বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ১০:৩৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
ঐকমত্য কমিশন নিয়ে যে অভিযোগ সালাহউদ্দিনের জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটের সুযোগ নেই: আমির খসরু এনসিপি কোন জোটে যাবে, যা বললেন নাহিদ আ.লীগ হচ্ছে ডেথ চ্যাপ্টার: হাসনাত আবদুল্লাহ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজে টিকে থাকার চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশের যুদ্ধের জন্য আরো ২-৩ বছর ইউরোপের সমর্থন চান জেলেনস্কি নির্বাচনে স্বচ্ছতা নিশ্চিতে দ্রুত বডি-ওর্ন ক্যামেরা ক্রয়ের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে প্রকৃত বিদেশি পর্যবেক্ষকদের স্বাগত জানাবে সরকার: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা  আওয়ামী লীগ ২০১৪ সালের পর দেউলিয়া হয়ে গেছে: মাহফুজ আলম রায়গঞ্জে যুবদলের ৪৭ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে— ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের অঙ্গীকার’।   ‎

কেমন আছে সিরিয়া?রাসায়নিক হামলায়

রিপোর্টার নাম
  • আপডেট সময় : 12:05 pm, বুধবার, ১১ এপ্রিল, ২০১৮

syriaসিএনআই নিউজ : সিরিয়ার সরকার বিরোধী আন্দোলনকারী, উদ্ধারকর্মী এবং চিকিৎসা কর্মীরা জানাচ্ছেন ডৌমায় শনিবারের সন্দেহভাজন রাসায়নিক হামলার ঘটনায় ৪০ জনের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। ডোমা হচ্ছে পূর্ব ঘুটা অঞ্চলে বিদ্রোহীদের দখলে থাকা সর্বশেষ ঘাঁটি।

অভিযোগ করা হচ্ছে সরকারি বাহিনী সেখানে বিষাক্ত রাসায়নিক-সমৃদ্ধ বোমা ফেলেছে। তবে সরকার বলছে রাসায়নিক বোমা হামলার খবর বানোয়াট। গত ফেব্রুয়ারি মাসে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের অনুগত বাহিনী পূর্ব ঘুটা এলাকায় হামলা চালালে ১৭০০ বেসামরিক মানুষ মারা যায় বলে খবরে জানা যায়।

এরপর মার্চ মাসে সেনাবাহিনী ওই অঞ্চলটিকে তিনটি ভাগে বিভক্ত করে। সেসময় পরাজয় নিশ্চিত জেনে বিদ্রোহীরা অন্য দুটি পকেট থেকে উত্তর সিরিয়া হয়ে পালাতে সম্মত হয়। তবে যারা ডৌমার নিয়ন্ত্রণে ছিল সেই জয়েস আল ইসলাম তাদের আধিপত্য বজায় রাখার লড়াই চালিয়ে যায়। শুক্রবার সরকারের সাথে আলোচনা স্থগিত হলে বিমান হামলা পুনরায় শুরু হয়।

ভায়োলেশন্স ডকুমেন্টেশন সেন্টার-ভিডিসির কর্মীরা সিরিয়ায় আন্তর্জাতিক আইনের চরম লঙ্ঘন হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন এবং বলছেন, সিরীয় বিমানবাহিনীর চালানো দুটো আলাদা বোমা বর্ষণের ঘটনায় বিষাক্ত রাসায়নিক প্রয়োগ করা হয়েছে।

সিরিয়ার সিভিল ডিফেন্স -এর উদ্ধার-কর্মীদের বরাত দিয়ে এই সংস্থাটি জানান, বোমা হামলার পরপরই তারা বাতাসে ক্লোরিনের গন্ধ পান। তবে এর উৎস সম্পর্কে তারা নিশ্চিত হতে পারেননি।

তারা বলেছেন, “পরবর্তীতে আমরা লোকজনের মৃতদেহ উদ্ধার করি। বিষাক্ত গ্যাসে তাদের দমবন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ব্যারেল বোমার কবল থেকে বাঁচতে তারা বদ্ধ জায়গায় আশ্রয় নিয়েছিলেন এবং সেটাই হয়তো তাদের দ্রুত দমবন্ধ হয়ে মৃত্যুর কারণ হয়েছে, কেউ তাদের চিৎকার শুনতে পায়নি।”

এ ঘটনার পর হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ৫শ’র বেশি রোগীর মধ্যে বেশিরভাগ নারী এবং শিশু। সিরিয়ার সিভিল ডিফেন্স কর্মী এবং সিরিয়ান আমেরিকান মেডিকেল সোসাইটি যারা হাসপাতালগুলোতে সেবা দিচ্ছে তারা জানাচ্ছে, আহতদের মধ্যে রাসায়নিকে বিষক্রিয়ার উপসর্গ দেখা যাচ্ছে।

হাসপাতালে মারা গেছে এমন একজনের সম্পর্কে একজন মেডিকেল শিক্ষার্থী বলছিলেন, তার মুখে ফেনা ছিল। হৃদযন্ত্র খুব ধীর ছিল। এরপর তার মুখ দিয়ে রক্ত গড়াচ্ছিল।

বিদ্রোহী গ্রুপের পোস্ট করা ভিডিওতে দেখা যায় যেখানে তারা নারী, শিশু ও পুরুষদের মৃতদেহের কথা বলছে তাদের মুখ ও নাক দিয়ে ফেনা বেরোচ্ছে। ভিডিসি বলছে প্রথম হামলায় ২৫ জন এবং পরের হামলায় ২০ জন নিহত হয়েছে। সিরিয়ার সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ বলছে তারা ৪২ জনের মৃতদেহ দেখেছে । এর মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার সময় মারা গেছে ছয়জন।

