রবিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০১ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
বাংলাদেশের রিজার্ভ বৃদ্ধিকে আইএমএফের প্রশংসা চব্বিশের জুলাই আন্দোলনের প্রত্যেকটি শহীদের ঘটনা তুলে আনতে হবে : চিফ প্রসিকিউটর বিমানবন্দরে অগ্নিকাণ্ডের তদন্ত করবে ৪ দেশের বিশেষজ্ঞরা : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জুলাই সনদের আলোকে রাষ্ট্র সংস্কারে অঙ্গীকারবদ্ধ সরকার: আদিলুর গুম প্রতিরোধে শুধু আইনগত নয়, প্রয়োজন প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার : ড. আসিফ নজরুল শাহবাগে এনসিপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ হঠকারিতার সুযোগ নেই, ফেব্রুয়ারির সুষ্ঠু নির্বাচনই সরকারের মুক্তি: সাইফুল হক ‘সংস্কার দিয়ে জনগণের হাতে ক্ষমতা আসবে না’ শান্তি ও সহযোগিতার বিশ্ব গড়তে জাতিসংঘকে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে : অধ্যাপক ইউনূস কারা এনসিপিতে আসতে পারবে না, জানালেন সারজিস

আমবাগান বস্তিতে স্বপ্ন পুড়ে ছাই

রিপোর্টার নাম
  • আপডেট সময় : 4:05 pm, বৃহস্পতিবার, ৫ মে, ২০১৬

আনোয়ারা বেগমের (৫০) স্বামী মারা গেছেন আগেই। তিনি ছেলেদের বিভিন্ন মেসে রান্নার কাজ করেন। ছেলে কাজ করেন পোশাক কারখানায়। মা-ছেলে থাকেন রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজার এলাকার আমবাগান বস্তিতে। তাদের রোজগারের টাকা একটু একটু করে জমিয়ে ৭০ হাজার টাকা রেখেছিলেন ট্রাঙ্কের ভেতর। কিছুদিনের মধ্যে ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট করে এই টাকা জমাতেও চেয়েছিলেন তিনি। স্বপ্ন ছিল আরো কিছু টাকা জমলে এই শহর ছেড়ে গ্রামে ফিরে যাবেন। একখ- জমি কিনে সেখানেই কাটিয়ে দেবেন বাকিটা জীবন। কিন্তু তার সেই স্বপ্ন পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
বুধবার সকালে রাজধানীর আমবাগান বস্তিতে আগুন লাগার ঘটনায় এ ঘটনা ঘটে। ঘর থেকে কিছুই বের করতে পারেননি আনোয়ারা। বস্তিতে প্রবেশের মুখে তিনি যখন বিলাপ করছিলেন, তখন তাদের এক প্রতিবেশী তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন। কিন্তু তার আজকের এই আহাজারি কিছুতেই যেন থামার নয়। বিলাপ করতে করতে বলছিলেন, ‘আমাগো কষ্টের ট্যাকা, রক্ত পানি করা ট্যাকা সব পুইড়া ছাই হইয়া গেল গো…!’

image_1537_235653

এই বস্তিতে থাকা ঠাকুরগাঁওয়ের রুনা বেগমও রান্নার কাজ করেন বিভিন্ন মেসে। স্বামী আলেত আলী রিকশা চালান। আগুন লাগার পর তিন বছরের ছেলে আর চার বছরের মেয়েকে কোলে নিয়ে কোনো রকমে ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন তিনি। ঘরে থাকা জমানো ১৫ হাজার টাকাসহ সবকিছুই আগুনে পুড়ে গেছে। কাঁদতে কাঁদতে রুনা বলছিলেন, ‘তিল তিল করে সংসার গোছাইছি। ঈদের জন্য টাকা জমাইছিলাম। সব পুইড়্যা গেল। কিছু সঙ্গে আইনতে পারলাম না।’
ফায়ার সার্ভিস ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, গতকাল সকাল আটটার দিকে রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারের কাছে আমবাগান বস্তিতে আগুন লাগে। আগুনে অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি পুড়ে গেছে। তবে কেউ হতাহত হয়নি। আগুন লাগার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে। এ কাজে স্থানীয় লোকজনও অংশ নেয়। প্রায় এক ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই বস্তি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের জন্য বরাদ্দ থাকলেও ওই কর্মচারীদের অনেকে এসব ঘর ভাড়া দিয়ে রেখেছেন। সেখানে নিম্ন আয়ের লোক, রিকশাচালক ও পোশাক কারখানার শ্রমিকরা থাকতেন।
আমবাগান আবাসিক কলোনি সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল কালাম আজাদ বলেন, এখানে প্রায় ৫৫ থেকে ৬০টি ঘর পুড়ে গেছে। ঘর ভাড়া দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কেউ ঘর ভাড়া দেয়নি।
ঘটনাস্থলে থাকা ফায়ার সার্ভিসের জোন-৩-এর উপসহকারী পরিচালক মামুন মাহমুদ বলেন, আগুন লাগার কারণ জানা যায়নি। ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমবাগান বস্তিতে আগুন লাগলে পান্থপথ থেকে ফার্মগেট যাওয়ার সড়ক বন্ধ করে দেয়া হয়। এতে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। দুর্ভোগ পোহায় পরে সাধারণ মানুষ।
আগুন নিভে যাওয়ার পর নিজের পোড়া ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে ডুকরে কাঁদছিলেন মালতী প্রসাদ। ৩০ বছর ধরে আমতলি বস্তিতে থাকেন তারা। দুই মাস আগে তার স্বামী বাবুল প্রসাদের অস্ত্রোপচার হয়েছে। আগুন লাগার পর অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে বেরিয়ে গেছেন তিনি। সঙ্গে কিছুই নিতে পারেননি। আগুন নেভার পর পোড়া বাড়ির সামনে নিজ হাতে লাগানো পুড়ে যাওয়া পেয়ারা গাছ ধরে কাঁদছিলেন আর বলছিলেন, ‘ধার কইরা স্বামীর চিকিৎসা করাইলাম। ঘরটাও পুড়ল। এখন কীভাবে বাঁচমু। কোথায় থাকমু …?’

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই রকম আরো জনপ্রিয় সংবাদ
© All rights reserved © 2017 Cninews24.Com
Design & Development BY Hostitbd.Com