বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৪৯ অপরাহ্ন

ছবি এডিট করে ব্ল্যাকমেইল করতেন শিক্ষক,১০ ছাত্রীকে ধর্ষণ

রিপোর্টার নাম
  • আপডেট সময় : 2:32 pm, শনিবার, ৬ জুলাই, ২০১৯

সিএনআই নিউজ :  নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় মাদ্রাসায় ১০ ছাত্রী ধর্ষণের ক্ষেত্রে অভিনব কৌশল ব্যবহার করত শিক্ষক মাওলানা আল আমিন (৩৫)। শিক্ষার্থীদের ধর্ষণের ক্ষেত্রে ব্ল্যাকমেইল করতে ওই শিক্ষক বিশেষ প্রশিক্ষণ নিয়ে ফটোশপের মাধ্যমে শিখেছিলেন কম্পিউটারে ছবি এডিটিংয়ের কাজ। এর মাধ্যমে একজনের মাথা আরেকটি ছবি সঙ্গে কিভাবে জোড়া লাগাতে হয় শিক্ষক আল আমিন সেই প্রশিক্ষণ রপ্ত করে। এরপর কম্পিউটারে মাদ্রাসায় থাকা শিক্ষার্থীদের ছবি সংগ্রহ করে তা নগ্ন ছবির সাথে এডিট করে  ব্ল্যাকমেইল শুরু করে সে। আল আমিন কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর থানার দিঘীরপার গ্রামের মৃত রেনু মিয়ার ছেলে।  ভুক্তভোগী বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী ও অভিভাবক জানায়, অফিস কক্ষ ঝাড়ু দেওয়া, পানি ও বই নিয়ে আসাসহ নানা কৌশলে শিক্ষার্থীদের প্রথমে অফিস কক্ষে ডেকে নিত আল আমিন। সেই সময় আগে থেকেই অফিস কক্ষে থাকা কম্পিউটারটি অন করে রাখত সে। সেখানে বিভিন্ন নগ্ন ছবির সাথে টার্গেটকৃত ছাত্রীর ছবি থেকে মাথা সংযোজন করে রাখতো। পরে টার্গেট করা ছাত্রী অফিস কক্ষে আসলে ডেস্কটপ কম্পিউটারের ছবিটি ঝুলিয়ে রাখত। আর শিক্ষক আল আমিন পাশের ঘরের দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে থাতক। শিক্ষার্থী অফিস কক্ষে প্রব্শে করেই কম্পিউটারে তার বিবস্ত্র দেহের সঙ্গে মাথা লাগানো ছবি দেখে হতবম্ব হয়ে পড়ত। ঠিক সেই সময় আল আমিন পাশের কক্ষ থেকে অফিস কক্ষে প্রবেশ করেই শিক্ষার্থীকে বলত, ‘কিরে এসব কবে থেকে করিস। এসব ছবি তো ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়বে। তোর বাসায় তোর বাবা-মা কি জানে। না ডেকে বলতে হবে।?’শিক্ষকের এমন প্রশ্নে ভয় পেত ছাত্রীরা। এসময় এসব ছবি ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় বা কম্পিউটার থেকে মুছে ফেলার আশ্বাস দিয়ে টার্গেট করা ছাত্রীদের ধর্ষণ করে আল আমিন। এভাবে ২০১৮ সাল থেকে ২০১৯ পর্যন্ত নানাভাবে ধর্ষণ ও যৌন হয়রানি করতে থাকে সে। অভিভাবকরা আরো জানায়, বিশেষ করে মাদ্রাসা পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা পর্নোগ্রাফি বা কম্পিউটার ফটোশপ দিয়ে মাথা কেটে এক ছবির সাথে অন্য ছবি সংযোজন করা যায়, তা জানত না। এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে শিশু শিক্ষার্থীদের বোকা বানিয়েছে সে। ইতোমধ্যে নারায়ণগঞ্জ র‌্যাব-১১ মাওলানা আল আমিনের হেফাজতে থাকা কম্পিউটার, মেমরী কার্ড ও মোবাইল ফোন থেকে প্রচুর পর্নো ভিডিওসহ শিক্ষার্থীদের মাথা সংযোজন করা ছবি উদ্ধার করেছে। এদিকে এ ঘটনায় মাদ্রাসা শিক্ষক আলা আমিনের বিরুদ্ধে পর্নোগ্রাফি ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দুটি মামলা হয়েছে। র‌্যাবের ডিএনডি মো: কামাল হোসেন ও  মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর অভিভাবক নাজমা আক্তার নামে দুইজন বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার রাতেই মামলা দুটি দায়ের করেন। প্রসঙ্গত, গত ২৮ জুন নাারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের অক্সফোর্ড স্কুলের শিক্ষকের বিরুদ্ধে ২০ শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই গত বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার মাহমুদপুর পাকার মাথা এলাকায় ১০ শিক্ষার্থী ধর্ষণের ঘটনায় ‘বায়তুল হুদা মাদ্রাসার” শিক্ষক মাওলনা আল আমিনকে আটক করে র‌্যাব-১১। র‌্যাব-১১র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলেপ উদ্দিন জানায়, গত ২৭ জুন সিদ্ধিরগঞ্জের কান্দাপাড়া এলাকার অক্সফোর্ড স্কুলের ২০ শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের দায়ে গ্রেফতাকৃত শিক্ষক আরিফের নিউজ ও ভিডি ফুটেজ র‌্যাব-১১র ফেসবুক পেজে আপ করার পর তা ভাইরাল হয়। সেই ভিডিও চিত্র ও নিউজ ফতুল্লার মাহমুদপুর এলাকার বায়তুল হুদা মাদ্রাসার তৃতীয় শ্রেণীর এক শিক্ষার্থী ও তার মা দেখে। ওইসময় ৩য় শ্রেণীর ওই ছাত্রী তার মাকে বলে, আমার মাদ্রাসার হুজুরকে যদি টিভিতে দেখাতো তাহলে আমার ভালো লাগতো। তখন মা তাকে প্রশ্ন করলে ওই ছাত্রী জানায়, আমার মাদ্রাসার হুজুরও আমার সাথে বাজে কাজ করেছে। এরপর ওই ছাত্রীর মা ফেসবুকে ঘটনাটি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলেপ উদ্দিনকে জানায়। তারপরই র‌্যাব তদন্তে নেমে সত্যতা পেয়ে মাদ্রাসা শিক্ষক আল আমিনকে আটক করে।এ বিষয়ে র‌্যাব-১১র অধিনায়ক কাজী শামসের উদ্দিন উপস্থিত সাংবাদিকদের জানায়, আমরা দশের অধিক ছাত্রীকে ধর্ষণ ও যৌণ নিপিড়নের অভিযোগে ফতুল্লার মাহমুদপুর এলাকার বায়তুল হুদা মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষক আল-আমিনকে আটক করেছি। তার মোবাইল ও কম্পিটার থেকে অসংখ্য পর্ণো ভিডিও উদ্ধার করা হয়েছে। র‌্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে তার অপরাধ স্বীকার করেছে। তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও পর্ণোগ্রাফি আইনে দুটি পৃথক মামলা দায়ের করা হবে

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

এই রকম আরো জনপ্রিয় সংবাদ
© All rights reserved © 2017 Cninews24.Com
Design & Development BY Hostitbd.Com