সোমবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:১৩ অপরাহ্ন

ভাস্কর্য-ম্যুরাল ভাংচুর ও বঙ্গবন্ধুর ছবি অপসারণ কেন, জানালেন উপদেষ্টা মাহফুজ

সিএনআই নিউজ ২৪
  • আপডেট সময় : 4:12 pm, বুধবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২৪

গত সোমবার বঙ্গভবনের দরবার হল থেকে সরিয়ে ফেলা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি। ফেসবুকে এটি নিশ্চিত করেন অন্তর্বর্তী সরকারের নতুন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। এ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা তৈরি হয়। এবার শেখ মুজিব এবং হাসিনাকে নিয়ে ‘শেখদের পতন’ শিরােনামে ফেসবুকে একটি পোস্ট করেছেন মাহফুজ।

তীব্র প্রাণঘাতী গণআন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট পতন হয় আওয়ামী লীগ সরকারের। ওইদিনই ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মুখে দেশ থেকে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেয় দলটির সভানেত্রী এবং ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর বিভিন্ন স্থানে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ও ম্যুরাল ভেঙে ফেলা হয়। বিভিন্ন অফিস থেকে নামিয়ে ফেলা হয় শেখ হাসিনা এবং শেখ মুজিবের ছবি।

এজেন্টদের নোংরা প্রচেষ্টা সফল হবেনা: সারজিস আলম

তবে বঙ্গভবনের দরবার হলে উপদেষ্টাদের শপথ অনুষ্ঠানের দেখা যায় বঙ্গবন্ধুর ছবি, এ নিয়ে সামাজিকমাধ্যমে সমালোচনা করেন নেটিজেনদের অনেকে। তাদের দাবি, এখনো শেখ মুজিবের ছবি বিদ্যমান থাকা জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনার বিরোধী।

বুধবার (১৩ নভেম্বর) ফেসবুকে মাহফুজ লিখেন, ‘শেখ মুজিব ও তার কন্যা (আরেক শেখ) তাদের ফ্যাসিবাদী শাসনের জন্য জনগণের তীব্র রাগ-ক্ষোভের মুখে পড়েছেন। তাদের মধ্যে একমাত্র পার্থক্য, শেখ মুজিব একসময় পূর্ব বাংলার গণমানুষের জনপ্রিয় নেতা ছিলেন, যে জনপ্রিয়তা হাসিনার ছিল না। জনগণ পাকিস্তানি নির্যাতন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে তার (শেখ মুজিব) নেতৃত্ব অনুসরণ করেছিলেন, কিন্তু একাত্তরের পর তিনি নিজেই একজন স্বৈরশাসক হয়ে ওঠেন। মুজিববাদের প্রতি তার সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতায় একাত্তরের পর পঙ্গু ও বিভক্ত হয়ে পড়েছিল বাংলাদেশ। নিজের ফ্যাসিবাদী ভূমিকার কারণে ১৯৭৫-এ তার মৃত্যুতে মানুষ শোক-অনুতাপ প্রকাশ করেনি’।

নাহিদের রক্তজমাট ছবি পোস্ট করে যা বললেন হাসনাত

৯ মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের পর স্বাধীন হয় বাংলাদেশ। কিন্তু পরবর্তী শাসনামলে গণহত্যা, জোরপূর্বক গুম, দুর্নীতি, দুর্ভিক্ষ দেখে বাংলাদেশ। এসবের জন্য আওয়ামী লীগ ও শেখ পরিবারের সদস্যদের বাংলাদেশের জনগণের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে বলছেন মাহফুজ। তার ভাষ্য, অতীত কৃতকর্মের জন্য মুজিব ও হাসিনার ছবি, ম্যুরাল ও ভাস্কর্য মানুষ নামিয়ে ফেলেছে।

নতুন এই উপদেষ্টা আরো লেখেন, ‘তবে, শেখ মুজিব তার একাত্তর-পূর্ব ভূমিকার জন্য সম্মান পাবেন, যদি শেখের একাত্তর-পরবর্তী গণহত্যা, জোরপূর্বক গুম, দুর্নীতি, দুর্ভিক্ষ ও নিশ্চিতভাবেই বাহাত্তরের সংবিধান, যা বাকশাল প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত করেছিল—এসবের জন্য তার দল ও পরিবারের সদস্যরা বাংলাদেশের জনগণের কাছে ক্ষমা চান। শেখ-কন্যার ফ্যাসিবাদী শাসনের কথাও তাদের স্বীকার করা, ক্ষমা চাওয়া এবং এ জন্য বিচারের মুখোমুখি হওয়া উচিত (শেখ মুজিবকে একজন ঠাট্টা-বিদ্রূপ ও উপহাসের পাত্র বানিয়েছিলেন তিনি)। তাদের আরও উচিত, মুজিববাদী রাজনীতি ও শেখ পরিবারের বন্দনা পরিহার করা’।

‘কন্যার ফ্যাসিবাদী শাসনের কারণে শেখের ছবি সরানো হয়েছে (কর্মকর্তারা সরিয়েছেন, যদিও তা হয়েছে); যে শাসন মেয়ে করেছেন ফ্যাসিবাদী বাবার নামে ও তার একাত্তর-পরবর্তী চেতনার কথা বলে। তার বাবাকে দেবতুল্য করা হয়েছিল, কিন্তু জুলাই অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের মানুষ একসঙ্গে তাদের দুজনের ছবি, ম্যুরাল ও ভাস্কর্য নামিয়ে ফেলেছেন’।

‘কেউ যদি সরকারি অফিস থেকে শেখদের ছবি সরানোর কারণে আক্ষেপ প্রকাশ করেন, তবে তিনি এ গণ-অভ্যুত্থান ও গণমানুষের চেতনারই নিন্দা জানালেন’।

কোনো মুক্তিযোদ্ধা একাত্তর পরবর্তী সময়ে অন্যায় করলে তার শাস্তি হওয়া উচিত বলে মনে করেন মাহফুজ। একইসঙ্গে কোনো শাসক এবং তার পরিবারকে দেবতার আসনে বসানো উচিত নয় বলছেন তিনি।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের এই নেতা লিখেন, ‘আমাদের মনে রাখতে হবে, ইতিহাসকে মুছে ফেলা যায় না। আমরা এখানে এসেছি, ঐতিহাসিক অসংগতি ও অপব্যাখ্যাগুলো দূর করতে। মনে রাখতে হবে, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ছিল বাংলাদেশের গণমানুষের। আবার, কোনো মুক্তিযোদ্ধাও যদি একাত্তরের পর কোনো অন্যায় করে থাকেন, তার বিচার ও সাজা হওয়া উচিত’।

‘স্বাধীনতাযুদ্ধে ভূমিকা রেখেছেন বলেই তাদের (একাত্তরের পর কোনো অন্যায় করা মুক্তিযোদ্ধাদের) এ ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া উচিত নয়’।

‘বাংলাদেশের উচিত, শাসক পরিবারগুলোকে দেবতুল্য করা ও সেই ক্ষমতাসীন পরিবারগুলোর সবকিছু নিজেদের বলে মনে করা—এ থেকে বেরিয়ে আসা। ’৪৭ ও ’৭১-এর পাশাপাশি জুলাইয়ের চেতনা আমাদের সবার স্মৃতিতে থাকুক অম্লান’!

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

এই রকম আরো জনপ্রিয় সংবাদ
© All rights reserved © 2017 Cninews24.Com
Design & Development BY Hostitbd.Com