শরতকে বিদায় দিয়ে শুরু হয়েছে হেমন্ত। দরজায় কড়া নাড়ছে শীত। দিনভর গরম থাকলেও বিকাল থেকে সকাল পর্যন্ত কুয়াশায় ঢেকে যেতে শুরু করেছে প্রকৃতি। নিচ্ছে শান্ত-নীরব রূপ। ফসলের ক্ষেতসহ ঘাসে শিশির এঁকে দিচ্ছে শীতের চিহ্ন।
সিরাজগঞ্জে একই দিনে দুইরকম আবহাওয়া দেখা যায়। শীতের আগমনের প্রথমে এমনটাই হয়ে উঠে প্রকৃতি। প্রকৃতির এই অদল-বদল খেলায় গ্রামীণ পরিবেশ কিছুটা পূর্ন হয়ে উঠে। শীতের এ আগমনী বার্তায় সিরাজগঞ্জে দৃশ্যমান হচ্ছে শীতকেন্দ্রিক নানা ব্যস্ততা। তাই ঠান্ডা নিবারণে মানুষেরা প্রস্তুতি নিচ্ছে পুরোদমে। জেলার প্রতিটি উপজেলায় লেপ তৈরীর কাজ শুরু হয়েছে। ব্যস্ত হয়ে উঠেছে লেপ তোষক তৈরীর কারিগরা। দোকানগুলোতে দেখা যায়, মালিক-শ্রমিক লেপ-তোষক তৈরীর সেলাইয়ের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আর শীত মৌসুমের শুরুতেই ক্রেতারা দোকানে পছন্দমতো লেপ-তোষক তৈরীর অর্ডার দিয়ে রেখেছেন।
অন্যদিকে জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে রিকশা-ভ্যানে লেপ-তোষক বিক্রেতাদের কানফাটা চিৎকার মা-বোনেরা ন্যাপ তোষক নিবেন নাহি। এই অনুভূতিই সবাইকে শীত নিবারণে প্রস্তুত হওয়ার তাগিদ দিচ্ছে ।
প্রতিটি ৪-৫ হাত লেপ ১৩শ থেকে ১৪শ টাকা, তোষক ১২শ থেকে ৩ হাজার এবং জাজিম ৩ হাজার-৪ হাজার পর্যন্ত খুচরা বিক্রি করা হয় বলে জানান দোকানিরা। তারা বলেন, বর্তমানে প্রতি কেজি কালো ব্লেজার তুলার দাম ৪০-৪৫ টাকা, কালারিং তুলা ৫০-১৫০ টাকা, শিমুল ৪৫০-৫শ টাকা, সাদা তুলা ১২০-১৩০ টাকা ও কাপাশ তুলা-২৫০-৩০০ টাকা করে বিক্রি হয়। শহরের এমএ মতিন সড়ক, কালিবাড়ি, খলিফা পট্টি, লেপ তোষকের দোকানে আসা কান্দাপাড়া গ্রামের আছমা বেগম বলেন, ঠান্ডা আসছে তাই পুরাতন লেপের কাপড় বদলে লেপ তৈরী করে নিচ্ছি।
সিরাজগঞ্জ শহরের কালিবাড়ি ও কামারখন্দ জামতৈল বাজারের হানিফ বস্ত্রালয়ের লেপ-তোষক তৈরীর কারিগর আব্দুল খালেক, রফিকুল ইসলাম, মালেক, রতন, রশন, মান্নান বলেন, শীত শুরু হতে না হতেই কর্মব্যস্ততা বেড়ে গেছে। আমরা ৪-৫ হাতের একটি লেপ তৈরীর শ্রমিকেরা মজুরি পাই ২৫০-৩০০ টাকা, ৫-৬ হাত লেপের মজুরি ৩৫০ টাকা, তোষকের মজুরি দেয় ২০০-৪৫০ টাকা । সারাদিনে ৬-৭টি লেপ তৈরী করতে পারি। লেপ তোষক তৈরী করে যে মজুরি পাই তা দিয়ে আমরা আমাদের ছেলে মেয়ে পড়াশোনাসহ সংসারের অন্যান্য খরচ চালাই। প্রতিটি দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়াতে আমাদের দুর্বিসহ জীবনযাপন করতে হচ্ছে বলেও জানান কারিগরেরা।
ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, হতদরিদ্র মানুষের গায়েই সবার আগে কামড় বসায় শীত। তাই আগেভাগে তারা শীতবস্ত্র কিনতে চলে আসেন। শহরের মৌসুমি মার্কেট, খলিফা পট্টি, কামারখন্দের জামতৈল বাজার, কাজিপুরে সোনামুখি বাজার, সিমান্ত বাজার, উল্লাপাড়া, বেলকুচি শাহজাদপুর, রায়গঞ্জ ও তাড়াশে বিভিন্ন বাজারে বাজারের লেপ-তোষক সেলাইয়ের কাজ চলছে দিনভর। বেলকুচির মোকন্দগাতি বাজারে দোকান আলমাস, হাসমত শহরের ১ নং খলিফ পট্টির দোকান মালিক দবির উদ্দিন বলেন, অতীতে লেপ-তোষকের ব্যাপক চাহিদা থাকলেও প্রকারভেদে একটি লেপ বিক্রি হয় দেড় হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা। অপরদিকে জোড়াতালি কম্বলের মূল্য ৫-সাড়ে ৫ শত টাকা। দামে কম হওয়ায় নিম্ন ও মধ্যবৃত্ত পরিবারের মাঝে এই কম্বলগুলোর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
উল্লেখ্য উপজেলা হাট বাজারের বিভিন্ন সাইজের লেপ-তোষক ক্রয় করে কাজিপুর, তাড়াশ, রায়গঞ্জসহ জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে গ্রামগুলোতে ভ্যানে করে নিয়ে বিভিন্ন সাইজের লেপ-তোষক বিক্রি শুরু হয়েছে। বিক্রি ভালো হয় বলে জানায় ভ্যানচালক ও লেপ-তোষক-বালিশ বিক্রেতা এন্তাজ আলী। ৮০ বছরের বৃদ্ধ আসমা বেওয়া ও ছেলের বউ সাহেদা খাতুন (৩২) নিজেদের পুরোনো ব্যবহারি কাঁথা সেলাই করে নিচ্ছেন। লেপ-তোষক বানানোর ক্ষমতা তাদের নেই। তাই পুরোনো কাঁথাকে মেরামত করে ব্যবহার উপযোগী করছেন তারা। তারা জানান, আমরা গরিব মানুষ বাবা, নুন আনতে পান্তা ফুরায় আর গায়ে দেওয়া লেপ বানামু কীভাবে। আমরা খেটে খাওয়া মানুষ আমাগোরে ঠান্ডাও কম নাগে।
বিভিন্ন দামের দেশি বিদেশি কম্বল বাজার দখল করে নেয়ায় অতীতের শীত বস্ত্র লেপ কাঁথা আজ বিলুপ্তির পথে বলে জানায় সচেতন মহল।
প্রধান সম্পাদক:- তোফায়েল হোসেন তোফাসানি, ক্রাইম নিউজ ইন্টারন্যাশনাল (প্রা:) লি: কর্তৃক প্রকাশিত একটি অনলাইন পোর্টাল ও সংবাদ সংস্থা। অফিস- সি-৫/১, ছায়াবীথি, সাভার, ঢাকা-১৩৪০।ঢাকা অফিস- বাড়ি নং-১, রোড-২৮, সেক্টর-৭, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০
ইউএসএ অফিস- ২১৬২৮ ১৩৬ এভিনিউ ষ্প্রিংফিল্ড গার্ডেন, নিউইয়র্ক- ১১৪১৩, ইউএসএ। ফোন- ০২-৭৭৪১৯৭১, সেল- +৮৮০১৭১১০৭০৯৩১, +৮৮০১৩০০৫৫৫৪৪০, ই-মেইল- cninewsdesk24@gmail.com, news@cninews24.com