বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫, ১১:২৫ অপরাহ্ন

পৃথিবী থেকে মিষ্টি পানি শেষ হয়ে যাবে!

তোফায়েল হোসেন তোফাসানি
  • আপডেট সময় : 5:39 pm, বুধবার, ১৮ মে, ২০২২

পৃথিবী থেকে মিষ্টি পানি শেষ হয়ে যাবে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। কেন এবং কিভাবে তা হবে এ তথ্য জানার জন্য লেখাটি আপনাকে পড়তে হবে।

আমরা সবাই জানি যে, পানির অপর নাম জীবন।মানুষকে বাঁচতে গেলে পানি পান করা প্রয়োজন। এছাড়াও গোসল, রান্না, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য আমাদের সব সময় পানি ব্যবহার করতে হয়।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আমরা দুই ধরনের পানির সাথে পরিচিত। তা হচ্ছে মিষ্টি পানি ও লবনাক্ত পানি। লবনাক্ত পানি ব্যবহার উপযোগী নয়। কিন্তু মিষ্টি পানি আমাদের সকল কাজেই লাগে।

আমরা কিভাবে পানি ব্যবহার করে থাকি। তা যদি একবার চিন্তা করি তবে পানি ব্যবহারের অপচয় সম্পর্কে বুঝতে পারবো।নিজের আচরন আর অভ্যাস বলে দেবে আমরা কতটুকু সচেতন।

যেমন, সকালে দাত ব্রাশ করার সময় আমরা বেসিনে যাই। সেখানে কলটা ছেড়ে রাখি। তার পর পানি পড়তেই থাকে আর আমরা দাত ব্রাশ করে যাই।

গোসলের সময় আমরা একই কাজ করি। কল বন্ধ না করে সব কাজ সেড়ে নেই। অনেক সময় ট্যাপে টিপটিপ করে পানি পড়তেই থাকে। ভালভাবে আমরা ট্যাপ বন্ধ করি না। তৈজসপত্র ধৌত করার সময়ও পানি ছেড়ে রাখি। অর্থাৎ সব কাজেই আমরা মনে করি যে, পানি হচ্ছে অফুরন্ত ভান্ডার। পানি কখনও ফুরাবে না।

আমাদের এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। ভুগর্ভে আমাদের জন্য মিষ্টি পানি রয়েছে নির্দিষ্ট একটি পরিমানে। খনিজ সম্পদের মত যা একদিন ফুরিয়ে যাবে।

এক সময় নলকুপ স্থাপন করতে অল্প পাইপেই হয়ে যেত। আস্তে আস্তে সে স্তর নিচে নেমে আসছে। আমরা সবাই বিষয়টি জানলেও কখনও চিন্তা করি না যে কেন পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে।

বিবিসি বলছে, বাংলাদেশে মাটির নিচে পানির স্তর ক্রমশই আরো নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে। সরকারি হিসেব মতেই সারা দেশের নানা যায়গায় পানির স্তর ৪ থেকে ১০ মিটার পর্যন্ত কমে গেছে।

এ কারণে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনতে এর বদলে সরকারি কর্মকর্তারা এখন মাটির উপরিভাগের পানি অর্থাৎ পুকুর বা নদী নালার পানির ব্যবহার বাড়াতে জোর দেবার কথা বলছেন।

কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ৪৪ শতাংশ মানুষ খাওয়ার জন্যে নিরাপদ পানি পায় না ।

ব্যাপক কৃষিকাজ, মাত্রাধিক পানি খরচ ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমাদের সবুজ গ্রহটিতে পানির আকাল দেখা যাচ্ছে। পৃথিবীর তিন ভাগ জল। তাহলে কি আমরা মনে করবো যে, পানি রয়েছে অফুরন্ত। না, তা মনে করা যাবে না।

পৃথিবীতে যত পানি আছে তার সমগ্র পানির মাত্র আড়াই শতাংশ মিঠা পানি। সেই মিঠা পানির দুই-তৃতীয়াংশ বরফ হয়ে জমে আছে সুমেরু, কুমেরু আর বিশ্বের নানা হিমবাহে৷ যেটুকু তরল মিঠা পানি আছে তাই দিয়ে মানুষের পান থেকে শুরু করে রান্নাবান্না, ক্ষেতে সেচ দেওয়া থেকে শুরু করে গৃহপালিত পশুদের তৃষ্ণা মেটানো, সমস্ত কাজ চালাতে হয়৷

নেদারল্যান্ডসের টোয়েন্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সমীক্ষা অনুযায়ী ভবিষ্যতে মোট ৪০০ কোটি মানুষ বছরে অন্তত একটি মাসের জন্য তীব্র জলাভাবের সম্মুখীন হতে পারেন৷ বিশ্বের কোনো কোনো অঞ্চলে ইতিমধ্যেই খরা ও ব্যাপক জলাভাব দেখা দিয়েছে, যেমন হর্ন অফ আফ্রিকা, যেখানে লক্ষ লক্ষ মানুষ বছরের পর বছর খরার শিকার হয়ে ক্ষুধা ও ব্যাধিতে পীড়িত হচ্ছেন৷ ওদিকে পাকিস্তান ২০২৫ সালের মধ্যেই পানিশূন্য হয়ে পড়তে পারে, বলে জাতিসংঘের একটি রিপোর্টে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে৷

পৃথিবীতে মানুষ বাড়ছে। বাড়ছে পানির চাহিদা। আমাদের মাটির নিচের জমানো পানি এক সময় ফুরিয়ে যাবে। তাই আমাদেরকে পানি ব্যবহারে সচেতন হতে হবে। অযথা পানির কল ছেড়ে রাখবোনা। প্রয়োজন ছাড়া একাধারে পানির পাইপ দিয়ে পানি ঝড়াবো না। মিঠা পানি দিয়ে অপ্রয়োজনীয় কাজ করবো না। এভাবে প্রতিটি কাজে পরিমিত পানি ব্যবহারের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। একদিন আমরা পৃথিবী থেকে চলে যাবো। আগামী প্রজন্ম আমাদের দ্বারা যাতে উপকৃত হয় সে ব্যবস্থা করে যেতে হবে। সকল ধর্মে অপচয়কে সৃষ্টিকর্তা পছন্দ করে না। তাই পানির অপচয় রোধে অভ্যাস গড়ে তুলে আগামীর সুন্দর পৃথিবী গড়তে হবে।

জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষমাত্রা অর্জনে আমাদের অংশগ্রহণ করতে হবে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষমাত্রা বা এসডিজি’র ছয় নম্বর লক্ষমাত্রা হচ্ছে নিরাপদ পানি। পৃথিবীকে এই ভয়াবহ অবস্থা থেকে বাঁচাতে এই লক্ষমাত্রা বাস্তবায়নে কাজ করছে জাতিসংঘ।  

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

এই রকম আরো জনপ্রিয় সংবাদ
© All rights reserved © 2017 Cninews24.Com
Design & Development BY Hostitbd.Com