১৯৪৬ সালে এই পৈত্রিক বাড়িতে এসে ওঠেন বেগম পত্রিকার সম্পাদক নূরজাহান বেগম। এখান থেকেই তার বাবা নাসিরউদ্দিন সম্পাদনা করতেন সওগাত পত্রিকা। নারিন্দার এই বাসায় আনাগোনা ছিল কাজী নজরুল ইসলামসহ সে সময়কার খ্যাতনামা সব কবি-সাহিত্যিকদের।
নাসিরউদ্দিন স্মৃতি ভবনটি এখন পুরনো, খসে পড়ছে পলেস্তারা। কাঠের জানালা-দরজায় ঘুণ ধরে বেশ নড়বড়ে। দোতলার ছাদ এখনও সিলিংয়ের। মেঝে থেকে বেশ উচ্চতায় এখানকার ছাদ। এই দোতলার মাঝের রুমটিতেই থাকতেন নূরজাহান বেগম। তার স্বামী রোকনুজ্জামান খান দাদা ভাইও থাকতেন এই ভবনেই।
নূরজাহান বেগমকে শেষবারের মতো দেখতে এই বাড়িতে ভিড় করেছেন এলাকাবাসী। স্মৃতির পাতাও আওড়াচ্ছেন অনেকেই। নূরজাহান বেগমের রুমটি বেশ পরিপাটি ও গোছানো। বাবা, স্বামী ও সন্তানের স্মৃতি চিহ্ন দিয়ে সাজানো রুমটি। রুমে আরও সাজানো রয়েছে বাবা নাসিরউদ্দিনের স্বাধীনতা পদক, জন্মশতবর্ষের মানপত্র, ১৯৮৮ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মিজানুর রহমান চৌধুরীর দেওয়া শ্রদ্ধাঞ্জলি, দুই মেয়ে আর স্বামীর সঙ্গের ছবি, কাজী নজরুল ইসলামের ছবি, নিজের তিনটি পোট্রেইট ও বারান্দায় একটি হুইল চেয়ার।
নূরজাহান বেগমের জীবনী লিখেছেন অধ্যাপক কাজী মদিনা। তিনি নারিন্দার বাসায় বলেন, ‘তিনি (নূরজাহান) সনাতন ঐতিহ্যবাহী মানুষ ছিলেন। অনেকেই বলেছিলেন এই বাড়িটিকে অাধুনিক করতে। কিন্তু তিনি বলতেন, এ বাসাকে থাকার উপযোগী করে রেখেছি, অার দরকার নেই। তাই এভাবেই রাখা হয়েছে ভবনটি।’
দীর্ঘ ৭০ বছর পর নারিন্দার নাসিরউদ্দিন স্মৃতি ভবন থেকে শেষবারের মতো বেরিয়ে গেলেন বেগমের সম্পাদক নূরজাহান বেগম। সোমবার বিকেল পৌনে ৪টার দিকে তার মরদেহ নিয়ে অাসা হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সেখানে ৫টা পর্যন্ত স্বজন-শুভানুধ্যায়ী-সহকর্মীরা ফুলেল শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ পান। পর্যায়ক্রমে সব আনুষ্ঠানিতা শেষে তাকে পৃথিবী থেকে বিদায় জানানো হবে। তারপর তিনি বহুকাল বেঁচে থাকবেন মানুষের হৃদয়ের গভীর ভালোবাসায়।