আরও মৃতদেহ থাকতে পারে কিন্তু উদ্ধার-কর্মীদের সেসবের খোঁজে যেতে বাধা দেয়া হয়েছে কেননা তীব্র গন্ধের কারণে তাদের নিজেদেরও নি:শ্বাস নেয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিতে পারে। যুক্তরাজ্য ভিত্তিক সংগঠন সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস বলছে শুক্র ও শনিবারের বিমান হামলায় অন্তত ১০০ জন নিহত হয়েছে।

যদিও রাসায়নিক হামলার কথা বলা হচ্ছে বিভিন্ন তরফ থেকে কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভিডিও বা ছবি দেখে কোনও ব্যক্তি রাসায়নিক হামলার শিকার হয়েছে কি-না তা বলা সম্ভব নয়। নমুনা সংগ্রহের পর গবেষণাগারে পরীক্ষা ও বিশ্লেষণের পরই কেবল তা সম্ভব।

তবে সরকারি অবরোধের কারণে মার্চ মাসের শুরু থেকে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর পক্ষে ডৌমাতে প্রবেশ সম্ভব হচ্ছেনা।

সিরিয় সিভিল ডিফেন্স এবং সিরিয়ান আমেরিকান মেডিকেল সোসাইটি বলছে, দমবন্ধ হয়ে যারা মারা গেছে তারা কীটনাশক ও নার্ভ এজেন্ট গ্যাসের একধরনের মিশ্রণের কারণেই মৃত্যু হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, যারা আসাদের বিরোধীদের সমর্থন দিচ্ছে,তারা বলছে হতাহতদের উপসর্গ রাসায়নিকের উপস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

সিরিয়ার সরকার বারবার রাসায়নিক ব্যবহারের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে এবং তারা বরং অভিযোগ করছে যে, ডৌমার ওপর পুনরায় সরকারি নিয়ন্ত্রণ ঠেকানোর ব্যর্থ চেষ্টা হিসেবে বিদ্রোহীরা বানোয়াট খবর দিচ্ছে।

এদিকে ডৌমা থেকে যে খবর আসছে তাকে ভিত্তিহীন বলছে রাশিয়া। জাতিসংঘে দেশটির স্থায়ি প্রতিনিধি ভাসিলি নেবেনযিয়া বলেছেন “রুশ সামরিক বিশেষজ্ঞরা ডৌমা সফর করে এসেছেন এবং কোনধরনের রাসায়নিক হামলার প্রমাণ পাননি, কোনও মৃতদেহ দেখেননি এবং হাসপাতালে কোন বিষাক্ত রাসায়নিকের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের দেখা মেলেনি।”

এমনকি সেখানকার চিকিৎসকেরাও কোন রাসায়নিক হামলার শিকার হয়ে কারও হাসপাতালে আসার খবর অস্বীকার করেছেন বলেও জানান তিনি।

জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্টেরিও গুটেরেস বলেন, ডৌমা থেকে আসা খবরে তিনি ক্ষুব্ধ এবং সতর্ক করে বলেছেন, যেকোনো পরিস্থিতিতে কোন পক্ষের দ্বারা রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার নিশ্চিতভাবে ঘৃণ্য এবং আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন।

আর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সোমবার বলেন “সিরিয়ার নিষ্পাপ মানুষদের ওপর নিষিদ্ধ রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগ করার ঘটনা জঘন্য হামলা”।  ট্রাম্প মার্কিন সামরিক নেতৃস্থানীয়দের সাথে বৈঠক করে ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার ভেতর বড় কোন সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন বলেও হুশিয়ারি দেন।

ব্রিটেন ও ফ্রান্স বলছে, সিরিয়ার সরকারের বিরুদ্ধে এর আগেও রাসায়নিক ব্যবহারের যে অভিযোগ উঠেছে তাকে আরও জোরালো করেছে শনিবারের ঘটনা। এর আগে পূর্ব ও পশ্চিম ঘৌতা এলাকায় বিদ্রোহীদের এলাকায় সারিন গ্যাস হামলায় কয়েকশ মানুষের মৃত্যু হয়। তবে কারা সে হামলা চালায় তা নিশ্চিত করে বলা হয়নি।

পশ্চিমা শক্তি বলছে কেবল সিরিয় সরকারি বাহিনী এ ধরনের হামলা চালাতে পারে। প্রেসিডেন্ট আসাদ সে অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন। কিন্তু তিনি রাসায়নিক অস্ত্র কনভেনশনে সই করতে এবং সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্রাগার ধ্বংস করতে সম্মত হননি।

ইউএন-ওপিসিডব্লিউ মিশনের বিশেষজ্ঞরা মনে করেন ২০১৭ সালে সারিন হামলা চালানো হয়েছিল খান শেইখউনে যা অস্বীকার করেছে সিরিয়ার সরকার। বিশেষজ্ঞরা আরও জানিয়েছেন, গৃহযুদ্ধ চলাকালে কমপক্ষে তিনবার অস্ত্র হিসেবে ক্লোরিন গ্যাস ব্যবহার করেছে সরকারি বাহিনী।সূত্র: বিবিসি বাংলা

 

 

 

 

 

 

 

 

 

মামুন/সিএনআই নিউজ/৫০০৬

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

এই রকম আরো জনপ্রিয় সংবাদ
© All rights reserved © 2017 Cninews24.Com
Design & Development BY Hostitbd.Com