সাব্বির হোসেন :
মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলা শিক্ষা অফিসার সন্ধ্যা রানী সাহার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম, বদলী বাণিজ্য, ঘুষ ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে বদলী করলেও বহাল তবিয়তে আছেন সন্ধ্যা রানী। এদিকে সম্প্রতি তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্তণালয়ের সচিব আকরাম আল হোসাইন।
অভিযোগে প্রকাশ, দৌলতপুর উপজেলা শিক্ষা অফিসার সন্ধ্যা রানী সাহা বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র রান্না ঘর থেকে বিতরণ করেছেন। এতে করে প্রশ্ন ফাঁসের সাথে তিনি জড়িত বলে অনেকের মতামত। প্রশ্নপত্রের মূল্য ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে গ্রহণ করার নিয়ম থাকলেও তিনি তা হাতে নগদ গ্রহণ করে থাকেন। তিনি তার ইচ্ছেমত নিম্মমানের প্রশ্নপত্র নিজের লোক দিয়ে তৈরী করে তা দিয়ে পরীক্ষা নিয়ে থাকেন। সন্ধ্যা রানী প্রেস থেকে ওজন করে রেডিমেট প্রশ্ন ক্রয় করে পরীক্ষা নিয়েছেন বলেও অভিযোগ আছে।
এসব অনিয়ম ও দূর্নীতি প্রমাণিত হওয়ায় তাকে মেহেরপুরের গাংনীতে শাস্তিমূলক বদলী করা হয়। রহস্যজনক কারনে তিনি দৌলতপুরে বহাল তবিয়তে থেকে ২০১৮ সালের বার্ষিক পরীক্ষায় ঠিক একই রকমের অনিয়ম করেন। এছারাও উপজেলা শিক্ষা অফিসার, শিক্ষক, পিয়নসহ যে কোন স্টাফদের প্রয়োজনীয় কাগজ স্বাক্ষর করতে উৎকোচ গ্রহণ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
বঙ্গবন্ধু ও বেগম ফজিলাতুন্নেসা গোল্ডকাপ টুর্নামেন্টের নামে লক্ষ লক্ষ টাকা চাঁদা আদায় করে তা নিজ হাতে নামমাত্র খরচ করে বাকিটা আত্মসাৎ করেন বলে জানান ভুক্তভোগী শিক্ষকরা।
সন্ধ্যা রানী প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী সমাপনী পরীক্ষায় প্রভাবিত হয়ে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে হল সুপার, সহকারী হল সুপার ও পরীক্ষক নিয়োগ করেন। ইউপেপ এ্যাসিসটিভ ডিভাইস ক্রয় না করে ভূয়া বিল ভাউচার দিয়ে পঞ্চাশ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানের নামেও ভূয়া বিল ভাউচার দিয়ে টাকা আত্মসাৎ করার ঘটনাও রয়েছে। অন্যদিকে সরকার নির্ধারিত বিভিন্ন দিবসসহ গুরুত্বপূর্ণ সময়ে সন্ধ্যা রানী গড় হাজির থাকেন বলেও অভিযোগে প্রকাশ করা হয়েছে।
দৌলতপুরের ঘড়িয়ালা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা নুরজাহান অভিযোগ করেন, অন্য বিদ্যালয়ে বদলীর ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা অফিসার সন্ধ্যা রানী সাহা ত্রিশ হাজার টাকা দাবি করে পরে পনের হাজার টাকা নিয়েও তার কোন বদলী করেননি। চর গেবিন্দপুর রহিজ মোল্লার পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি তাইজুল মাষ্টার, যদুদূর্গাপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু বকর সিদ্দিক, রামচন্দ্রপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুষমা রানী শিকদারসহ অনেক শিক্ষক উপজেলা শিক্ষা অফিসার সন্ধ্যা রানী সাহার অনিয়ম ও দূর্নীতির বিরুদ্ধে পৃথক পৃথক অভিযোগ করেন।
প্রাথমিক ও গণ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আকরাম আল হোসাইন কর্তৃক স্বাক্ষরিত এক অভিযোগনামা সূত্রে প্রকাশ, অভিযুক্ত উপজেলা শিক্ষা অফিসার সন্ধ্যা রানী সাহাকে কেন চাকরী থেকে বরখাস্ত বা বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না সেই মর্মে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে।
দৌলতপুর উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো: মুজিবুর রহমান বলেন, উপজেলা শিক্ষা অফিসার সন্ধ্যা রানী সাহার অত্যাচারে আমরা অতিষ্ট। অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাঁর বদলী হয়ে গেলেও তিনি বহাল তবিয়তে থেকে অনিয়ম-দুর্নীতি অব্যাহত রাখায় সকলে হতাশাগ্রস্থ।
এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা অফিসার সন্ধ্যা রানী সাহা জানান, আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগের কথা শুনেছি। আমাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে। আমি লিখিত জবাব দিলে তা থেকে জেনে নেবেন আমার বক্তব্য।