দেশজুড়ে মুষলধারে বৃষ্টিপাতের ফলে সৃষ্ট বন্যায় চলতি সপ্তাহে মেক্সিকোতে কমপক্ষে ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ গতকাল শুক্রবার একথা জানিয়েছে।
মেক্সিকোর বেসামরিক প্রতিরক্ষা কর্তৃপক্ষ ৩২টি রাজ্যের মধ্যে ৩১টিতে প্রবল বৃষ্টিপাতের খবর দিয়েছে। যার ফলে নদীগুলোর বিপদ সীমার দিয়ে উপচে পড়ে পুরো গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। প্রবল বষণের ফলে সৃষ্ট বন্যায় ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে এবং রাস্তাঘাট ও সেতু ভেঙে পড়েছে।
মেক্সিকোর তুলানসিঙ্গো দে ব্রাভো থেকে এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
মেক্সিকোর মধ্যাঞ্চলীয় রাজ্য হিডালগোতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই রাজ্যে কমপক্ষে ১৬ জন নিহত, ১ হাজার বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত এবং ৯০টি সম্প্রদায়ের কাছে এখনো উদ্ধারকারীরা পৌঁছাতে পারেনি।
পার্শ্ববর্তী পুয়েবলা রাজ্যের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সেখানে কমপক্ষে ৯ জন মারা গেছেন। তবে আরো নিখোঁজ থাকায় মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে।
রাজ্য সরকার জানিয়েছে, শুধুমাত্র পুয়েবলাতেই তীব্র আবহাওয়ার কারণে প্রায় ৮০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বন্যায় পূর্ব ভেরাক্রুজে দুইজন এবং কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত কুয়েরেতারোতে একজন নিহত হয়েছেন।
স্থানীয় কর্মকর্তা এবং তার মন্ত্রিসভার সদস্যদের সাথে বৈঠকের পর প্রেসিডেন্ট ক্লদিয়া শেইনবাউম এক্স-এ এক পোস্টে লিখেছেন, ‘আমরা জনসাধারণকে সহায়তা করার জন্য রাস্তাঘাট পুনরায় চালু এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ ফিরিয়ে আনার লক্ষে কাজ করছি’।
তিনি আরো বলেছেন, উদ্ধার প্রচেষ্টায় সহায়তা করার জন্য হাজার হাজার সৈন্য, সেইসাথে নৌকা, বিমান এবং হেলিকপ্টার মোতায়েন করা হয়েছে।
নাগরিক প্রতিরক্ষার জাতীয় সমন্বয়কারী লরা ভেলাজকুয়েজ বলেছেন, ক্ষতিগ্রস্ত রাজ্যগুলোতে ভূমিধস, উপচে পড়া নদীর পানি এবং রাস্তা ধসের ঘটনা ঘটেছে।
সেনাবাহিনী ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় সাহায্য বিতরণে সহায়তা করবে। উদ্ধার সরঞ্জাম এবং যানবাহনসহ ৫ হাজার ৪শ’ জনেরও বেশি সৈন্য মোতায়েন করা হয়েছে।
তাদের বাড়িঘর থেকে বাস্তুচ্যুতদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
প্রধান দুর্যোগপূর্ণ এলাকা ছিল মেক্সিকো উপসাগরের উপকূলের সমান্তরালে অবস্থিত একটি পর্বতমালা সিয়েরা মাদ্রে ওরিয়েন্টাল।
এটি ছোট ছোট সম্প্রদায় দ্বারা পরিপূর্ণ। যার মধ্যে অনেকগুলো সম্প্রদায় শুক্রবার অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছিল।
হিডালগো রাজ্যের একটি শহর তুলানসিঙ্গোতে এএফপি’র একটি দল অনেক পাহাড়ি গ্রামের প্রধান প্রবেশপথ, ভূমিধস এবং ধসের কারণে সিয়েরা মাদ্রে ওরিয়েন্টালের দিকে যাওয়ার রাস্তাগুলো বন্ধ দেখতে পেয়েছেন।
মেক্সিকো ২০২৫ সাল জুড়ে বিশেষ করে ভারী বৃষ্টিপাতের কবলে পড়েছে। রাজধানী মেক্সিকো সিটিতে বৃষ্টিপাতের রেকর্ড গড়েছে।
আবহাওয়াবিদ ইসিদ্রো ক্যানো এএফপি’কে বলেছেন, বৃহস্পতিবার থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণ ঋতু পরিবর্তন এবং মেঘ গঠন। কারণ, মেক্সিকো উপসাগর থেকে উষ্ণ-আর্দ্র বাতাস পাহাড়ের চূড়ায় উঠে আসে।
বিশেষজ্ঞরা আরো বলেছেন, উত্তর দিক থেকে আসা ঠান্ডা বাতাস দেশের বেশিরভাগ অংশে বৃষ্টিপাত বাড়িয়েছে।
প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলের কাছাকাছি অঞ্চলের কর্তৃপক্ষ গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঝড় রেমন্ড এবং প্রিসিলার ওপর কড়া নজর রাখছে, যা ক্যাটাগরি ২ হারিকেন থেকে হ্রাস পেয়েছে।
দু’টি ঝড়ই বর্তমানে উপকূল থেকে অনেক দূরে অবস্থিত, কিন্তু মেক্সিকোর পশ্চিমে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে চিয়াপাস, গুয়েরেরো, ওহাকা এবং মিচোয়াকান রাজ্যে ক্ষতি হচ্ছে।
মার্কিন জাতীয় হারিকেন কেন্দ্রের মতে, রেমন্ড সপ্তাহান্তে বাজা ক্যালিফোর্নিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে আঘাত হানবে বলে আশা করা হচ্ছে। রোববারের মধ্যে এটি দুর্বল হয়ে গ্রীষ্মমন্ডলীয় নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।