সম্প্রতি ময়মনসিংহ ও নারায়ণগঞ্জ থেকে র্যাবের হাতে গ্রেফতার হওয়া মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র সংগঠন ‘আরাকান রোহিঙ্গা সলভেশন আর্মি’ বা আরসা’র প্রধান আতাউল্লাহ জুনুনি সহ ১০ জনের মধ্যে অন্তত ১ জন বাংলাদেশী, যার নাম মনিরুজ্জামান (২৪)। তিনি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলাধীন উচাখিলা ইউনিয়নের চরআলগী গ্রামের আতিকুল ইসলামের ছেলে। নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার ৬ জনের ১ জন মনিরুজ্জামান। তিনি যে ভবনে ছিলেন, সেই ভবন থেকেই গ্রেফতার হন আরসা-র প্রধান আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনি। পুলিশের দাবী, আরসা সদস্যদের বাংলাদেশে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতে সহযোগিতা করতেন মনির।
মনিরুজ্জামানের পিতা আতিকুল ইসলাম একই উপজেলার তারুন্দিয়া ইউনিয়নের কোনাপাড়া গ্রামে একটি কওমি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন। ৪ ভাই ও ৩ বোনের মাঝে মনিরুজ্জামান সবার বড়। কওমি মাদ্রাসা থেকে ২০১৬ সালে হেফজ সম্পন্ন করে আলেম হওয়ার উদ্দেশ্যে নরসিংদীর একটি মাদ্রাসায় ভর্তি হন তিনি। করোনা মহামারীর সময়ে তাঁর পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। পরে ঢাকায় একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা শুরু করেন। গাজীপুরের টঙ্গীর একটি মাদ্রাসাতেও তিনি চাকরি করতেন বলে জানিয়েছেন তাঁর স্বজনেরা।
মনিরুজ্জামানের ছোট ভাই মুত্তাকীন হাসান বলেন, মনির তাঁর আপন বড় ভাই। তিনি মাঝেমধ্যে বাড়িতে বেড়াতে আসতেন। রোজা শুরুর এক দিন আগে বাজার-সদাই নিয়ে তিনি বাড়িতে এসেছিলেন। এক রাত থেকে আবার চলে যান। তিনি (মনির) টঙ্গীতে একটি মাদ্রাসায় চাকরি করতেন। ময়মনসিংহেও থাকতেন বলে শুনেছেন। তবে ময়মনসিংহে কী কাজ করতেন, তা তিনি জানেন না।
মনিরুজ্জামানের প্রতিবেশী শহীদুল ইসলাম বলেন, চলাফেরায় ও আচার-আচরণে মনে হতো মনির খুব সহজ-সরল। তবে রোহিঙ্গা নেতাদের সাথে মনিরের গ্রেপ্তারের খবর শুনে তারা অবাক হয়েছেন।
ময়মনসিংহ শহরের নতুন বাজার মোড়ে অবস্থিত গার্ডেন সিটি ভবন থেকে গ্রেপ্তার হওয়া আরসা সদস্যরা যে ফ্ল্যাটটিতে বসবাস করছিলেন, সেটি ভাড়া নিয়েছিলেন মনিরুজ্জামান। তাঁর জাতীয় পরিচয়পত্রের একটি কপি বাসা ভাড়া নেওয়ার সময় জমা দেওয়া হয়েছিল।
ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার অফিসার-ইন-চার্জ (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম খান জানান, গ্রেফতারকৃত রোহিঙ্গা নেতাদের জন্য ময়মনসিংহ শহরের বাসাটি মনিরুজ্জামান ভাড়া নিয়েছিলেন। তবে তিনি গ্রেপ্তার হয়েছেন নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের বাসা থেকে। তাঁরা ধারণা করছেন, আরসা সদস্যরা মনিরের মাধ্যমেই বাংলাদেশে বাসা ভাড়া নিয়ে অবস্থান করতেন।
ঈশ্বরগঞ্জ থানার ওসি ওবায়দুর রহমান জানান, মনিরুজ্জামান এলাকায় বেশি আসতেন না। তার সম্পর্কে এলাকার মানুষও তেমন কিছু জানেন না। তদন্ত কর্মকর্তাদের চাহিদার ভিত্তিতে ঈশ্বরগঞ্জ থানা পুলিশ তাঁর সম্পর্কে প্রয়োজনীয় অনুসন্ধান করবে।