বন্যা মৌসুমে চার দিকে পানি থৈথৈ, ভাঙ্গনে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায় বাসস্থান থেকে শুরু করে ফসলি জমি। ড্রেজিং এর অভাবে শুষ্ক মৌসুমে তিস্তা নদীতে যখন চর জেগে উঠে সেই বালুচর আর অভিশাপ মনে হয় না। এখন রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার ইউনিয়ন আর ১টি পৌরসভার ছোট বড় মিলে ১৮টি চরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এখন সবুজের সমারোহ। বালুচর জমিগুলোর ফসলের সবুজ পাতাগুলো যেন সমুদ্রের ছোট ছোট ঢেউয়ের মতো দোল খাচ্ছে। আর এমন সবুজ ঢেউয়ে দুলে উঠছে চরাঞ্চলের কৃষকের স্বপ্ন। বন্যার ধকল কাটিয়ে শত শত কৃষক ফসলের মাঠে ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সবকিছু ঠিক থাকলে উপজেলায় জেগে ওঠা তিস্তা নদীর ১৮টি চরে চলতি মৌসুমে উৎপাদন হবে প্রায় কয়েক কোটি টাকার ফসল।
শনিবার সরেজমিনে তিস্তার চরে গিয়ে দেখা যায় শুষ্ক মৌসুমে তিস্তা এখন বিস্তীর্ণ বালুচর। আর সেই বালুর মাঝে আগামীর স্বপ্ন বুনছেন নদী পাড়ের মানুষ। চরগুলোতে ভুট্টা, সরিষা, আলু, পেঁয়াজ, রসুন, মিষ্টি কুমড়া, মরিচসহ বিভিন্ন ধরনের ফসল ফলিয়েছে কৃষকরা। কাউনিয়া উপজেলা কৃষি অফিসসূত্রে জানাগেছে ঢুষমারা, নিজপাড়া, তালুকসাহাবাজ, পাঞ্জরভাঙ্গা, প্রাণনাথচর, ধুমগারা,চরনাজিরদহ, হয়বতখাঁ, বিশ্বনাথ, রাজিবসহ তিস্তা নদীর ১৮টি চরে ৩ হাজার ১৬০ হেক্টর জমির মধ্যে এবছর ২হাজার ৪৫৫ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে। অবশিষ্ট জমিতে প্রায় ২৫হাজার ৩২৫জন মানুষ বসবাস করছে। সূত্রটি আরো জানায় এসব জমির মধ্যে এক ফসলি ১২০ হেক্টর, দুই ফসলি ১২শ হেক্টর এবং তিন ফসলি ১হাজার ১৩৫ হেক্টর জমিতে কৃষকরা ফসল উৎপাদন করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে আসছে।
জানা গেছে, গত বন্যায় হঠাৎ উজানের ঢলের বন্যায় অনেকেই আমন ধান ঘরে তুলতে পারেনি। ওই সময় হঠাৎ করে উজানের পানির প্রবাহ বৃদ্ধি পায়। সেই পানি দেশের অন্যান্য এলাকার ন্যায় হুমকির মুখে ফেলে কাউনিয়া উপজেলার তিস্তা নদীতীরবর্তী এলাকার মানুষগুলো। এখন সেই তিস্তা নদীতে পানি নেই বললেই চলে। মানুষ পায়ে হেটে বা যানবাহন নিয়ে অনায়াসে চলাচল করছে নদীর বুক দিয়ে। সেই বালুচরে উপজেলা কৃষি দপ্তরের পরামর্শে কৃষকের ঘামে উৎপাদিত ফসলের ক্ষেতে দোল খাচ্ছে সবুজের সমারোহ। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষগুলো ঘুরে দাঁড়াতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চরের জমিতে তারা ব্যস্ত সময় পার করছে। তবে এবছর অধিক জমিতে আলুর চাষ হওয়া লাভ নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় পড়েছেন আলু চাষীরা।
তিস্তার চরের আলু চাষী আসাদুজ্জামান বলেন, এবছর আলু চাষে কেজি প্রতি খরচ হয়েছে প্রায় ১৮ থেকে ২০ টাকা বর্তমান বাজারে আলুর দাম হচ্ছে ১২ টাকা কেজি এতে বছর অনেক টাকা লোকসান হবে।
এই কথা বলছিলেন, আরেক আলু চাষী তাজুল ইসলাম তিনি বলেন, ভাই গতবছর আলু চাষ করে যে টাকা আয় করেছিলাম এবার সেটা শেষ।
মরিচ চাষী ইকরাম হোসেন বলেন, ৬০শতক জমি বর্গা নিয়েছি ২২ হাজার টাকায়। সেই জমিতে মরিচ চাষ করে বর্তমান বাজার দর ৬শ টাকা মনে বিক্রি করে এখন পর্যন্ত ১৮ হাজার টাকার মরিচ বিক্রি করেছি। চৈত্র বৈশাখ মাসে যদি দাম বৃদ্ধি পায় তাহলে হয়তো কয়টা টাকা ঘরে তুলতে পারবো। তা না হলে লোকসান গুনতে হবে।
কাউনিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছাঃ তানিয়া আকতার জানান, তিস্তার চরে এবছর, ১২শ হেক্টর জমিতে আলু, ২৫ হেক্টর জমিতে সরিষা, ৩১৬ হেক্টর জমিতে ভুট্টা, ২২ হেক্টর জমিতে বেগুন, ৬০ হেক্টর জমিতে বাদাম সহ ২হাজার ৪৫৫ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের ফসল উৎপাদন হয়েছে। চরাঞ্চলের চাষীদের বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে দিতে সরকারি বরাদ্দকৃত কৃষি পূর্নবাসন দেয়া হয়েছে। তিস্তার চরে ব্যাপক ফসল আবাদ হচ্ছে। উপজেলা কৃষি দপ্তরের উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তাদের সার্বক্ষনিক তদারকিতে কৃষকরা যেভাবে ফসলের পরিচর্যা করছে তাতে এবার আবহাওয়া অনুকূল থাকলে কৃষকরা লাভবান হবেন।