এগিয়ে গিয়ে এভাবে রাস্তা পার হওয়ার কারণ জানতে চাইলে মুচকি হাসি দিয়ে শিক্ষক ওবায়দুর রহমান বলেন, ‘জানি এভাবে পার হওয়া উচিত হয়নি, ঝুঁকি ছিলো। তবে খুব তাড়া থাকার কারণে এভাবে রাস্তা পার হয়েছি’।
কারওয়ানবাজার মোড়ে ১৫ মিনিটে দাঁড়াতেই ১৫-২০ জনকে মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে বা গান শুনতে শুনতে ঝুঁকিপূর্ণভাবে গাড়ির সামনে দিয়ে রাস্তা পার হতে দেখা গেছে।
এভাবেই মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে, ফেসবুক চালিয়ে, এয়ারফোন কানে দিয়ে গান শুনতে শুনতে প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছেন অসংখ্য পথচারী। অসর্তকভাবে এ রাস্তা পারাপারের কারণে গত কয়েক বছরে সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়ে গেছে।
এমন চিত্র রাজধানীর নীলক্ষেত নিউমার্কেট মোড়েও দেখা গেছে। মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে তিন লাফে চলন্ত গাড়ির সামনে দিয়ে রাস্তা পার হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রিফাত।
তার কাছে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হওয়ার কারণ জানতে চাইলে ব্যস্ততা আছে বলে জানিয়ে চলে যান রিফাত।
বিহঙ্গ পরিবহনের গাড়িচালক রফিক বলেন, ‘আপনারা দেখেন, এভাবে রাস্তা পার হবে। আর অ্যাকসিডেন্ট হলে যত দোষ সব আমাদের। এরপর গাড়ি ভাঙবে, গাড়ি পোড়াবে। নিজেরা যে বেকুবের মতো চলাচল করে তাতে দোষ নাই’।
নগরবাসীর এভাবে ঝুঁকি রাস্তা পার হওয়া বন্ধে ট্রাফিকের কোনো করণীয় কি সে সস্পর্কে কারওয়ানবাজার মোড়ে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ আশরাফ বলেন, ‘আমরা গাড়ি পার করাতেই সময় পাই না। আর মানুষ কখন কিভাবে পার হচ্ছেন, তা দেখবো কি করে? তাদের নিজেদের জীবনের মূল্য তারা না বুঝলে কিভাবে বোঝাবো? নিজেদেরকেই আগে সচেতন হতে হবে। এরপরও আমরা অনেককেই হাত ধরে রাস্তা পার করিয়ে দেই’।
এভাবে রাস্তা পার হলে কোনো শাস্তির ব্যবস্থা আছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা সাধারণ গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে থাকি। ট্রাফিক আইন না মানলে শাস্তি দেই। তবে কয়েকদিন পর পর ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চলে’।
ঝুঁকি নিয়ে কেউ রাস্তা পার হলে তাদের জরিমানা ও কান ধরে ওঠ-বস করানো হয় বলেও জানান আশরাফ।
নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)- এর জরিপে জানা গেছে, অদক্ষ চালক, ট্রাফিক অব্যবস্থাপনা ও জনগণের অসচেতনতার কারণে গত বছর সারাদেশে ২ হাজার ৬২৬টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর আগের বছর দুর্ঘটনার এ সংখ্যা ছিলো ২ হাজার ৭১৩টি।
সড়ক দুর্ঘটনা রোধে জনগণের নিজের সচেতনতা খুব প্রয়োজন বলে জানান নিসচা'র চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন।
তিনি বলেন, ‘মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে রাস্তা পার হওয়া অবিবেচকের কর্মকাণ্ড। এসব বন্ধ করতে হলে জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। আমরা স্কুল-কলেজে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধি করার চেষ্টা করছি’।
‘সচেতনতার বৃদ্ধির জন্য পরিবারকেও দায়িত্ব নিতে হবে। আমরা সচেতন না হলে এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ কর্মকাণ্ড ট্রাফিক পুলিশ ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে বন্ধ করা যাবে না। নিজের জীবন কতোটা মূল্যবান এটা আমাদের বুঝতে হবে’।
ঢাকা: রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা কারওয়ানবাজার মোড়ে মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে হন্তদন্ত হয়ে রাস্তা পার হচ্ছিলেন পাঞ্জাবিপরা এক ব্যক্তি। দেখে মনে হল, রাজ্যের কাছ ফেলে এসেছেন! কিন্তু রাস্তা পার হওয়ার পর তেমনটি মনে হলো না। এপারে এসে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে পড়লেন তিনি।