চন্দ্রবোড়া বা রাসেল’স ভাইপার সাপটি ২০১২ সালের আগ পর্যন্ত বিলুপ্ত প্রজাতির প্রাণী হিসেবেই গণ্য হতো। হঠাৎ করেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে এটি। প্রতিবছর দেশে প্রায় ছয় হাজার মানুষ সাপের কামড়ে মারা যায়। তবে চন্দ্রবোড়া সাপের তুলনায় দ্বিগুণ মারা যায় গোখরা ও অন্যান্য সাপের কামড়ে।
সাপের কামড়ে কী ঘটে : সাপের বিষে প্রায় ১০০ ধরনের প্রোটিন থাকে। কোনো কোনো সাপের বিষে স্নায়ুতন্ত্র বেশি আক্রান্ত হয়, কোনো ক্ষেত্রে রক্ত সংবহনতন্ত্র, হৃৎপিণ্ড আক্রান্ত হয় বেশি। চন্দ্রবোড়া সাপের কামড়ে আক্রান্ত স্থানে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভূত হয়, ফুলে ওঠে, ফোস্কা পড়ে, রক্তক্ষরণ ঘটে। কখনো আক্রান্ত স্থানে ক্ষত সৃষ্টি হয়, পচন ধরে এবং গ্যাংগ্রিন সৃষ্টি হতে পারে।
এর প্রভাবে রক্ত তঞ্চন প্রক্রিয়া সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয়। ফলে শরীরের বিভিন্ন স্থান থেকে শুরু হতে পারে রক্তক্ষরণ। নাক, মুখ থেকে রক্তক্ষরণের পাশাপাশি বমি ও পায়খানার সঙ্গেও রক্তক্ষরণ হতে পারে।
দংশনের ফলে হতে পারে অরুচি ও বমি।
মাংসপেশির কোষ ভেঙে হতে পারে র্যাবডো মায়োলাইসিস। এতে প্রস্রাব কমে যায়, এটি কোকা-কোলার মতো বর্ণ ধারণ করে। কিডনি বিকল হয়ে যায়। রক্তচাপ কমে যায়। এলোমেলো হয়ে পড়ে হৃৎস্পন্দন।
অনেক সময় রক্তনালি থেকে রক্তরস বের হয়ে আসে। চিকিৎসা না নিলে রোগী মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।
আছে অ্যান্টিভেনম : সর্প দংশনের অন্যতম প্রধান চিকিৎসা হচ্ছে অ্যান্টিভেনম। বিষের বিরুদ্ধে কর্মক্ষম প্রতিবিষ। সর্প দংশনের বিষক্রিয়া নিশ্চিত হলে কিংবা লক্ষণ প্রকাশ পেলে অ্যান্টিভেনম প্রয়োগ করতে হবে স্যালাইনযোগে। রাসেল ভাইপারের অ্যান্টিভেনম বাংলাদেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে রয়েছে। যথাসময়ে অ্যান্টিভেনম প্রয়োগ করলে রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যেতে পারে। হাসপাতালগুলোতে অ্যান্টিভেনম প্রয়োগের ফলে শতকরা ৭০ ভাগ রোগীকে বাঁচানোর নজির রয়েছে। তবে রোগীকে দ্রুত স্থানান্তর করা সম্ভব হলে এ মৃত্যুহার ঠেকানো সম্ভব।
খেয়াল রাখা জরুরি : রোগীর মন থেকে আতঙ্ক, উদ্বেগ দূর করা জরুরি। টিটেনাসের জন্য টিকা প্রয়োগ, ইনফেকশনের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা, বেদনানাশের ব্যবস্থা নেওয়াও প্রয়োজন। সাপে কাটা রোগীদের অনেক ক্ষেত্রে নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ব্যবস্থায় রাখতে হয়।
পরামর্শ দিয়েছেন
লে. কর্নেল ডা. নাসির উদ্দিন আহমদ
মেডিসিন স্পেশালিস্ট ও এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট
সিএমএইচ, বরিশাল