জিনাত আরা আহমেদ ( পিআইডি ফিচার ) :
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে খাদ্য নিরাপত্তা, পুষ্টি উন্নয়ন এবং অব্যাহত কৃষি অগ্রগতি অন্যতম। টেকসই কৃষি উন্নয়নে খাদ্য নিরাপত্তার সাথে নিরাপদ খাদ্যাভ্যাস প্রধান বিবেচ্য বিষয়, সাথে পুষ্টির উন্নয়নকেও বর্তমানে সুস্বাস্থ্যের সূচক হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী ক্রমবর্ধমান খাদ্য চাহিদা পূরণে কৃষিতে বিভিন্ন গবেষণালব্ধ প্রযুক্তি প্রয়োগ করে, তাৎক্ষণিক সুফল পাওয়ায় স্বাভাবিকভাবে কৃষকরা সেদিকে আগ্রহী হয়ে উঠেন। কিন্তু কোনো কোনো ক্ষেত্রে এসবের বিরূপ প্রতিক্রিয়া জনস্বাস্থ্য এবং পরিবেশের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে নিরাপদ খাদ্যের কোনো বিকল্প নেই। ক্রমবর্ধমান খাদ্য চাহিদা বিবেচনায় নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে কৃষি প্রযুক্তি নিয়ে ভাবতে হবে।
খাদ্য বলতে আমরা সাধারণত কোনো ব্যক্তির সামগ্রিক পুষ্টি চাহিদা মেটাতে সক্ষম, যে-কোনো ক্ষতিকর রাসায়নিকমুক্ত এবং একটি নির্দিষ্ট সাংস্কৃতিক চর্চার ভেতর গ্রহণযোগ্য খাবারকেই বুঝি। মানুষের অতি মৌলিক প্রয়োজনীয় চাহিদা হলো খাদ্য, যার একমাত্র উৎস কৃষি। অদম্য কৌতুহল আর জীবিকার তাগিদে মানুষ নিজের অজান্তেই কৃষি কাজের সূচনা করে। সভ্যতার ক্রমবিকাশের ফলে ক্রমান্বয়ে কৃষি ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ঘটেছে, বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তি আর উন্নত জাত উদ্ভাবনের প্রতিযোগিতা বেড়েছে। অল্প জায়গা আর সময়ের মধ্যে অধিক উৎপাদনের প্রক্রিয়া সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ফসল ও ফল উৎপাদনে ব্যবহৃত হচ্ছে নানা ধরনের কীটনাশক। উৎপাদিত ফসল সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে কার্বাইড, ফরমালিনের মতো নানা ধরনের ক্ষতিকর বিষাক্ত রাসায়নিক। বর্তমানে দেখা যায়, অধিক উৎপাদনের জন্য উচ্চ ফলনশীল ও হাইব্রিড জাত উদ্ভাবনের প্রচেষ্টা, পক্ষান্তরে দেশি জাত নিয়ে পর্যাপ্ত গবেষণার অভাবে দেশি বিভিন্ন ফসল হারিয়ে যাচ্ছে।
দেশি প্রজাতির বীজের বদলে হাইব্রিড বীজ ব্যবহারের কারণে কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের প্রয়োগ বাড়ছে। অধিক কীটনাশক ব্যবহারের পরিণতি হচ্ছে দুর্বল ও অপুষ্ট বীজ যা সহজেই কীটপতঙ্গের আক্রমণের শিকার হয়। পোকামাকড় এবং রোগবালাই থেকে ফসল রক্ষার জন্য যত্রতত্র কীটনাশক ব্যবহারের ফলে পোকার মধ্যে কীটনাশকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ শক্তি গড়ে ওঠে। তা ছাড়া অতিরিক্ত সার প্রয়োগে মাটি ধীরে ধীরে উর্বরতা হারিয়ে ফেলে। মাটির উর্বরতা বাড়াতে কেঁচো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মৌমাছি পরাগায়ণে সাহায্য করে। কিন্তু কীটনাশকের ব্যবহারে কেঁচো, মৌমাছির পাশাপাশি জোঁক, ব্যাঙসহ কৃষিবান্ধব অনেক প্রাণীই ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। কৃষি জমিতে ক্ষতিকর কীটনাশক ব্যবহারের বিরূপ প্রভাব ফসলের মাঠ পেরিয়ে এখন মানবদেহ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে, ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য।
