ময়মনসিংহ: উদ্ভট নামের ‘ইশশশ্’ ক্লাসে চটকদার বক্তব্যে ময়মনসিংহের শিক্ষার্থীদের ‘মগজ ধোলাই’র চেষ্টা করলেন নানা কারণে সমালোচিত ও বিতর্কিত সাইফুরস কোচিং সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুর রহমান খান।
দেশের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে খিস্তিখেউর আর বিষোদাগার করে ইংরেজি গ্রামার শিখতেও শিক্ষার্থীদের তিনি নিরুৎসাহিত করেন।
শনিবার (২১ মে) সকালে ও বিকেলে দু’ধাপে নগরীর একটি কমিউনিটি সেন্টারে লোভনীয় ছাড়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে চতুরভাবে এ ক্লাস নেন সাইফুরস প্রধান ও স্বঘোষিত ‘ইংরেজির জাহাজ’ সাইফুর রহমান।
ফলে, ক্লাস শেষ হবার পর অনেক শিক্ষার্থীই হোঁচট খেয়েছেন। ইনিয়ে-বিনিয়ে, ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার এ ফন্দিফিকিরে ক্ষুব্ধ অভিভাবকরাও।
সাইফুরস’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুর রহমান খান প্রথমেই গ্রামার ছাড়া শিক্ষার্থীদের ইংরেজি শেখানোর বয়ান দেন। মাত্র ২০ মিনিটে ইংরেজি শেখানোর ধারণা পাল্টে দেওয়ার কথা বলে শিক্ষার্থীদের হাতে একটি ফর্ম তুলে দেন। ওই ফর্মের নাম দেওয়া হয় ‘ইংরেজির ক্যান্সার নির্ণয়ের ডায়াগনস্টিক টেস্ট।’
নিজের কোচিং সেন্টারকে তিনি ক্যারিয়ার গড়ার হাসপাতাল হিসেবেও আখ্যা দেন। ওই ফর্ম দিয়ে আপত্তিকর বাক্য প্রয়োগও করেন। বলেন, ‘যার যার ১৪ গোষ্ঠী উদ্ধার করতে নেমে পড়ো।’ 
দেশে ইংরেজি শেখার পদ্ধতি ও শিক্ষকদের কঠোর সমালোচনায় মুখর ছিলেন গোটা ক্লাসেই। শিক্ষার্থীদের পণ্যে পরিণত করতে পটু সাইফুরস প্রধান প্রজেক্টরে দেখান ‘গ্রামার পড়িতে পড়িতে জীবন কেটে যায় ইংরেজি আর শেখা হয় না।’
বলেন, পুরো বাংলাদেশেই ইংরেজি পড়াশোনায় গণ্ডগোল! দেশের ইংরেজি শিক্ষকরা ক্লাসে শিক্ষার্থীদের ইংরেজির অর্থ বুঝিয়ে পড়ান না। দাবি করেন, দেশের অনেক ইংরেজি শিক্ষকদেরও তিনি নিজেই পড়ান!
চটকদার এসব বয়ানের পর বাণিজ্যিক কৌশলের পথে হাঁটতে থাকেন সাইফুর রহমান খান। ইংরেজি বাক্যের বাংলা অর্থ বোঝানোই আসল ব্যাপার বলতে বলতে তিনি নিজের কোচিং সেন্টার থেকে প্রকাশিত উদ্ভট নামে S@ifur’s English= পানি, S@ifur’s Newest গ্রামার = পানি, Zero থেকে Hero, Passport to Grammar. বই কেনারও প্রচারণা চালান।
সাইফুরস প্রধানের চালবাজি ও চটকদার বক্তব্যের বিষয়ে নাম প্রকাশে আপত্তি জানিয়ে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘স্যার আমাদের গ্রামার পড়তে নিরুৎসাতি করেছেন। শিক্ষকদের নিয়েও সমালোচনা করেছেন। স্যারের কথাবার্তায় মনে হলো তিনিই আমাদের চাকরি দেবেন। তার এ বাণিজ্যিক স্টাইল তো নতুন নয়।’
দেশের ইংরেজি শিক্ষকদের তাচ্ছিল্য করে সাইফুরস প্রধানের বক্তব্যে বেজায় চটেছেন শিক্ষকরাও। ময়মনসিংহের বেসরকারি একটি কলেজের এক শিক্ষক বলেন, সাইফুরস প্রধানের বক্তব্য শিক্ষকদের জন্য অবমাননাকর।
শিক্ষকদের প্রতি তার শ্রদ্ধা রাখা উচিত। তাদের শিক্ষা বাণিজ্যর খবর সাধারণ মানুষের মুখে মুখে উচ্চারিত হচ্ছে।
এদিকে, এ দু’টি ক্লাসের আগেই শিক্ষার্থীদের হাতে একটি লিফলেটও তুলে দেন সাইফুরস কর্তৃপক্ষ। সেখানে চাকরির শতভাগ গ্যারান্টি ও কয়েক শিক্ষার্থীর ACCA করার ফিরিস্তি তুলে ধরা নতুন করে শিক্ষার্থীদের ফাঁদে ফেলারও অপকৌশলের নামান্তর বলেই মনে করেন অনেকেই।
এ দু’ধাপে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নিয়েও মিথ্যার আশ্রয় নেয় সংশ্লিষ্ট কোচিং সেন্টারের কর্তা ব্যক্তিরা। ময়মনসিংহ ব্রাঞ্চের এক কর্মকর্তা এ দু’টি ক্লাসে ২ হাজার শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ছিল বলে দাবি করেন।
কিন্তু একই বিষয়ে সাইফুরস কোচিং সেন্টারের ময়মনসিংহ ব্রাঞ্চের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার হাবিবুর রহমান হাবিব বাংলানিউজকে বলেন, দু’টি ক্লাসে এক হাজারের মতো শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছে।
দেশের শিক্ষা পদ্ধতি ও শিক্ষকদের নিয়ে সাইফুরস প্রধানের বিষোদাগারের বিষয়ে ময়মনসিংহ জেলা শিক্ষা অফিসার রফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ‘শিক্ষকদের নিয়ে তিনি উল্টাপাল্টা কথা বলতে পারেন না। তিনি যত বড় লোকই হোন তাকে ছাড় দেওয়া হবে না। তার বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’