
ঢাকা: বিকেল সোয়া ৪টা। বাংলাদেশের নারী সাংবাদিকতার পথিকৃৎ সদ্য প্রয়াত বেগম নূরজাহানকে শহীদ মিনারে তখন ফুল হাতে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন সারি সারি মাযেখানটাতে এই মহিয়সীর মরদেহ রাখা হয়, ঠিক তার পেছনে পর্দার আড়ালে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিলেন এক তরুণী। তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে আসা শহীদ মিনার এলাকার প্রত্যেকের চোখেই ছিল এক অব্যক্ত কান্না। প্রকাশ্যে কাঁদছিলেন নূরজাহান কন্যারাও। কিন্তু ওই তরুণীর কান্নার ধরণই বলে দিচ্ছিল– এ যেন অন্য কিছু! এখানে যেন অন্য এক ভালোবাসা লুকিয়ে!
কাছে গিয়ে দেখা গেলো- কাঁদতে কাঁদতে শরীরও দুর্বল হয়ে পড়েছে ওই তরুণীর। এমন অবস্থায় প্রশ্ন করাটা বিব্রতকর বৈকি! তার পরিচয় জানতে তাই একটু অপেক্ষা। ফল মিললো মিনিটেই। তাকে শান্ত করতে আসা আরেক নারী জানালেন- তিনি আর কেউ নন, নূরজাহান বেগমের কলিজার টুকরা নাতনি প্রিয়তা; ছোট মেয়ে রিনা ইয়াসমিনের কন্যা। নানীর অসুস্থতার খবরে দিল্লির একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ছাত্রী কদিন আগেই দেশে ফিরেছেন।
জানা গেলো, গর্বিত এই নাতনী প্রিয়তি তার নানীকে নিয়ে একটি তথ্যচিত্র বা ডকুমেন্টারির কাজে হাত দিয়েছিলেন। তার কাজও শেষ হয়ে এসেছে।
তিনি কান্না মিশ্রিত গলাতেই বাংলানিউজকে বললেন, ‘আগামী ৪ জুন সবার প্রিয় নূরজাহান বেগম ও আমার নানীর জন্মদিন। সেদিনের উপহার হিসেবে তাকে সেটি (ডকুমেন্টারি) দেখাবো বলে গত কয়েকটা রাত জেগে জেগে সেটার কাজই শেষ করেছি। কিন্তু তিনি চলে গেলেন। আমি কাকে দেখাবো আমার সে ডকুমেন্টারি’।
প্রিয়তাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছিল- নানীর মৃত্যুর শোকে বিহ্বল হয়ে পড়েছেন তিনি।
কাঁদতে-কাঁদতে ক্লান্ত হয়ে পড়া নূরজাহান নাতনিকে কয়েকজন ধরে অন্যদিকে নিয়ে যেতে চাইলেন। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই যে চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন ‘বেগম’ সম্পাদক। তার পাশ থেকে কোনোভাবেই যেতে না চাওয়ারই কথা।
স্বাভাবিকভাবেই ডকুমেন্টারি সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন তৈরি হয়। তিনি সেটি আন্দাজ করেই বললেন, ‘নানীকে দেখাতে পারিনি। কিন্তু তার কথা আপনাদের বলবো, আপনাদের দেখাবো। কিন্তু আজ না। আপনারা আমাদের বাড়িতে আসুন, নানীর মিলাদে শরিক হোন। সেখানে সবকিছু নিয়ে কথা বলবো’।
এই বলে- আবারও কান্নায় ভেঙে পড়লেন প্রিয়তা। একজন আত্মীয়ের কাঁধে ভর দিয়ে একটু দূরে চলে যান। তারপর উঠেন গাড়িতে।
এদিকে, প্রায় এক ঘণ্টার শ্রদ্ধা নিবেদন পর্ব শেষ হতেই প্রিয়তার প্রিয় নানী নূরজাহান বেগমকেও তোলা হয় একটি গাড়িতে। তবে প্রিয়তা ও নানীর গাড়ি ভিন্ন ছিল। চিরদিনের মতো বন্ধন ছিঁড়ে মরদেহবাহী গাড়িতে প্রিয়তার প্রিয় মুখ। যাকে আর কখনই দেখানো যাবে না, যত্নে তৈরি প্রিয়তার ডকুমেন্টারি…।