানের শেষ পনেরো মিনিটের কঠিন মুহূর্তের কথাও বলেছেন সিভান। শেষ মুহূর্তের এই পরিস্থিতি কেমন হতে পারে, তা নিয়ে পরীক্ষাও হয়েছে কর্ণাটকের চিত্রদুর্গে। চাঁদের মাটির মতো একটি পৃষ্ঠ সেখানে তৈরি করে দু’টি গহ্বর বানিয়ে তার উপর হয়েছিল বিক্রম ল্যান্ডারের পরীক্ষা। চাঁদের অভিকর্ষ শক্তির মতো পরিস্থিতিও তৈরি করা হয়েছিল সেখানে। সাফল্যের সঙ্গেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ বিক্রম। সব মিলিয়ে সেই মানবজাতির স্বাধীনতার গল্প।
এই পরিস্থিতিতে চিন তো বটেই, আমেরিকার কিছু মন্তব্যও তাদের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলেছে। চিন আগেই বলেছিল, তারা কোনও প্রতিযোগিতায় নেই। উপরন্তু বলে বসে ভারতের সঙ্গে যৌথভাবে গবেষণা করতে পারে তারা। অন্যদিকে, নাসা আবার বলেছে কার্যত তাদের দেখানো পথেই ভারত চাঁদের পথে পা বাড়াল। সেই নিয়ে বিতর্কও কম হয়নি। অনেককে বলতে শোনা গিয়েছে, আমেরিকা অন্যের কৃতজ্ঞতায় ভাগ বসাতে বেশ সিদ্ধহস্ত। ভারত অবশ্য কোনও ঝগড়ায় নেই বলে জানিয়েছে। এমনিতেই তাদের এখনও পরীক্ষা বাকি। তাই এসব নিয়ে কোনও বাড়াবাড়ি করতে চাইছে না ইসরো। সম্প্রতি তারা আবার এ–ও জানিয়েছে যে, চিনের সঙ্গে যৌথ গবেষণায় তাদের আপত্তি নেই। বস্তুত, নবিশ হিসাবে নমনীয় মনোভাবেই রয়েছে ইসরো।
এই মুহূর্তে তাঁদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দু’টি অভিযান নিয়েও মুখ খুলেছেন সিভান। একদিকে যেমন সৌরমিশন হবে, তেমনই ইসরোর পরবর্তী পরিকল্পনায় রয়েছে শুক্র অভিযান। সৌরমিশনে সূর্যের ফোটোস্ফিয়ার, ক্রোমোস্ফিয়ার ও করোনার পরীক্ষা হবে। সূর্যের পৃষ্ঠের উষ্ণতার চেয়ে সূর্যের রশ্মির দূরের সেই অংশের উষ্ণতা অনেক বেশি। তার কারণ অনুসন্ধান করতে হবে সৌরমিশনকে। এর মধ্যে মঙ্গল অভিযানও রয়েছে আরও একটি। সেক্ষেত্রে মঙ্গলে নামার পরিকল্পনাও রয়েছে। যদিও সিভান বলছেন, শুক্র অভিযান তাঁদের সবচেয়ে কঠিন অভিযান হয়ে দাঁড়াতে পারে। তার কারণ, এই প্রথম এমন অভিযান করবে ইসরো। এর আগে মঙ্গলের কক্ষপথে ঘুরে গবেষণার কাজ করেছে ‘মম’ অভিযানে। চাঁদ বা সূর্য সম্পর্কেও অনেকটা তথ্যই জানা। সিভানের কথায়, মঙ্গলের চেয়েও রহস্যজনক ও কঠিন হতে পারে শুক্র অভিযান।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.