বৃহস্পতিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৮:০৮ অপরাহ্ন

ওসির আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে থানায় হামলা করেন আ. লীগ নেতাকর্মীরা

সিএনআই নিউজ টুয়েন্টিফোর
  • আপডেট সময় : 3:12 pm, সোমবার, ১০ জুন, ২০২৪

ঝিনাইদহের শৈলকুপায় আওয়ামী লীগ নেতা শিকদার মোস্তাফিজুর রহমান মুস্তাককে গ্রেপ্তারের পর তাকে প্রকাশ্যে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও মারধর করায় ওসির প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে মুস্তাকের অনুসারীরা থানায় হামলা চালিয়েছেন বলে জানা গেছে। সেসময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ গুলি ছোড়ে। এ ঘটনায় পাঁচ পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ৩৫ জন আহত হয়েছেন।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বলছেন, তাদের নেতাকে থানার ওসি গ্রেপ্তারের পর গালাগাল ও মারধর করেন।
এ ছাড়া পিকআপ ভ্যানে বসতে না দিয়ে দাঁড় করিয়ে রেখে থানায় নিয়ে যান। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তারা থানায় জড়ো হলে ওসির নির্দেশে তাদের ছাত্রভঙ্গ করতে পুলিশ গুলি ছোড়ে।
পুলিশ বলছে, মুস্তাককে গ্রেপ্তারের পর তার অনুসারীরা থানায় এসে হামলা চালায়। এ সময় পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে গুলি ছোড়ে।
এদিকে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের থানায় হামলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জেলার সচেতন নাগরিকরা। তারা বলছেন, এ হামলা সমাজে খারাপ বার্তা দিচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ধলাহরাচন্দ্র ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমানের সঙ্গে বিরোধ চলে আসছিল আওয়ামী লীগ নেতা শিকদার মোস্তাফিজুর রহমান মুস্তাকের। উপজেলা নির্বাচনে মুস্তাকের সমর্থিত প্রার্থী মোস্তফা আরিফ রেজা মন্নু বিজয়ী হন।
এরপর থেকে মতিয়ার রহমানের সামাজিক দলের অধিকাংশ মাতুব্বর মুস্তাকের দলে যোগদান করে। এলাকায় আধিপত্য ধরে রাখতে বেশ কয়েকবার সহিংসতায় লিপ্ত হয় দুই পক্ষ। গতকাল রবিবার দুপুরে সহিংসতার অভিযোগে ধাওড়া গ্রাম থেকে মুস্তাককে গ্রেপ্তার করেন ওসি নিজেই। এরপর মোস্তাককে হাতকড়া পরিয়ে মারধর ও অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে পিকআপ ভ্যানে তোলেন ওসি।
এরপর মুস্তাককে পাশ্ববর্তী লাঙ্গলবাঁধ বাজারে নিয়ে পিকআপ ভ্যান থেকে নামিয়ে শত শত লোকের সামনে অকথ্য ভাষায় আবারো গালিগালাজ করেন ওসি।
পরে তাকে পিকআপ ভ্যানের পাদানিতে করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। ওসির এমন আচারণে ক্ষুব্ধ হয়ে মুস্তাকের অনুসারীরা থানায় গিয়ে জড়ো হলে পুলিশের সঙ্গে তাদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ তাদের দিকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে তারাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়ে।
গতকালের ওই ঘটনায় পুলিশের গুলিতে ডানহাত উড়ে যায় ধাওড়া গ্রামের ফিরোজ শিকদারের। তিনি ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ফিরোজ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ওসি আমাদের প্রতিপক্ষের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ করে আসছে। গতকাল মুস্তাক ভাইকে গ্রেপ্তার করে ওসি নিজেই বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে গিয়ে হাজার হাজার মানুষের সামনে তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। আমরা এর প্রতিবাদ জানাতে থানার সামনে জড়ো হয়েছিলাম। ওসি আমাদের দেখে তার টিমকে গুলি করার নির্দেশ দেন।
এসব অভিযোগের বিষয়ে শৈলকুপা থানার ওসি শফিকুল ইসলাম চৌধুরীকে ফোন করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এদিকে সুশানের জন্য নাগরিক (সুজন) এর জেলা শাখার সভাপতি ও মানবাধিকার কর্মী আমিনুর রহমান টুকু বলেন, থানায় এ ধরনের হামলা আমাদের সমাজের জন্য খারাপ বার্তা দিচ্ছে। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা দায় এড়াতে পারেন না। তবে ওসির কোনো পক্ষপাতিত্ব আছে কিনা সেটাও খতিয়ে দেখতে হবে। আওয়ামী লীগ নেতাকে গ্রেপ্তারের সময় ওসির আচরণ যদি ভালো হতো তাহলে থানার সামনে বিক্ষুব্ধরা জড়ো হতে পারতো না।
এ বিষয়ে ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার আজিম-উল-আহসান জানান, ওসির বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে তারা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানাতে পারতো। এভাবে থানার মতো অতিগুরুত্বপূর্ণ জায়গায় হামলা করা মোটেই কাম্য নয়। তিনি তো এক এজাহারনামীয় আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে। এখানে তো ওসির কোনো দোষ দেখছি না। বরং এক ব্যক্তির ইন্ধনে পৌরসভার মধ্যে তারা সংঘবদ্ধ হয়ে থানায় হামলা চালিয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

এই রকম আরো জনপ্রিয় সংবাদ
© All rights reserved © 2017 Cninews24.Com
Design & Development BY Hostitbd.Com