ভোলা জেলার পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়নের মো. ইউসুফের এ তাড়াহুড়ো আর পরিশ্রমের চিত্রটিই বলে দিচ্ছিলো থেমে যাওয়ার পাত্র নন তিনি। তিনদিন আগে উপকূলের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’র আঘাতে তছনছ হওয়া বাড়িঘর ঠিকই মেরামত করে তুলবেন।
উপকূল অঞ্চলের এ সংগ্রামী মানুষটির ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয় চোখে মুখে। হয়তো দিনের মধ্যেই ঘরটি প্রস্তুতও করে ফেলবেন। সংগ্রাম করে কীভাবে বেঁচে থাকতে হয় তারও নির্দশন হয়তো ইউসুফরা রেখে যান প্রতিনিয়ত।
সরেজমিনে ভোলা সদর উপজেলার পশ্চিমা ইলিশা ইউনিয়নে প্রবেশ করতেই ইউসুফের ঘুরে দাঁড়ানোর দৃশ্য ধরা দিলো। এ অঞ্চলের সবাই যে ইউসুফের মতোই সংগ্রামী তার প্রমাণও মিললো রোয়ানু তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত ইউনিয়নটি ঘুরে।
সরেজমিনে ওঠে আসলো রোয়ানু’র আঘাতে সবকিছু নিঃশেষ হয়ে যাওয়া মানুষগুলো ঘুরে দাঁড়ানোর চিত্র। প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই চলছে ভেঙ্গে যাওয়া ঘরটি ফের মেরামতের কাজ। আর বাড়ির আঙিনাজুড়ে পড়ে রয়েছে ভাঙ্গা ঘরের অবশিষ্ট অংশগুলো। এসব দেখলে স্পষ্টই বোঝা যাবে কি পরিমাণ ধকল গেছে এসব এলাকায়।
বাপ্তা ইউনিয়নে সুদুর চর এলাকায় প্রবেশ করতেই দেখা গেলো ঘরের টিনের চাল মেরামত করছেন আসাদুল্লাহ। আলাপকালে তিনি জানালেন, ক্ষতি যা হওয়ার তা তো হয়েছেই। পরিবার নিয়ে তো থাকতে হবে। ঘরের চালের কাজও শেষের দিকে।
সরেজমিনে দেখা যায়, যত দ্রুত সম্ভব থাকার ঘরটি মেরামতে ব্যস্ত সময় পার করছেন ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তরা। রাস্তায় পড়ে আছে ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে যাওয়া গাছগুলো। তবে এখনো অধিকাংশ বাড়ির কাজই মেরামত করা হয়নি।
অনেক এলাকায় গাছের ডালে এখনো ঘরের টিনের চাল আটকে আছে। রাস্তার পাশেও টিনের চাল পড়ে থাকতে দেখা গেছে। বড় বড় গাছগুলোর ডালপালা ভেঙ্গে পড়ে আছে রাস্তায়।
কেউ কেউ ভাঙ্গা ঘরটি মেরামতের আর্থিক খরচ যোগাতে হিমশিম খাচ্ছেন। অনেকেই কোনোমতে ছাউনি তুলে রাত কাটানোর ব্যবস্থা করছেন। আবার অনেকের ঘর এখনো মাটির সঙ্গেই মিশে আছে।
ঝড়ের বর্ণনায় নূর আলম বলেন, শুক্রবার দিনগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে আচমকা ঝড় ওঠে। বাইরে বের হতে হতে অন্য জায়গায় উড়ে যায় ঘরটি। ঘরে থাকা কোনো জিনিসই আর ভালো পাইনি। ছোট ছেলেটাকে বের করতে গিয়ে আঘাতও পেয়েছি।
এলাকাবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেলো, এখনো অনেক গ্রামের মানুষ খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছেন। ঘরে থাকা বিভিন্ন সম্পদ ও খাবারের ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় অনেকেই বিপদের মধ্যে সময় পার করছেন।
দক্ষিণ সুদুরচর এলাকার আলী আহমেদসহ এলাকার একাধিক ব্যক্তি জানালেন, এভাবে একদিনে সবকিছু হারিয়ে ঘুরে দাঁড়ানো তাদের মতো স্বল্পআয়ের মানুষদের জন্য খুবই কঠিন কাজ। সরকারি বা বেসরকারিভাবে সহযোগিতা পেলে তারা আরও দ্রুত ফিরতে পারবেন।
গত শুক্রবার (২০ মে) দিনগত রাত ও শনিবার (২১ মে) উপকূল অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষত এখনো শুকায় নি। বারবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হওয়া এসব মানুষগুলো হয়তো মুহূর্তে ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি প্রকৃতি থেকেই পেয়ে থাকেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এ জেলায় ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু’র কারণে ফসলের জমি ডুবে যাওয়া থেকে শুরু করে সব ধরনের ক্ষতিই হয়েছে। টাকার অঙ্কে যা শত কোটি ছাড়িয়ে যেতে পারে।
ভোলা থেকে: জৈষ্ঠ্যের কড়া রোদ কালো শরীরের ওপর পড়ে চিকচিক করছে। হাতুড়ি দিয়ে সপাত সপাত করে পেরেক গাড়ছেন দরজার কপাটে। দিনের আলো নিভে যাওয়ার আগেই থাকার ঘরটি মেরামত করা চাই-ই।