মানবদেহের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার সাথে সাথে সৃষ্টি হচ্ছে লিভার, কিডনির জটিলতাসহ ক্যান্সার সৃষ্টিকারী নানা রোগ। অথচ টেকসই কৃষি ব্যবস্থা বলতে এমন পরিবেশবান্ধব কৃষি ব্যবস্থাপনাকে বুঝায় যা বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রাকৃতিক সম্পদ অক্ষুন্ন রেখে মানুষের উৎপাদন চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে। এতে মানবগোষ্ঠী ও প্রাণিসম্পদের নিরাপত্তা বিধানও সম্ভব হবে।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে কৃষি উন্নয়নকে টেকসই করার অন্যতম হাতিয়ার হতে যাচ্ছে জৈব কৃষিব্যবস্থা। খাদ্য নিরাপত্তার অন্যতম সমাধানও রয়েছে জৈব কৃষিতে। পরিবেশের কোনো ক্ষতি না করে জৈব কৃষি পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাদ্য উৎপাদন করতে সক্ষম। সাধারণত মৌমাছি, পাখি, প্রজাপতি এ খামারগুলোতে অবাধে বিচরণ করে থাকে। জৈব কৃষি এমন এক কৃষি ব্যবস্থা যেখানে ফসল আবর্তন ও সঠিক ব্যবস্থাপনায় জমি চাষাবাদের মাধ্যমে মাটি ও ফসলের উত্তম অবস্থা বজায় রেখে সুস্থ্য-সবল ও বিষমুক্ত উৎপাদন নিশ্চিত করা হয়। এতে রাসায়নিক সার ও বালাইনাশক ব্যবহার না করে কম্পোস্ট ও শস্যের অবশিষ্টাংশ ব্যবহার করা হয়। জৈব কৃষিতে কিছু বিশেষ গাছের পাতা, ডাল, মূল এবং বাকলের রস কীটনাশক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বনজঙ্গল ও বাড়ির আশপাশে এমন অনেক গাছপালা আছে, যেগুলো দিয়ে ভেষজ বালাইনাশক তৈরি করা যায়। যেমন- ধুতরা, ভেন্নার তেল, রেড়ি, নিম, নিশিন্দা, অড়হর, তুলসি পাতা, পাটের বীজ, মেহগনি ইত্যাদি বালাইনাশক হিসেবে অত্যন্ত কার্যকর।
জৈব কৃষির আওতায় মুরগির পচনকৃত বিষ্ঠা ও সরিষার খৈল ব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন সবজি ও ফসলের মাটিবাহিত রোগ দমন করা যায়। এতে এমন কিছু রাসায়নিক উপাদান আছে যা মাটিতে বসবাসরত বিভিন্ন রোগজীবাণু ও কৃমিকে মেরে ফেলে এবং মাটির উর্বরতা বাড়ায়। দেখা গেছে, বিভিন্ন প্রজাতির পাতাখেকো পোকা বাঁধাকপি ও ফুলকপির মতো ফসল নষ্ট করে ফেলে। এতে অনেক সময় কীটনাশক ব্যবহার করেও ফল হয় না। কিন্তু প্রথমাবস্থায় যদি আক্রান্ত পাতার পোকাগুলো হাত দিয়ে ২/৩ বার মেরে ফেলা হয় তাহলে আক্রমণ কম হয় এবং কীটনাশক ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে না। এছাড়া চুন, লবণ, গোমূত্র, গোবর ইত্যাদি বালাইনাশক হিসেবে কার্যকর।
