
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, ‘রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী দেশে চিকিৎসা করালে চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি হতো। কিন্তু তারা চিকিৎসার জন্য বিদেশে যান। এটি জাতির জন্য লজ্জাজনক ও বেদনাদায়ক।’
শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ‘নিরাপদ চিকিৎসা সেবা আন্দোলন’র উদ্যোগে অনুষ্ঠিত ‘বাঁচার মতো বাঁচতে চাই, নিরাপদ চিকিৎসা সেবা পেতে চাই’- শীর্ষক এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশের চিকিৎসা সেবার মান ততদিন পর্যন্ত উন্নত হবে না, যতদিন পর্যন্ত না সরকারের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও তাদের নাতি-নাতনিরা এ দেশে বিনা চিকিৎসায় মারা না যাবে। দুর্ভাগ্যবশত তারা কথায় কথায় চিকিৎসার জন্য বিদেশে যান। সুতরাং তাদের বোধোদয়ও হবে না, জাতিও এর থেকে পরিত্রাণ পাবে না।’
এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির কাজ না থাকায় প্রতি তিন মাস অন্তর চিকিৎসার নামে বিদেশ ভ্রমণ করেন। বিদেশ ভ্রমণ অপরাধ নয়। তবে চিকিৎসার নামে বিদেশ ভ্রমণ অপরাধ। আর আমাদের প্রধানমন্ত্রী তার কানের চিকিৎসা করানোর জন্য বিদেশে যান। এটি আমাদের জাতির জন্য লজ্জাজনক ও বেদনাদায়ক।’
প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি দেশে চিকিৎসা করালে চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি ঘটতো এমন দাবি করে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের এ প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি বলেন, ‘দেশে নিরাপদ চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠা করতে হলে দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে সচেতন ও ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। বাংলাদেশের সকল হাসপাতাল ও চিকিৎসা কেন্দ্র ২৪ ঘণ্টা ডাক্তার ও নার্সদের উপস্থিতি ও তাদের সেবা থাকা জরুরি, যা আমাদের দেশে অনুপস্থিত। এটি নিশ্চিত করতে হবে।’
ওষুধের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, ‘ওষুধের দাম যখন বৃদ্ধি পায়, তখন যে ওষুধের দাম বেশি থাকে সেই ওষুধই নকল করা হয়। ওষুধের দাম মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখা সরকারের নৈতিক দায়িত্ব। তাই সরকারের উচিত, ১৯৮২ সালের জাতীয় ওষুধ নীতি পুনঃপ্রবর্তন করা। এটি করা সম্ভব হলে ওষুধের দাম এক-তৃতীয়াংশে নেমে আসবে।’
মানব বন্ধনে জাতীয় পার্টির (জাফর) প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক এমপি আহসান হাবিব লিংকন বলেন, ‘আমাদের দেশের সবচেয়ে মেধাবী শিক্ষার্থীরা ডাক্তার হন। কিন্তু তারা আন্তরিকভাবে চিকিৎসা সেবা না দেয়ার কারণে রোগীরা আজ বিদেশে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছেন। এ ঘটনা আমাদের ডাক্তারদের জন্যও লজ্জার।’
মানববন্ধন থেকে চিকিৎসা সেবার নামে চিকিৎসা বাণিজ্য বন্ধ করা, প্রশিক্ষিত ডাক্তার ও নার্সদের দ্বারা চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত, মেডিকেল টেস্টের নামে পকেট কাটা বন্ধ করা, হাসপাতাল ও ক্লিনিকের পরিবেশ উন্নত করা, ভেজাল ও নকল ওষুধ উৎপাদন-বিপনন ও বিক্রি বন্ধ করা, দালাল ও টাউটদের খপ্পর থেকে নিরীহ সাধারণ রোগী ও তার স্বজনদের রক্ষা করে নিরাপদ চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, গরিব-অসহায় রোগীদের ফ্রি চিকিৎসার পাশাপাশি তাদের আরোগ্য লাভ করা পর্যন্ত সরকারি খরচে প্রয়োজনীয় ওষুধসহ অন্যান্য সামগ্রী প্রদান নিশ্চিতকরণ, সরকারি হাসপাতালগুলিতে বন্ধের দিনও পর্যাপ্ত ডাক্তার-নার্সের সেবা প্রদান এবং সরকারি ডাক্তারদের ব্যক্তিগত চেম্বার বন্ধ করার দাবি জানানো হয়।
নিরাপদ চিকিৎসা সেবা আন্দোলনের আহ্বায়ক শরীফ মোস্তফা জামান লিটুর সভাপতিত্বে এতে আরো বক্তব্য দেন- ন্যাশনাল লেবার পার্টির চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ জিয়া, জাতীয় মানবাধিকার সমিতির উপদেষ্টা কাজী মনিরুজ্জামান মনির, আয়োজক সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক মফিজুর রহমান লিটন প্রমুখ।