ঢাকা: রাজধানীর মোহাম্মদপুরের মোহাম্মদিয়া হাউজিংয়ের তিন নম্বর সড়কে বিশাল বিশাল গর্ত। বেশ কিছু ম্যানহোলের ঢাকনাও খোলা। এর পাশেই খেলায় মগ্ন চার থেকে পাঁচটি ছোট শিশু।
রামচন্দ্রপুর এলাকায় পড়া হাউজিংটির ওই ৮০০ মিটার সড়কের পাশ ঘেঁষে গড়ে উঠেছে ৫০ থেকে ৬০টি ভবন। এসব ভবনে প্রায় ৭০০ পরিবারের বসবাস। সামান্য বৃষ্টির পানিতে ডুবে যায় সড়কটি। মোহাম্মদপুরের রামচন্দ্রপুর খালের পানিও আঁছড়ে পড়ে এই সড়কে। এতে এসব পরিবারের সদস্যদের পানিবন্দি জীবন কাটাতে হয়। অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে তাদের জীবন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সড়কটির বিটুমিনগুলো উঠে লাল ইটগুলো যেন ফোঁকলা হাসিতে মগ্ন। এসব লাল ইটের হাসি সব সময় কাঁদায় স্থানীয়দের।
ভাঙাচোরা ৮০০ ফুট সড়কের পাশে বাড়ি নির্মাণ করেছেন সাবেক সচিব নজরুল ইসলাম। কিন্তু সামান্য বৃষ্টির পানিতে বাড়ির নিচতলা কয়েকদিন পানিবন্দি অবস্থায় থাকে।
বেহাল সড়কের বর্ণনা দিয়ে নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এক ঘণ্টা বৃষ্টি হলে তিনদিন বের হতে পারি না। সড়কের স্যুয়ারেজ ব্যবস্থাপনা ভালো নয়। সড়কের পানি খালে নিষ্কাশিত হতে পারে না। উল্টো খালের পানি সড়কে এসে জমা হয়ে থাকে’।
স্থানীয়রা জানান, গত শনিবারের (২১ মে) বৃষ্টির কারণে প্রায় ৫০ জন সড়কের পানিতে নাকানি-চুবানি খান। এর মধ্যে ১০ জন আহতও হয়েছেন। অনেক প্রয়োজনীয় মালামালও সড়কে পড়ে পানিতে ভিজে নষ্ট হয়। প্রায়ই এমন ভোগান্তি শিকার হতে হয় পথচারীসহ স্থানীয় বাসিন্দাদের।
সড়কের পাশের দোকানগুলোও বন্ধ রাখতে হয় বৃষ্টির সময়। মোহাম্মদিয়া হাউজিংয়ের তিন নম্বর সড়কটির পাশে রয়েছে বিসমিল্লাহ ট্রেডার্স। একদিন বৃষ্টি হলেই কয়েকদিন বন্ধ থাকে দোকানটি।
দোকানের মালিক রবিউল ইসলাম বলেন, বৃষ্টির সময় রাস্তায় ভয়াবহ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এতে পথচারীদের ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করে। রাস্তাটি প্রশস্ত করে পানি নিষ্কাশনের দাবিও জানান তিনি।
হাজারিবাগ থেকে গাবতলী স্লুইসগেট পর্যন্ত বয়ে গেছে রামচন্দ্রপুর খালটি। এর দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৯৪ কিলোমিটার, প্রস্থ প্রায় ২০ থেকে ৩০ মিটার।
খালটিতে মোহাম্মদিয়া মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ সমিতির কিছু বসতি রয়েছে। সম্প্রতি ৩৫টি কাঁচা ঘর, একটি সীমানা দেয়াল, একটি পাকা ঘরসহ মোট ৩৭টি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। খালটির কিছু অংশে প্রায় মাঝ বরাবর সিটি করপোরেশনের রাস্তা রয়েছে। রাস্তাটি এক পাশে স্থানান্তর করে খালটি পুনর্খনন ও পাড় মেরামতের দাবি জানান স্থানীয়রা।
খালটি পরিষ্কারের জন্য ২০০৭ সালের ঢাকা ওয়াসা দায়িত্ব নিলেও অবস্থা বেহাল। রামচন্দ্রপুর খাল দেখে মনে হবে যেন, ময়লা ফেলার কোনো এক ভাগাড়।
মোহাম্মদিয়া হাউজিংয়ের বাসিন্দা হাসানুজ্জামান বলেন, ‘সব মানুষ ভ্যানে করে ময়লা নিয়ে এসে খালে ফেলেন। খালটি ভালো করে খনন করা দরকার। ওয়াসা মাঝে-মধ্যে দায়সারা খনন করে চলে যায়। কয়েকদিন পরে একই অবস্থা হয়ে যায়। পানিবন্দি অবস্থা থেকে আমাদের বাঁচাতে হলে রামচন্দ্রপুর খালে পানির প্রবাহ বাড়াতে হবে’।