নিরাপদ খাদ্যের সাথে সাথে পুষ্টিকর খাদ্যের বিষয়টিও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার হিসাবে পৃথিবীতে প্রায় তিন জনের একজন ভুগছে অদৃশ্য পুষ্টিহীনতায়। অর্থাৎ পৃথিবীতে প্রায় দুইশ কোটির বেশি মানুষ ভুগছে পুষ্টিহীনতায়। এর মাঝে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ভিটামিন এ, জিঙ্ক এবং আয়রনের ঘাটতি যা প্রতিনিয়ত বাড়াচ্ছে রক্তস্বল্পতা, অন্ধত্ব ও সংক্রামক রোগ, বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে মানুষের স্বাভাবিক বিকাশে। জৈব খামারে কীটনাশক ব্যবহার করা হয়না বললেই চলে। তাই জৈব উপাদানগুলো যথাযথ ভিটামিনে সমৃদ্ধ এবং সহজে হজমযোগ্য হয়। আশার কথা হলো, নিরাপদ খাদ্য, তথা বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনের বিষয়টি দ্রুত রূপ নিচ্ছে সামাজিক আন্দোলনে। নিরাপদ কৃষিজ পণ্য উৎপাদনে অনুপ্রাণিত করতে কৃষকদের আধুনিক প্রশিক্ষণের জন্য ঢাকার অদূরে ধামরাইয়ের স্থাপন করা হয়েছে জাপান বাংলাদেশের যৌথ অর্থায়নে অত্যাধুনিক কৃষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বা ফারমার্স ট্রেনিং সেন্টার। কৃষকদের আধুনিক প্রযুক্তি ও সহায়তা ছাড়াও সচেতন করা হচ্ছে জৈব সারের উপকারিতা এবং রাসায়নিক সারের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে। শেখানো হচ্ছে জৈব সার ও কেঁচো কম্পোস্টের উৎপাদন ও ব্যবহার বিধি।
২০৩০ সাল নাগাদ সকল নাগরিকের জন্য নিরাপদ খাদ্য ও পুুষ্টির সরবরাহ নিশ্চিত করতে প্রতিটি কৃষিভূমিকে জৈব কৃষির আওতায় আনা দরকার। খাদ্য সংরক্ষণসহ খাদ্য সরবরাহের প্রতিটি পর্যায়ে দরকার সচেতনতাসহ সুরক্ষা। সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে আমাদের কৃষিজমি, কারিগরি জ্ঞান ও মেধাশক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করেই সম্ভব নিরাপদ খাদ্যের সঠিক জোগান।
সানি / সিএনআই নিউজ / ৭৬৩৯
নিরাপদ খাদ্য জোগানে কৃষি ভাবনা
জিনাত আরা আহমেদ ( পিআইডি ফিচার ) :
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে খাদ্য নিরাপত্তা, পুষ্টি উন্নয়ন এবং অব্যাহত কৃষি অগ্রগতি অন্যতম। টেকসই কৃষি উন্নয়নে খাদ্য নিরাপত্তার সাথে নিরাপদ খাদ্যাভ্যাস প্রধান বিবেচ্য বিষয়, সাথে পুষ্টির উন্নয়নকেও বর্তমানে সুস্বাস্থ্যের সূচক হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী ক্রমবর্ধমান খাদ্য চাহিদা পূরণে কৃষিতে বিভিন্ন গবেষণালব্ধ প্রযুক্তি প্রয়োগ করে, তাৎক্ষণিক সুফল পাওয়ায় স্বাভাবিকভাবে কৃষকরা সেদিকে আগ্রহী হয়ে উঠেন। কিন্তু কোনো কোনো ক্ষেত্রে এসবের বিরূপ প্রতিক্রিয়া জনস্বাস্থ্য এবং পরিবেশের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে নিরাপদ খাদ্যের কোনো বিকল্প নেই। ক্রমবর্ধমান খাদ্য চাহিদা বিবেচনায় নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে কৃষি প্রযুক্তি নিয়ে ভাবতে হবে।
খাদ্য বলতে আমরা সাধারণত কোনো ব্যক্তির সামগ্রিক পুষ্টি চাহিদা মেটাতে সক্ষম, যে-কোনো ক্ষতিকর রাসায়নিকমুক্ত এবং একটি নির্দিষ্ট সাংস্কৃতিক চর্চার ভেতর গ্রহণযোগ্য খাবারকেই বুঝি। মানুষের অতি মৌলিক প্রয়োজনীয় চাহিদা হলো খাদ্য, যার একমাত্র উৎস কৃষি। অদম্য কৌতুহল আর জীবিকার তাগিদে মানুষ নিজের অজান্তেই কৃষি কাজের সূচনা করে। সভ্যতার ক্রমবিকাশের ফলে ক্রমান্বয়ে কৃষি ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ঘটেছে, বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তি