
শখের কবুতর, শান্তির প্রতীক কবুতর। পাখি কে না ভালবাসে, তা যদি হয় কবুতর তাহলে তো কথাই নেয়। শখ-নেশা আর ব্যবসা, এই তিনের সমন্বয়ে কবুতর লালন পালনের দিকে ঝুঁকছে মিরসরাইয়ের উদ্যমী তিন তরুণ। গড়ে তুলেছে কবুতরের খামার।
মিরসরাই মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সদ্য এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ছাত্র শাহরিয়ার লিংকন। সপ্তম শ্রেণীতে পড়াকালীন উপজেলা সদরে নিজের বাড়িতে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কবুতর পুষতেন শুধুমাত্র শখের বশে। টিফিনের টাকা জমিয়ে ৯০০টাকায় ৩টি কবুতর দিয়ে শখের কবুতর পালন শুরু হয়। প্রতি মাসে ডিম আর বাচ্চা মিলিয়ে মাত্র একবছরের ও কম সময়ের ব্যবধানে এই খামারে স্থান করে নিয়েছে ৭ জোড়া কবুতর। ধীরে ধীরে পরিধি বাড়তে থাকে। তার সংগ্রহে রয়েছে পাকিস্তানের সিরাজী, গিরিবাজ, গেছাঙী এর মতো দামী কবুতর। এ পর্যন্ত ২০হাজার টাকা বিনিয়োগে প্রতিমাসে সাড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকা আয় হয়।
তিনি এখন শখ মেটানোর পাশাপাশি কবুতর বিক্রি করে বাড়তি উপার্জন করছেন। এসব বিষয় নিয়ে কথা হয় তরুণ উদ্যোক্ত শাহরিয়ার লিংকনের সঙ্গে। তিনি বলেন, শখের বশে কবুতর পালন করতে গিয়ে ধীরে ধীরে তা ব্যবসায়ে রূপ নিয়েছে। কবুতর পালন করে সফলতা শুধু লিংকনের নয়। তার ব্যতিক্রমী উদ্যোগ বন্ধুদেরকেও অনুপ্রাণিত করেছে।
লিংকনের বন্ধু মেহেরাব হোসেন চৌধুরী অনিক জানায়, ২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে গিরিবাজ জাতের একজোড়া কবুতর উপহার দেয় লিংকন। শারিরীক দুর্বলতার কারণে এক মাস পর কবুতর দুইটা মারা যায়। বন্ধুর উপহার শখ থেকে নেশাতে পরিণত হয় অনিকের। পরে ২হাজার টাকা দিয়ে তিন জোড়া কবুতর কিনে ছাদে পালন শুরু করি। চার মাসের মাথায় প্রায় সাড়ে ৪ হাজার টাকা আয় হয়েছে। যে পরিমাণ কবুতর কেনার চাহিদা আছে সে পরিমাণ টাকা আমার কাছে ছিল না। আমাদের সাথে যোগ দেয় বন্ধু সাব্বির হাসান মিতুল। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারী মাসে ৩জনের সমান বিনিয়োগে ৩৫হাজার টাকা মুলধনে ২০ জোড়া কবুতর কিনে গড়ে তুলি ‘বন্ধু খামার’।
এখানে দেশীয় কবুতর ছাড়াও ময়ুর পঙ্খী, ব্লু শার্টিন, চুল্লি, সিরাজী, লঙ্কা, হোয়াইট কিং, নান, শর্টপীচ, গিরিবাজ সহ বিভিন্ন প্রজাতির বিদেশি কবুতর রয়েছে।
‘বন্ধু খামার’ নিয়ে তিন তরুনের স্বপ্ন আকাশ ছোঁয়া। উদ্যোমী তরুণ শাহরিয়ার লিংকন, মেহেরাব হোসেন চৌধুরী অনিক ও সাব্বির হাসান মিতুল জানান, পরিবারের সহযোগিতা পেলে লাখ খানেক টাকা বিনিয়োগে বন্ধু খামারকে বৃহৎ পরিসরে গড়ে তোলার ইচ্ছা আছে। ফলে প্রতিমাসে ২০হাজার টাকার মত আয় হবে। কবুতর লালন পালনের জন্য সরকারি বেসরকারি আর্থিক সহযোগিতা প্রশিক্ষণ এবং রোগবালাই দমন নিশ্চিত করা গেলে সৌখিন এই পেশায় বেকারত্ব ঘুচাতে পারে এমনটাই মনে করছেন উদ্যোমী এই তিন তরুণ।
শাহরিয়ার লিংকন জানায়, এক সময় কবুতরের মাধ্যমে চিঠির আদান-প্রদান করা হতো বলে শুনেছি। আগ্রহটা ওখান থেকে। যদিও বাস্তবে তা সম্ভব হয়নি কিন্তু যে দিন প্রথম কবুতর আমার হাতে বসে খাবার খায় সেদিন আমার খুবই ভালো লেগেছিল। আমি প্রায়শ কবুতরের সাথে কথা বলি। শীষ দিলে আমার কাছে আসতো।
শাহরিয়ার লিংকনের মা দিল আরা রোজি জানান, লেখা পড়ার পাশাপাশি কবুতর পোষা বাড়তি উপার্জনের অন্যতম মাধ্যম হতে পারে ছাত্রদের। কারণ তাদের অবসর সময় কবুতর পোষার পিছনে ব্যয় করতে পারে এবং অল্পপুজির মাধ্যমে এ ব্যবসা শুরু করতে পারে।
অনিকের বাবা মঞ্জুর হোসেন ভূঁইয়া ও মা খালেদা চৌধুরী জানান, কবুতর পালনে ছেলের আগ্রহ দেখে আমরাও তাকে সহযোগিতা করি। বাসার ছাদে কবুতর লালন পালনে প্রয়োজনী জিনিসাদি তৈরিতে তাকে সার্পোট দিই। এখন ওকে নিয়ে আমাদের কোন টেনশন নেই। কেননা পড়াশোনার ফাঁকে যে সময়টায় সামাজিক অবক্ষয় হওয়ার কথা সেসময়ে অনিক কবুতর পালন নিয়ে ব্যস্ত থাকে।