বৃহস্পতিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৬:৪৩ অপরাহ্ন

জাবিতে মুখে লাল কাপড় বেঁধে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মৌন মিছিল

সিএনআই নিউজ টুয়েন্টিফোর
  • আপডেট সময় : 4:15 pm, মঙ্গলবার, ৩০ জুলাই, ২০২৪

কোটা আন্দোলন ঘিরে দেশব্যাপী শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষকে গুম, খুন, নির্যাতন ও আটকের প্রতিবাদে মুখে লাল কাপড় বেঁধে মৌন মিছিল করেছেন নিপীড়নের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর ব্যানারে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরা। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে চোখে-মুখে লাল কাপড় বেঁধে শিক্ষকদের সঙ্গে সংহতি জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) দুপুর সাড়ে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে একটি মৌন মিছিল বের করেন তারা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ঘুরে পুরাতন ফজিলাতুন্নেসা হল সংলগ্ন কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় নিহতদের স্বরণে নবনির্মিত ছাত্র-জনতা শহীদ স্মৃতিস্তম্ভের সামনে যায়।
পরে সেখানে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। পরে সেখান থেকে পুনরায় মিছিল নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা একই পথে শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে এসে শেষে হয়। পরে সেখানে সমাবেশ করেন তারা।
সমাবেশে দেশব্যাপী কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষদের হত্যা, তাদের ওপর হামলা, নির্যাতন ও আটকের ঘটনার প্রতিবাদ জানান শিক্ষকরা।
এ ছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি শাখার অন্যতম সমন্বয়ক আরিফ সোহেলকে ‘মিথ্যা মামলায়’ রিমান্ড মঞ্জুরের নিন্দা জানান তারা।
সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক আনোয়ারুল্লাহ ভূঁইয়া বলেন, ‘দুঃশাসন ও স্বৈরাচারী মন-মানসিকতার দুঃশাসক যখন রাষ্ট্রের শাসন ক্ষমতায় থাকেন, তার পরিপূর্ণ নকশা ও বাস্তবায়ন আমরা দেখতে পাচ্ছি। শিক্ষার্থীরা যখন তাদের যোক্তিক দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমেছে, তখন তাদের প্রতিরোধ করতে রাষ্ট্রের বাহিনী, নানান যন্ত্র ও তাদের মদদপুষ্ট সংগঠনগুলো সাধারণ শিক্ষার্থীদের আহত করেছে। এখন আবার সরকার শিক্ষার্থীদের নির্বিচারে আটক করছে, জেলে নিয়ে নির্যাতন করছে।
৭১’র কালো রাতের যে ভয়াবহ অবস্থা ছিল, তা আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি।’
ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মাফরুহী সাত্তার বলেন, ‘আজ বলতেই হচ্ছে ৫২’র ভাষা আন্দোলন দেখিনি, ৬৯-এর আন্দোলন দেখার মতো অবস্থা ছিলো না। ৭১’র যৎসামান্য বুঝেছি। আজকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় স্লোগান দেখে প্রশ্ন জেগেছে তাহলে কি ৯০’র গণঅভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়ে গেছে। দুঃখের সঙ্গে সেই দায় নিয়েই বলতে হচ্ছে সব রাজনীতিবিদ স্পষ্টভাবে একটি বার্তা বুঝে নিন সংখ্যা কোন বিষয় নয়, যখন একটি শিশুর লাশ পরে যায় তখন সব সচেতন মানুষ একত্র হয়ে যান।
আজকে যে নিপীড়ন চালানো হচ্ছে, ভীতিকর অবস্থা সৃষ্টি করা হয়েছে, এগুলোর সমাধান ও দায় স্বীকার করে শিক্ষার্থীর দাবি মেনে নিয়ে নিজেরাও বাঁচুন আমাদেরকেও বাাঁচান।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি শাখার সমন্বয়ক তৌহিদ সিয়াম বলেন, ‘গত দুইদিন আগে ছয়জন সমন্বয়কারীকের ধরে নিয়ে ডিবি কার্যালয়ে জোরপূর্বক জিম্মি করে আন্দোলন প্রত্যাহারের বক্তব্য আদায় করা হয়। এর প্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিকভাবে ছাত্র সমাজের পক্ষ থেকে সেই বক্তব্য প্রত্যাক্ষিত হতে দেখেছি। এ আন্দোলনটি ছাত্র সমাজের আন্দোলন। সমন্বয়কারীরা ছাত্রদের সঙ্গে সমন্বয় করে এবং তাদের কোনো কথা থাকলে ছাত্রদের কাছে এসে বলতে হবে। ডিবি কার্যালয়ে থেকে কোনো কথা বললে সেটি ছাত্র সমাজ গ্রহণ করবে না।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলেনের জাবি শাখার সমন্বয়ক আরিফ সোহেলের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘আজ মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয়ভাবে শোক ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, যে রাষ্ট্র এখন পর্যন্ত আন্দোলন চলাকালে শহিদদের তথা যাদের জন্য শোক ঘোষণা করেছে তাদের সংখ্যা স্পষ্ট করে বলতে পারছেনা এবং যে হত্যার জন্য রাষ্ট্র সরাসরি জড়িত সেই রাষ্ট্রের শোক ছাত্র সমাজ সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে। শহিদ ভাইদের হত্যার বিচার ও নয় দফা দাবিতে মুখে ও চোখে লাল কাপড় বেঁধে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করছি। দৃড়ভাবে বলতে চাই, আমাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।
সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালিজন অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মৃধা মো. শিবলী নোমানের সঞ্চালনায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন, নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জামাল উদ্দিন, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক আদিল মুহামম্দ খান, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক মো. মাসউদ ইমরান ও দর্শন বিভাগের অধ্যাপক মাহমুদা আকন্দ প্রমুখ।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

এই রকম আরো জনপ্রিয় সংবাদ
© All rights reserved © 2017 Cninews24.Com
Design & Development BY Hostitbd.Com