আর উন্নত জাত উদ্ভাবনের প্রতিযোগিতা বেড়েছে। অল্প জায়গা আর সময়ের মধ্যে অধিক উৎপাদনের প্রক্রিয়া সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ফসল ও ফল উৎপাদনে ব্যবহৃত হচ্ছে নানা ধরনের কীটনাশক। উৎপাদিত ফসল সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে কার্বাইড, ফরমালিনের মতো নানা ধরনের ক্ষতিকর বিষাক্ত রাসায়নিক। বর্তমানে দেখা যায়, অধিক উৎপাদনের জন্য উচ্চ ফলনশীল ও হাইব্রিড জাত উদ্ভাবনের প্রচেষ্টা, পক্ষান্তরে দেশি জাত নিয়ে পর্যাপ্ত গবেষণার অভাবে দেশি বিভিন্ন ফসল হারিয়ে যাচ্ছে।
দেশি প্রজাতির বীজের বদলে হাইব্রিড বীজ ব্যবহারের কারণে কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের প্রয়োগ বাড়ছে। অধিক কীটনাশক ব্যবহারের পরিণতি হচ্ছে দুর্বল ও অপুষ্ট বীজ যা সহজেই কীটপতঙ্গের আক্রমণের শিকার হয়। পোকামাকড় এবং রোগবালাই থেকে ফসল রক্ষার জন্য যত্রতত্র কীটনাশক ব্যবহারের ফলে পোকার মধ্যে কীটনাশকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ শক্তি গড়ে ওঠে। তা ছাড়া অতিরিক্ত সার প্রয়োগে মাটি ধীরে ধীরে উর্বরতা হারিয়ে ফেলে। মাটির উর্বরতা বাড়াতে কেঁচো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মৌমাছি পরাগায়ণে সাহায্য করে। কিন্তু কীটনাশকের ব্যবহারে কেঁচো, মৌমাছির পাশাপাশি জোঁক, ব্যাঙসহ কৃষিবান্ধব অনেক প্রাণীই ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। কৃষি জমিতে ক্ষতিকর কীটনাশক ব্যবহারের বিরূপ প্রভাব ফসলের মাঠ পেরিয়ে এখন মানবদেহ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে, ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য।
মানবদেহের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার সাথে সাথে সৃষ্টি হচ্ছে লিভার, কিডনির জটিলতাসহ ক্যান্সার সৃষ্টিকারী নানা রোগ। অথচ টেকসই কৃষি ব্যবস্থা বলতে এমন পরিবেশবান্ধব কৃষি ব্যবস্থাপনাকে বুঝায় যা বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রাকৃতিক সম্পদ অক্ষুন্ন রেখে মানুষের উৎপাদন চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে। এতে মানবগোষ্ঠী ও প্রাণিসম্পদের নিরাপত্তা বিধানও সম্ভব হবে।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে কৃষি উন্নয়নকে টেকসই করার অন্যতম হাতিয়ার হতে যাচ্ছে জৈব কৃষিব্যবস্থা। খাদ্য নিরাপত্তার অন্যতম সমাধানও রয়েছে জৈব কৃষিতে। পরিবেশের কোনো ক্ষতি না করে জৈব কৃষি পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাদ্য উৎপাদন করতে সক্ষম। সাধারণত মৌমাছি, পাখি, প্রজাপতি এ খামারগুলোতে অবাধে বিচরণ করে থাকে। জৈব কৃষি এমন এক কৃষি ব্যবস্থা যেখানে ফসল আবর্তন ও সঠিক ব্যবস্থাপনায় জমি চাষাবাদের মাধ্যমে মাটি ও ফসলের উত্তম অবস্থা বজায় রেখে সুস্থ্য-সবল ও বিষমুক্ত উৎপাদন নিশ্চিত করা হয়। এতে রাসায়নিক সার ও বালাইনাশক ব্যবহার না করে কম্পোস্ট ও শস্যের অবশিষ্টাংশ ব্যবহার করা হয়। জৈব কৃষিতে কিছু বিশেষ গাছের পাতা, ডাল, মূল এবং বাকলের রস কীটনাশক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বনজঙ্গল ও বাড়ির আশপাশে এমন অনেক গাছপালা আছে, যেগুলো দিয়ে ভেষজ বালাইনাশক তৈরি করা যায়। যেমন- ধুতরা, ভেন্নার তেল, রেড়ি, নিম, নিশিন্দা, অড়হর, তুলসি পাতা, পাটের বীজ, মেহগনি ইত্যাদি বালাইনাশক হিসেবে অত্যন্ত কার্যকর।
