শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:২০ পূর্বাহ্ন

২০১৯-২০ অর্থ বছরে শিল্প, ব্যবসা ও ভোক্তা বান্ধব বাজেট প্রণয়ন করা হবে: এনবিআর চেয়ারম্যান

রিপোর্টার নাম
  • আপডেট সময় : 9:02 pm, বৃহস্পতিবার, ৪ এপ্রিল, ২০১৯
????????????????????????????????????

বশির আলমামুন,চট্টগ্রাম: জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেছেন, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে শিল্প, ব্যবসা ও ভোক্তা বান্ধব বাজেট প্রণয়ন করা হবে, যার আকার হতে পারে প্রায় ৫ লাখ কোটি টাকার কাছাকাছি। বৃহস্পতিবার সকালে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদস্থ ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারস্থ বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে এনডিসি চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সদস্য ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সাথে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘এসএমই হিসেবে যাত্রা করে অনেক বৃহৎ শিল্পের জন্ম হয়েছে। উদ্যোক্তারা উন্নত বিশ্বের অনুকরণে মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানি করছেন। যার ফলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে। মানবসম্পদ আমাদের সবচেয়ে বড় সম্পদ। অবকাঠামোগত উন্নয়নের বহুমুখী প্রভাবে মানুষের ক্রয়ের ইচ্ছা বৃদ্ধি পাচ্ছে।’একটি সুষম বাজেট প্রণয়নের লক্ষ্যে ঘাটতি পাঁচ শতাংশের বেশি হবে না উল্লেখ করে অভ্যন্তরীণ সম্পদ হতে ৬৫ শতাংশ প্রয়োজন মেটানো হবে বলে জানান এনবিআর চেয়ারম্যান।
তিনি বলেন, ‘ব্যবসাকে আধুনিকায়ন করতে হবে এবং ট্যাক্সের আওতা বাড়াতে হবে। জাতীয় আয়ে শিল্পের অবদান ৩৩ শতাংশ হতে ২০২১ সালের মধ্যে ৩৫ শতাংশে উন্নীত করতে হবে। সরকার সংযোজন শিল্পের চেয়ে দেশীয় উৎপাদন শিল্পের ওপর অনেক বেশি গুরুত্বারোপ করছে।
এনবিআর চেয়ারম্যান সবার জন্য সুষম সুবিধা নিশ্চিত করার কথা জানিয়ে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের মাধ্যমে ভ্যাটের হার হ্রাস পেলেও সবার সহযোগিতায় সংগ্রহ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
সভায় স্বাগত বক্তব্যে চিটাগাং চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম করমুক্ত আয় সীমা বৃদ্ধি, লিমিটেড কোম্পানির ক্ষেত্রে করহার এবং সারচার্জ কমানোর প্রস্তাব করেন। তিনি বলেন, ব্যবসায় উদ্যোগ লাভজনক বা টেকসই করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট নীতিমালা দীর্ঘ মেয়াদী অর্থাৎ কমপক্ষে ১০ বছরের জন্য প্রণয়ন করা উচিত। যে সমস্ত শিল্প আমদানীকারক নিয়মনীতি মেনে ব্যবসা সম্পাদন করে অর্থাৎ কমপ্লাইয়েন্ট সে সমস্ত প্রতিষ্ঠান যাতে দ্রুত ও হয়রানিমুক্ত আমদানি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারে সেই লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক অথরাইজড ইকনোমিক অপারেটর মর্যাদা প্রদান, বন্দরের প্রত্যেকটি গেটে স্ক্যানার মেশিন স্থাপন, সরাসরি ভোগের জন্য ব্যবহৃত আমদানি পণ্যের ক্ষেত্রে বিএসটিআই সার্টিফিকেশন বাধ্যতামূলক করা, ইস্পাত ও সিমেন্ট খাতে প্রচ্ছন্ন রপ্তানি সুবিধা পুনর্বহাল করা, অচামড়াজাত ও সিনথেটিক স্যু সেক্টরকে কর অবকাশ সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে বিশেষ এসআরও প্রণয়ন, ব্যবসা-বাণিজ্যের সূচকে বাংলাদেশের অবস্থানের উন্নয়ন এবং ব্যবসা সহজীকরণ, চট্টগ্রাম হতে আমদানির জন্য আইপি ইস্যু পুনর্বহাল, প্লান্ট কোয়ারেন্টাইন বাতিল করা, বৃহত্তর চট্টগ্রামে বাস্তবায়নাধীন মেগা প্রকল্পসমূহ দ্রুত বাস্তবায়নসহ প্রধামন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক সব ব্যাংকের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে হ্রাস করার দাবি জানান তিনি।
