যমুনা বিধৌত সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার চরাঞ্চল জুড়ে এখন চোখে পড়ার মতো ছনপাতার সবুজ রং। দুর্গম চরাঞ্চল জুড়ে হেমন্তের বাতাসে দুলছে ছনক্ষেত। ছনপাতার কাশফুল ঝরে যেতে শুরু করলেও এ দৃশ্য নজর কেড়ে নেয়। এ আনন্দের সাথে তাল মিলিয়ে প্রান্তিক কৃষকেরা এ ছন সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর থেকেই চরাঞ্চলে ছন বাগান গজে ওঠে এবং এক থেকে দেড়ফুট লম্বা হয় তখন থেকেই কৃষকেরা পশুখাদ্য হিসেবে বাজারে বিক্রি শুরু করে। সেইসাথে কৃষকেরা এ ছন সংগ্রহ করে গো-খাদ্যর চাহিদাও মিটায়। বাজারেও এ ছনের বেশ চাহিদা রয়েছে। পরবর্তীতে ক্রমাগতভাবে বড় হয় ছন বাগানের ছনগুলো।
এক সময়ে এ ছনে ফুল আসে। এ সময় চরাঞ্চল প্রেম নগরে পরিণত হয়। এ কাশফুলের বাগানে গিয়ে তরুণ তরুণীরা সেলফিও তোলে। এ ফুল ঝরে পড়ার পর চরাঞ্চলের লোকজন সোনালী রং ধারণ করা ছনক্ষেতে ব্যস্ত সময় পার করে। প্রান্তিক কৃষকেরা এ ছন (কাইশা) কাটতে ব্যস্ত সময় পার করে এবং নৌকা নিয়ে ঘাটে বেঁধে তারা ছন কাটে। কাইশা কেটে মাথায় করে বা ঘোড়ার গাড়িতে করে বয়ে নদীর ঘাটে নিয়ে আসে। পরে নৌকায় তুলে যমুনার পাড়ি দিয়ে বাড়ি ফেরে।
এ ছন শুকানোর পরে তারা বিক্রি করেন। শুকনো ছনগুলো তারা স্থানীয় হাট বাজারে বিক্রি জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। এছাড়া শাহজাদপুর, বেলকুচি ও সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার চরাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে এ ছন বিক্রি করে বহু পরিবার জীবিকা নির্বাহ করে।
ছন কাটায় জড়িত স্থানীয়রা বলছেন, ছনগুলো একটু বড় হলে কেটে নিয়ে বাজারে বিক্রি করি এবং কাঁচা অবস্থায় গরুকে খাওয়ানো হয়। ফুল ঝড়ার পর ছন কেটে শুকিয়ে শাপটা, ঘরের চালা তৈরির জন্য বাজারে বিক্রি করি। চরাঞ্চলের অনেক বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা মহিলা ও ভূমিহীন ছিন্নমূল মানুষের কাইশা বিক্রির টাকায় জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। এমনকি এটি তারা কর্মসংস্থান হিসেবে বেছে নিয়েছে।
কাজিপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শরিফুল ইসলাম জানান, যমুনার জেগে ওঠা চরে বছরের প্রায় অর্ধেক সময় ছন সংগ্রহ ও বিক্রি করে প্রান্তিক কৃষকসহ বহু গরিব ও অসহায় মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। চরাঞ্চলের ছনবাগান থেকে নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্র তৈরির ব্যবস্থা করাও সম্ভব। এতে তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটে বলে তিনি উল্লেখ করেন। #