জৈব কৃষির আওতায় মুরগির পচনকৃত বিষ্ঠা ও সরিষার খৈল ব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন সবজি ও ফসলের মাটিবাহিত রোগ দমন করা যায়। এতে এমন কিছু রাসায়নিক উপাদান আছে যা মাটিতে বসবাসরত বিভিন্ন রোগজীবাণু ও কৃমিকে মেরে ফেলে এবং মাটির উর্বরতা বাড়ায়। দেখা গেছে, বিভিন্ন প্রজাতির পাতাখেকো পোকা বাঁধাকপি ও ফুলকপির মতো ফসল নষ্ট করে ফেলে। এতে অনেক সময় কীটনাশক ব্যবহার করেও ফল হয় না। কিন্তু প্রথমাবস্থায় যদি আক্রান্ত পাতার পোকাগুলো হাত দিয়ে ২/৩ বার মেরে ফেলা হয় তাহলে আক্রমণ কম হয় এবং কীটনাশক ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে না। এছাড়া চুন, লবণ, গোমূত্র, গোবর ইত্যাদি বালাইনাশক হিসেবে কার্যকর।
নিরাপদ খাদ্যের সাথে সাথে পুষ্টিকর খাদ্যের বিষয়টিও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার হিসাবে পৃথিবীতে প্রায় তিন জনের একজন ভুগছে অদৃশ্য পুষ্টিহীনতায়। অর্থাৎ পৃথিবীতে প্রায় দুইশ কোটির বেশি মানুষ ভুগছে পুষ্টিহীনতায়। এর মাঝে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ভিটামিন এ, জিঙ্ক এবং আয়রনের ঘাটতি যা প্রতিনিয়ত বাড়াচ্ছে রক্তস্বল্পতা, অন্ধত্ব ও সংক্রামক রোগ, বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে মানুষের স্বাভাবিক বিকাশে। জৈব খামারে কীটনাশক ব্যবহার করা হয়না বললেই চলে। তাই জৈব উপাদানগুলো যথাযথ ভিটামিনে সমৃদ্ধ এবং সহজে হজমযোগ্য হয়। আশার কথা হলো, নিরাপদ খাদ্য, তথা বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনের বিষয়টি দ্রুত রূপ নিচ্ছে সামাজিক আন্দোলনে। নিরাপদ কৃষিজ পণ্য উৎপাদনে অনুপ্রাণিত করতে কৃষকদের আধুনিক প্রশিক্ষণের জন্য ঢাকার অদূরে ধামরাইয়ের স্থাপন করা হয়েছে জাপান বাংলাদেশের যৌথ অর্থায়নে অত্যাধুনিক কৃষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বা ফারমার্স ট্রেনিং সেন্টার। কৃষকদের আধুনিক প্রযুক্তি ও সহায়তা ছাড়াও সচেতন করা হচ্ছে জৈব সারের উপকারিতা এবং রাসায়নিক সারের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে। শেখানো হচ্ছে জৈব সার ও কেঁচো কম্পোস্টের উৎপাদন ও ব্যবহার বিধি।
২০৩০ সাল নাগাদ সকল নাগরিকের জন্য নিরাপদ খাদ্য ও পুুষ্টির সরবরাহ নিশ্চিত করতে প্রতিটি কৃষিভূমিকে জৈব কৃষির আওতায় আনা দরকার। খাদ্য সংরক্ষণসহ খাদ্য সরবরাহের প্রতিটি পর্যায়ে দরকার সচেতনতাসহ সুরক্ষা। সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে আমাদের কৃষিজমি, কারিগরি জ্ঞান ও মেধাশক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করেই সম্ভব নিরাপদ খাদ্যের সঠিক জোগান।
সানি / সিএনআই নিউজ / ৭৬৩৯