সভায় অন্যান্য বক্তারা তাদের দাবি উত্থাপন করেন, দাবিগুলো হলো- নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অগ্রিম আয়কর সমন্বয়করণ, কারিগরি শিক্ষাকে কর মুক্ত করা, আরএমজি খাতে নতুন নতুন মার্কেটে রপ্তানিতে প্রণোদনা প্রদান, আমদানিকৃত সেম্পল জরুরি ভিত্তিতে ডেলিভারি প্রদান, বন্ডের আওতায় সব ইন্সপ্যাকশন অটোমেটেড করা, কাঁচামাল দুই দিনের মধ্যে ছাড় করা, এলপিজি খাতে সিলিন্ডার উৎপাদনের জন্য রোল কয়েল আমদানির ক্ষেত্রে সময়সীমা নির্ধারণ, রাজস্ব সংক্রান্ত পুরনো আইন আধুনিকায়ন, সাধারণ মানুষের মধ্যে করভীতি দূরীকরণ, আয়করের ক্ষেত্রে ইউনির্ভাসেল এসেসমেন্ট পদ্ধতি উন্মুক্ত করে দেয়া এবং ১৫ শতাংশ কর বৃদ্ধি করলে অডিট না করা, ভ্যাট আদায়ের ক্ষেত্রে মার্কেট ও এরিয়াভিত্তিক ৩ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি কার্যকর করা, ছোট ছোট আবাসিক হোটেলের ক্ষেত্রে ভ্যাট হার হ্রাস করা, চট্টগ্রামকে পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে বাস্তবায়নে বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ, অর্থ বছরের মাঝামাঝি কোনো ধরনের নীতিমালা পরিবর্তন না করা, গণপরিবহন আমদানিতে কর হার হ্রাস করে ব্যক্তিগত পরিবহন আমদানিতে কর হার বৃদ্ধি করা, তামাকজাত পণ্য ও পরিবেশ দূষণকারী ইট ভাটার ক্ষেত্রে অধিক করারোপ করা, পোশাক শিল্প খাতে দেশে উৎপাদিত সংযোগ শিল্পের সুরক্ষায় বিদেশ থেকে আমদানি নিরুৎসাহিত করা, পণ্য পরিবহন ব্যবসার টেড লাইসেন্স ফি কমানো, পরিবহনের ট্যাক্স টোকেন, রোড পারমিট ও কর হার কমানো, আবাসিক খাতে ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশন ও হস্তান্তরের ক্ষেত্রে ফি কমানো এবং সরবরাহকারীদের সোর্স ট্যাক্স হ্রাস করা, কর্পোরেট ট্যাক্স কমানো ইত্যাদি।
চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলমের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন- চেম্বার সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. নুরুন নেওয়াজ সেলিম, সহ-সভাপতি সৈয়দ জামাল আহমেদ, পরিচালক অঞ্জন শেখর দাশ, প্রাক্তন পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ, বিএসআরএমর চেয়ারম্যান আলী হুসেইন আকবর আলী, ইস্ট ডেল্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর সিকান্দর খান, চট্টগ্রাম ট্যাক্সেস বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. জামাল উদ্দিন, রাউজান উপজেলা চেয়ারম্যান এহসানুল হায়দার চৌধুরী (বাবুল), চট্টগ্রাম জেলা দোকান মালিক সমিতির মহানগর সভাপতি সালামত আলী, শিপ ব্রেকিং অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন পরিচালক মাস্টার আবুল কাশেম, বিজিএপিএমইএর পরিচালক কে এইচ লতিফুর রহমান (আজিম), আইসিএমএ র চট্টগ্রাম সভাপতি মো. মোয়াজ্জেম হোসেন, আইসিএবি র কাউন্সিলর সিদ্ধার্থ বড়ুয়া, রিহ্যাবের পরিচালক মাহবুব সোবহান জালাল তানভীর, চট্টগ্রাম বন্দর ট্রাক মালিক ও কন্ট্রাক্টর অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জহুর আহাম্মদ, আন্তঃজেলা মালামাল পরিবহন সংস্থা ট্রাক ও কভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী জাফর আহমেদ, মটর পার্টস অ্যান্ড টায়ার টিউব মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ ওমর ফারুক, চিটাগাং কাগজ ও সেলোফিন ব্যবসায়ী গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মো. বেলাল ও ফলমন্ডির সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর।
এতে আরও উপস্থিত ছিলেন- রাজস্ব বোর্ডেও সদস্য মো. ফিরোজ শাহ আলম, কানন কুমার রায়, মো. মেফতাহ্ উদ্দিন খান, মো. রেজাউল হাসান ও সৈয়দ গোলাম কিবরীয়া, চট্টগ্রামের কর অঞ্চলের কমিশনার জি এম আবুল কালাম কায়কোবাদ, মো. মাহবুবুর রহমান, ব্যারিস্টার মুতাসিম বিল্লাহ ফারুকী, মো. হেলাল উদ্দিন সিকদার, চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার কাজী মোস্তাফিজুর রহমান, চট্টগ্রাম কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনার মোহাম্মদ এনামুল হক, বন্ড কমিশনার মো. আজিজুর রহমান, মহাপরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম, চেম্বার পরিচালকবৃন্দ এ কে এম আক্তার হোসেন, মো. আবদুল মান্নান সোহেলসহ প্রাক্তন পরিচালক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও অন্যান্য সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ী নেতারা।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

এই রকম আরো জনপ্রিয় সংবাদ
© All rights reserved © 2017 Cninews24.Com
Design & Development BY Hostitbd.Com