আবারো নদী ভাঙ্গনের আশংকায় যমুনা পাড়ের ৭টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠায় দিন যাপন করছেন। ভুক্তভোগী গ্রামবাসীরা বন্যার আগেই শুষ্ক মৌসুমে ভাঙ্গন এলাকায় দ্রুত তীর রক্ষা কাজ করার জন্য সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর আবেদন জানিয়েছেন।
গত বছর বন্যার সময় ভাঙ্গনে নদী পাড়ের রৌহাদহ, কামালপুর, ফকিরপাড়া, ইছামারা, গোদাখালি, দরিপাড়া ও হাওড়াখালি গ্রামের পাঁচ শতাধিক বাড়িঘর ও তিন শতাধিক বিঘা আবাদি জমি যমুনায় বিলীন হয়। বর্তমানে গোদাখালি পয়েন্টে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ থেকে নদী ২০০ মিটার দূরত্বে অবস্থান করছে। নদী পাড়ের ভুক্তভোগী লোকেরা জানান, ভাঙ্গন শুরু হলে কয়েক দিনেই বাঁধ নদী ভাঙ্গনের কবলে পরবে। আর বাঁধ ভেঙ্গে বনার পানি প্রবেশ করলে সারিয়াকান্দি, ধুনট, বগুড়া সদর, শেরপুর, সিরাজগঞ্জ জেলার কাজিপুর সহ কয়েটি উপজেলার হাজার হাজার হেক্টর জমির ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হবে।
সম্প্রতি পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (উত্তরাঞ্চল) একেএম তাহমিদুল ইসলাম ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শন করেন। সে সময় নদী ভাঙ্গনের শিকার, ক্ষতিগ্রস্ত লোকেরা ভাঙ্গনের ভয়াবহতার কথা এবং দ্রুত তীররক্ষা কাজ করার দাবি জানান।
গ্রামবাসীরা জানান, প্রতি বছর নদী থেকে কোটি কোটি ঘনফুট বালু উত্তোলনের ফলে নদীর গতিপথ দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে এবং পাড় ভেঙ্গে যাচ্ছে। জানা গেছে, কয়েক বছর থেকে যমুনার জেগে ওঠা বিভিন্ন চর বালু মহাল ঘোষণা করে ইজারা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু ইজারাদাররা ইজারা শর্ত ও নিয়ম নীতি লঙ্ঘন করে এবং অপরিকল্পিত ভাবে বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে কোটি কোটি ঘনফুট বালু উত্তোলন করায় নদীর গতিপথ দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে এবং একের পর এক গ্রাম জনপদ নদীতে বিলীন হচ্ছে।
এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, ভাঙ্গন রোধে স্থায়ী প্রতিরক্ষা কাজ না করে বন্যার সময় পানি উন্নয়ন বোর্ড জরুরি ভিত্তিতে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিং করেই দায়িত্ব শেষ করে। এতে কাজের কাজ কিছু হয়না। কিন্তু সরকারি টাকার অপচয় হয়।
এ ব্যাপারে যমুনা ভাঙ্গন প্রতিরোধ কমিটির আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান-উল-আলম বলেন, গত বছর আমার পৈত্রিক ভিটাবাড়িসহ কামালপুর, ইছামারা, ফকিরপাড়া গ্রামের ৫ শতাধিক বাড়িঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। অনেক পরিবার ছিন্নমূলে পরিণত হয়েছে।
সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহরিয়ার রহমান বলেন, এ পয়েন্টে ভাঙ্গন রোধে কাজ করার জন্য ঠিকাদার নিয়োগ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ইতি পূর্বে ঐ এলাকা থেকে বিপুল পরিমাণ অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করা হয়েছে বলে শুনেছি। তবে এখন থেকে আর কোনো বালু তুলতে দেওয়া হবেনা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বগুড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল হক বলেন, অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন বন্ধ না হলে নদীর গতিপথ দ্রুত পরিবর্তন হবে এবং তীরবর্তী গ্রাম জনপদ, তীররক্ষা বাঁধ হুমকির মুখে পরবে। ভাঙ্গন এলাকায় কাজের জন্য ৫০ কোটি টাকার ডিপিপি বোর্ডে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন হলে দ্রুত কাজ শুরু করা হবে। #