বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:০০ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি অভ্যুত্থানকে ব্যর্থ করতে চাইলে চূড়ান্ত বিপ্লবের ডাক আসবে: আসিফ কাজিপুরে সোনামুখী ফাজিল মাদ্রাসায় শতাধিক ঔষধি গাছের চারা রোপণ পৃথিবীর সুরক্ষায় ‘জিরো কার্বন’-ভিত্তিক জীবনধারার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার বৈশ্বিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর আহ্বান ড. ইউনূসের তামিম ফিরছেন বিপিএলের আগেই জনগণের আস্থা ও ভালোবাসা ধরে রাখতে চাই : ইশরাক হোসেন বিপ্লবী কারা, জানালেন হাসনাত আব্দুল্লাহ ভাস্কর্য-ম্যুরাল ভাংচুর ও বঙ্গবন্ধুর ছবি অপসারণ কেন, জানালেন উপদেষ্টা মাহফুজ অন্তর্বর্তী সরকার যত দিন চাইবে, ততদিন সেনাবাহিনী মাঠে থাকবে

রাজমিস্ত্রির কাজ করে এসএসসি পাস, কলেজে পড়া নিয়ে দুশ্চিন্তা

সিএনআই নিউজ টুয়েন্টিফোর
  • আপডেট সময় : 3:19 pm, মঙ্গলবার, ১৪ মে, ২০২৪

রাজমিস্ত্রিরসহ দিন মজুরির নানা পেশার কাজ করে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে ফেরদৌস আহমেদ (১৭)। শত বাধার মধ্যে মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা চালিয়ে গেলেও এখন কলেজে পড়া নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় আছে ফেরদৌস।
নেত্রকোনার দুর্গাপুর পৌর শহরের মুক্তারপাড়া এলাকায় বসবাস ফেরদৌসের। দুই ভাই ও এক বোনের মাঝে সে দ্বিতীয়।
মুক্তার পাড়া এলাকার আনোয়ার হোসেন ও রুবিনা খাতুন দম্পতির ছেলে হলেও বর্তমানে তাঁর ঠিকানা ও আপনজন বলতে শুধু দাদি মিলিক জান বেগম।
ফেরদৌস আহমেদ সুসঙ্গ আদর্শ বিদ্যানিকেতন স্কুল থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। গত রবিবার প্রকাশিত ফলাফলে মানবিক বিভাগ থেকে সে ৩.৬১ পেয়েছে উত্তীর্ণ হয়েছে।
জানা গেছে, প্রায় ১১ বছর আগে ফেরদৌস আহমেদের বাবা আনোয়ার হোসেন এলাকা ছেড়ে অন্যত্র গিয়ে আরেক বিয়ে করেন।
এ কথা শোনার পর তার মাও তাঁকে ফেলে বাপের বাড়ি চলে যায়। এরপর থেকে ফেরদৌসের জীবনে শুরু হয় যুদ্ধ। তাঁর ঠাঁই মিলে বৃদ্ধ দাদি মিলিক জান বেগমের কাছে। পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ থাকায় প্রথমে চর মোক্তারপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ও পরে সুসঙ্গ আদর্শ বিদ্যানিকেতন স্কুলে পড়াশোনা করে।
তার দাদি ও প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় সে মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়ে। এক সময়ে লেখাপড়ার পাশাপাশি মুদি দোকান ও রাজমিস্ত্রির কাজসহ দিন মজুরির কাজ করে সংসারে সহযোগিতা করে। এসএসসি পরীক্ষার আগ মুহূর্তে দেড় মাস এক শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়ে মূল পরীক্ষায় অংশ নেয় ফেরদৌস।
ফেরদৌস বলেন, বাবা-মা ছেড়ে যাওয়ার পর দাদির কাছেই বড় হয়েছি। দাদির সহযোগিতায় পড়াশোনাও করেছি।
দাদি অসুস্থ হওয়ার পর থেকে আমি রাজমিস্ত্রির কাজ করি এবং মুদি দোকানও চালিয়েছি। সবকিছুর সঙ্গে পড়াশোনাও করেছি। আমার কলেজে পড়ার অনেক ইচ্ছা। তবে খরচ যোগাতে পারব কিনা জানি না।
প্রতিবেশী রোজি আক্তার বলেন, ছোট বেলায় ফেরদৌসকে ছেড়ে তার বাবা-মা চলে যায়। তাঁর দাদি খুব কষ্ট করে সংসারের পাশাপাশি তার পড়াশোনার খরচ চালিয়েছে। ফেরদৌসকে আমি পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ফ্রিতে পড়িয়েছি। এখন সে এসএসসি পাশ করেছে। পড়ালেখার প্রতি তার প্রবল ইচ্ছা রয়েছে। আমরা চাই, সরকারি-বেসরকারিভাবে সবাই যেন তার সহযোগিতা এগিয়ে আসেন।
ফেরদৌসের দাদি মিলিক জান বলেন, ছোট বেলায় ফেরদৌসকে রেখে তাঁর মা-বাবা চলে যায়। এরপর আমার ঘরে এক বেলা ভাত খাওয়ার মতো কিছু ছিল না। আমি গাছের শুকনা পাতা জমা করে বিক্রি করেছি। গাছের কাঁঠাল বিক্রি করে ও অন্যের বাসা থেকে ভাত চেয়ে এনে নাতিকে খাইয়েছি। ড্রেসের জন্য স্কুলে যেতে পারত না। প্রতিবেশীর ছেলের পুরাতন ড্রেস এনে তাঁকে দিছি। খুব কষ্ট করে আমি তাঁকে লেখাপড়া করিয়েছি। সুসঙ্গ আদর্শ বিদ্যানিকেতনে ভর্তির পর অভাব-অনটনে প্রাইভেট পড়াতে পারেনি। প্রাইভেট পড়লে রেজাল্ট আরো ভালো করত। এখন কলেজে ভর্তিসহ যাবতীয় খরচ বহন করা আমার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। সরকারি বা বিত্তবানদের সহযোগিতা পেলে উপকার হতো।
সুসঙ্গ আদর্শ বিদ্যানিকেতন স্কুলের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মো. আব্দুস ছালাম বলেন, সে কাজ করার পাশাপাশি লেখাপড়া করে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। এটা সত্যিই অনেক আনন্দের। স্কুল থেকে কাগজপত্র তোলার বিষয়ে সহায়তা থাকবে। ব্যক্তিগতভাবেও আমি তাকে সহযোগিতা করব।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এম রকিবুল হাসান জানান, ওই শিক্ষার্থী আবেদন করলে আমরা তাকে পড়াশোনা চালানোর জন্য সর্বোচ্চ সহযোগিতা করব।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

এই রকম আরো জনপ্রিয় সংবাদ
© All rights reserved © 2017 Cninews24.Com
Design & Development BY Hostitbd.Com