মেট্রো রেলের পিলার থেকে বিয়ারিং প্যাড পড়ে যাওয়ার ঘটনায় উত্তরা-মতিঝিল রুটে দীর্ঘ ২৩ ঘণ্টা বন্ধ ছিল ট্রেন চলাচল। ফলে সড়কে চাপ পড়ে যাত্রীদের। আজ সোমবার বেলা ১১টার দিকে মেট্রো রেল চলাচল স্বাভাবিক হলেও সড়কে যাত্রীদের চাপ কমেনি। এতে করে ঢাকার সড়কগুলোতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
উত্তরা, মিরপুর, আগারগাঁও, ফার্মগেট, শাহবাগ, মতিঝিল, বনানী ও তেজগাঁও এলাকায় সকাল ৮টার পর থেকেই যানজট শুরু হয়। অফিসগামী ও শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েন। অনেকে বাস বা রিকশা না পেয়ে হেঁটে গন্তব্যে রওনা হন। যানজটের কারণে ফার্মগেট থেকে শাহবাগ পর্যন্ত দুই কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে লেগেছে প্রায় এক ঘণ্টা।
স্কুলের সময় হওয়ায় শিক্ষার্থীরাও পড়েন বিপাকে। অনেক অভিভাবক সন্তানদের সঙ্গে হেঁটে যান স্কুলে। রাস্তায় অতিরিক্ত যানবাহনের কারণে সিএনজি, রিকশা ও বাসে ভাড়া বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। সাধারণ সময়ের তুলনায় রিকশা ও অটোরিকশার ভাড়া প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। বাসেও অতিরিক্ত ভিড় দেখা গেছে।
ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মেট্রো রেল বন্ধের কারণে সড়কে যানবাহনের চাপ বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। সকালে অফিসগামী মানুষের ভিড় শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সিগন্যাল পয়েন্টগুলোতে যানজট তীব্র হয়ে ওঠে। ট্রাফিক পুলিশ বাড়তি দায়িত্ব পালন করলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি। শাহবাগ, প্রেসক্লাব, বিজয় সরণী, বাংলামোটর ও মতিঝিল এলাকায় যানজটের প্রভাব ছিল সবচেয়ে বেশি।
মেট্রো রেলে চড়ে মিরপুর-১০ থেকে সচিবালয় এলাকায় অফিস করেন তাজরীন আফরিন। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন মেট্রোতে ৩০ মিনিটে অফিসে পৌঁছাতাম। আজ মেট্রো বন্ধ থাকায় বাসে উঠেছি, কিন্তু ঘণ্টাখানেকেও ফার্মগেট পার হতে পারিনি। রাস্তায় সব গাড়িই দাঁড়িয়ে আছে।’
অফিসগামী আরো এক কর্মকর্তা বলেন, ‘যানজটের কারণে শুধু সময় নষ্টই নয়, ভাড়াও বেড়ে গেছে। রিকশা ও অটোরিকশা চালকরা সুযোগ বুঝে বাড়তি ভাড়া নিচ্ছেন। উত্তরা থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত যেখানে মেট্রোতে ভাড়া ছিল ৪০ টাকা, সেখানে এখন অন্য যানবাহনে আসার কারণে ভাড়া দিতে হচ্ছে তিন থেকে চার গুণ। আবার রিকশায় সাধারণ ৩০ টাকার পথে চাওয়া হচ্ছে ৮০-৯০ টাকা পর্যন্ত।’
উত্তরার আজমপুর থেকে শুরু করে মতিঝিল পর্যন্ত পুরো রাস্তায় গাড়ির সারি লেগে থাকে। ট্রাফিক সদস্যদের বাড়তি ডিউটি দেওয়া হলেও যান চলাচল স্বাভাবিক করা সম্ভব হয়নি।
উল্লেখ্য, গতকাল রবিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ফার্মগেটে মেট্রোরেলের একটি পিলার থেকে বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে এক পথচারীর মৃত্যু হয়। দুর্ঘটনার পর ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) সতর্কতামূলকভাবে মেট্রো রেল চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে। পরে উত্তরা থেকে আগারগাঁও ও শাহবাগ থেকে মতিঝিল অংশে সীমিত আকারে ট্রেন চললেও উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত সম্পূর্ণ রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে। সারা রাত মেরামতের কাজ শেষে আজ বেলা ১১টার পর থেকে পুরো অংশে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।